ছেলেকে বেঁধে রেখে কষ্ট পাচ্ছেন তাঁরাও

বাড়িতে বন্দী মিজানুর রহমান। প্রথম আলো
বাড়িতে বন্দী মিজানুর রহমান।  প্রথম আলো

একমাত্র ছেলে। খারাপ মানুষের পাল্লায় পড়ে মাদক ধরেছেন। মাদক থেকে ফেরাতে ঢাকায় চাকরি করতে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু সেখানেও মাদক পিছু ছাড়েনি। আবার বাড়িতে ফিরিয়ে আনা হয়। কিন্তু ভালো হওয়ার বদলে ছেলে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। মাদকের টাকার জন্য মাকে পর্যন্ত কুপিয়েছেন। কোনো উপায় না দেখে ছেলেকে পুলিশে দেওয়া হয়। ছয় মাস পর কারামুক্ত। কিন্তু বাড়িতে ফিরে মাদকের টাকার জন্য আবার অত্যাচার শুরু করেন। শেষ পর্যন্ত একমাত্র ছেলেকে শিকলবন্দী করেই ঘরে আটকে রেখেছেন মা-বাবা।

এ ঘটনা ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার মুশুলি ইউনিয়নের কাওয়ারগাতী গ্রামের। মাদকাসক্ত তরুণের নাম মিজানুর রহমান (২২)। তিনি সবজি ব্যবসায়ী মো. নুরু মিয়ার ছেলে। নুরু মিয়া ভ্যানে করে সবজি বিক্রি করেন।

নুরু মিয়া বলেন, চোখের সামনে সন্তানের বন্দিজীবন দেখে ভীষণ কষ্ট হয়। কিন্তু বাধ্য হয়েই তাঁরা এ পথ বেছে নিয়েছেন। মাদক একজন মানুষের জীবনকে কীভাবে ধ্বংস করে দিতে পারে তাঁর ছেলে তার জলজ্যান্ত উদাহরণ। তিনি বলেন, ‘আমার আর্থিক সংগতি থাকলে ভালো হাসপাতালে ছেলের চিকিৎসা করাতাম। সে ভালো হলে হয়তো ওর জীবনটাই পাল্টে যেত।’

গত শুক্রবার নুরু মিয়ার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, টিনের ঘরের একটি কক্ষের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছেন মিজানুর। উদাম শরীর। মাথায় উষ্কখুষ্ক চুল। মুখভর্তি দাঁড়ি। এ প্রতিবেদককে দেখেই মিজানুর বলেন, ‘আমার শিকলের তালাডা খুইল্যা দিবাইন।’

নুরু মিয়া (৬৫) জানান, মিজানুর তাঁর একমাত্র ছেলে। খারাপ মানুষের পাল্লায় পড়ে তিনি মাদকাসক্ত হয়েছেন। খারাপ পথ থেকে ফেরানোর জন্য ছেলেকে ঢাকার পোশাক কারখানায় চাকরি করতে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু চাকরি করার বদলে সেখানেও মাদক সেবনে লিপ্ত হন মিজান। আবার তাঁকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনা হয়। বাড়িতে এসে পরিবারের প্রতি আরও ক্ষিপ্ত হয়ে পড়েন। মাদকের টাকার জন্য মাকে পর্যন্ত কুপিয়েছেন মিজান। কোনো উপায় না দেখে ছেলেকে পুলিশে দিয়েছিলেন। ছয় মাস ময়মনসিংহ কারাগারে কাটানোর পর ছেড়ে দেওয়া হয়। বাড়িতে ফিরে এসে আবার মাদকের টাকার জন্য অত্যাচার শুরু করেন। শেষ পর্যন্ত কোনো উপায় না দেখে মিজানুরকে শিকলবন্দী করে বসতঘরের একটি কক্ষে আটকে রাখা হয়েছে। সময় হলে সেখানেই ভাত ও গোসলের জন্য পানি পাঠানো হয়।

কয়েকজন প্রতিবেশী বলেন, একটা সুস্থ–সবল ছেলের জীবন ধ্বংস করে দিয়েছে মাদক। উন্নত চিকিৎসা পেলে ছেলেটি যেমন স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাবেন, তেমনি পরিবারটিও বেঁচে যাবে।

যোগাযোগ করলে নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাসাদ্দেক মেহ্দী ইমাম বলেন, সমাজসেবা অধিদপ্তরের রোগী কল্যাণ তহবিল রয়েছে। পরিবার চাইলে মাদকাসক্ত তরুণটির চিকিৎসার ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।