মাথার ওপর গনগনে সূর্য। সূর্যের গরমে উত্তপ্ত রাজপথের পিচ থেকে উঠে আসছে উত্তাপ। গ্রীষ্মের তপ্ত দুপুরে হাঁসফাঁস ইট-কাঠের এই নগরের মানুষ। এমন দমবন্ধ পরিবেশে মোহাম্মদপুরের শহীদ সলিমুল্লাহ রোড এলাকার বাসিন্দাদের মাথার ওপর ছায়া হয়ে আছে কিছু গাছ। কিন্তু হঠাৎ আশঙ্কার ছায়া সেখানকার বাসিন্দাদের মনে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) নেওয়া একটি প্রকল্পের কারণে গাছগুলো কেটে ফেলা হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তাঁরা।
গাছগুলো সলিমুল্লাহ রোডের শহীদ সলিমুল্লাহ ক্রীড়া চক্র সমাজকল্যাণ সংগঠনের মাঠের চারপাশে। মাঠটি এলাকায় পানির ট্যাংকের মাঠ বলেও পরিচিত। মাঠের চারপাশে ৩০টির বেশি রেইনট্রি, কদম, আম, জাম আর কৃষ্ণচূড়াগাছ। বেশির ভাগ গাছই এলাকার বাসিন্দারা লাগিয়েছেন। পরিচর্যা করে বড় করে তুলেছেন। গাছগুলো হয়ে উঠেছে অনেক পাখির আশ্রয়স্থল।
এলাকার লোকজন বলেন, সম্প্রতি মাঠের উন্নয়নে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) নেওয়া একটি প্রকল্পের জন্য ওই গাছগুলো কেটে ফেলার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
গতকাল বুধবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, প্রখর রোদের মধ্যেও বড় গাছগুলোর কারণে মাঠের পূর্ব-পশ্চিম ও দক্ষিণ পাশের তিনটি সড়ক তুলনামূলকভাবে শীতল। গাছের ছায়ার অনেক পথচারী ও রিকশাচালক খানিকটা জিরিয়ে নিচ্ছেন। এদিকে মাঠের বাইরের অংশে পশ্চিম ও দক্ষিণ পাশে খোঁড়াখুঁড়ির কাজ চলছে। খোঁড়াখুঁড়ির কারণে অনেক গাছের শিকড় কাটা পড়েছে। দুটি গাছের গায়ে সাঁটানো একটি নোটিশে চোখ আটকে গেল। সেখানে লেখা প্রকল্পের নাম ‘ইমপ্রুভমেন্ট অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স ওয়ার্ক অব প্লে-গ্রাউন্ড অ্যাডজাসেন্ট টু মোহাম্মদপুর সলিমুল্লাহ রোড অ্যাট ওয়ার্ড নম্বর ৩১’। প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা ডিএনসিসির পরিবেশ জলবায়ু ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সার্কেল।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এলাকার বাসিন্দা ও শহীদ সলিমুল্লাহ ক্রীড়া চক্র সমাজকল্যাণ সংগঠনের সভাপতি মো. মনিরুজ্জামান বলেন, মাসখানেক আগে ডিএনসিসির একটি দল মাঠ পরিদর্শন করে। পরিদর্শনকালে দলের পক্ষ থেকে বলা হয়, মাঠের ভেতরে ছয় ফুট প্রশস্ত ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হবে। এর সঙ্গে বাইরের ফুটপাত সংস্কার ও সম্প্রসারণের জন্য গাছগুলো কেটে আবার নতুন গাছ লাগানো হবে।
মনিরুজ্জামান বলেন, ‘মাঠের উন্নয়ন হোক, এটা আমরা অবশ্যই চাই। কিন্তু সেটা অবশ্যই গাছগুলো রক্ষা করে। নতুন একটা গাছ বড় হতে অনেক সময় নেয়। এই গাছগুলোর জন্যই মাঠসংলগ্ন রাস্তাগুলো প্রচণ্ড রোদেও শীতল থাকে। গোটা মোহাম্মদপুরে এ রকম রাস্তা খুব একটা চোখে পড়বে না।’
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য ডিএনসিসির পরিবেশ সার্কেলের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফরহাদের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। পরে খুদে বার্তা পাঠিয়ে আবার যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন কেটে দেন।
তবে ডিএনসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. মঞ্জুর-ই-মওলা প্রথম আলোকে বলেন, ‘গাছগুলো বাঁচিয়েই মাঠের উন্নয়নকাজ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ জন্য একটা গাছও কাটা হবে না।’