১৯৮০-৮১ মেয়াদে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (রাকসু) সহসভাপতি (ভিপি) ছিলেন ফজলে হোসেন বাদশা। তখন তিনি ছাত্রমৈত্রীর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সামরিক শাসনের সময় দীর্ঘদিনের আন্দোলনের পর অনুষ্ঠিত হয় রাকসু নির্বাচন। ছাত্র প্রতিনিধিদের নেতৃত্বে ক্যাম্পাসের পরিবেশ ছিল বেশ গণতান্ত্রিক। ফজলে হোসেন বাদশা এখন রাজশাহী সদর আসনের সাংসদ ও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আবারও গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফেরাতে রাকসু নির্বাচন জরুরি বলে মনে করেন তিনি। ভারতে অবস্থানরত ফজলে হোসেন বাদশা হোয়াটসঅ্যাপে গত মঙ্গলবার কথা বলেছেন প্রথম আলোর সঙ্গে।
প্রথম আলো: সব ধরনের নির্বাচনই হচ্ছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হচ্ছে না কেন?
ফজলে হোসেন বাদশা: শিক্ষাঙ্গনে ছাত্ররাজনীতির মাধ্যমে নেতৃত্ব বিকশিত হোক—এ ধরনের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কিংবা সরকারের মধ্যে নেই। আমরা যখন নির্বাচন করেছিলাম, তখন আমাদের চাওয়া ছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং তার বাস্তবায়ন। আমরা সেগুলোর জন্য আন্দোলন করেছিলাম। একটাই দাবি ছিল, রাকসু নির্বাচন দিতে হবে। কারণ, এই নির্বাচনের মাধ্যমেই মূলত ছাত্রদের অধিকার আদায় করা সম্ভব। তখন এর জন্য বহুবার কারাগারে যেতে হয়েছে। তখনকার বিশ্ববিদ্যালয়ের শাসকেরা ক্ষমতা প্রয়োগ করেছিলেন। কিন্তু আমরা অধিকার আদায় করেই ছেড়েছিলাম এবং আমাদের আদর্শকে প্রতিষ্ঠিত করতে সচেষ্ট ছিলাম। সেই সংগ্রাম এখনো চলছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও সরকারের সদিচ্ছার অভাবেই নির্বাচন থেমে আছে।
প্রথম আলো: বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সব সময়ই ছাত্রদের ও ছাত্রসংগঠনগুলোকে বলে আসছে পরিবেশ তৈরি হলেই নির্বাচন দেওয়া হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নির্বাচন দিতে কেমন পরিবেশ প্রয়োজন?
ফজলে হোসেন বাদশা: বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরের পরিস্থিতি প্রশাসনই ভালো বলতে পারবে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি নির্বাচনের পরিবেশ না থাকে, সেই পরিবেশ প্রশাসনকেই তৈরি করতে হবে। এ জন্য একটি কমিটি করে দিয়ে ছাত্র ও ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে। এর মধ্যে দিয়ে কর্তৃপক্ষের প্রতি আস্থার সংকট দূর হবে। রাকসু বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বোঝাতে হবে। এভাবে পরিবেশ সৃষ্টি করার পর নির্বাচন দেওয়ার মাধ্যমে ছাত্র সংসদ গড়ে তুলতে হবে। এ ক্ষেত্রে উপাচার্যসহ যাঁরা দায়িত্বে আছেন, তাঁদের ছাত্রদের সঠিক পথে পরিচালিত করার জন্য ইতিবাচক ভূমিকা রাখা উচিত। তবে বিশ্ববিদ্যালয় যদি ’৭৩–এর অধ্যাদেশে চলত, তবে ছাত্রসমাজের মধ্যেও আদর্শভিত্তিক রাজনীতির চেতনার বিকাশ ঘটত।
প্রথম আলো: রাকসুর তহবিলে শিক্ষার্থীরা নিয়মিত বাৎসরিক ফি দিয়ে আসছেন। অনেক টাকা ব্যাংকে অলস পড়ে আছে। আপনাদের সময় এই টাকায় কী কী হতো?
ফজলে হোসেন বাদশা: আমাদের সময় এই টাকা বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান-নাটক, ক্রীড়া অনুষ্ঠান, দিবস পালন, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, ম্যাগাজিন প্রকাশ করাসহ নানা কাজে ব্যয় হতো। এসব আয়োজনের মধ্যে দিয়ে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা মুখরিত থাকত।
প্রথম আলো: সম্প্রতি রাকসুর ১৩ লাখ টাকা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি ক্রীড়া প্রতিযোগিতা করেছে প্রশাসন। এটা নিয়ে ছাত্রনেতারা প্রশ্ন তুলছেন।
ফজলে হোসেন বাদশা: বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে কেন ছাত্র সংসদের টাকা তুলে ক্রীড়া অনুষ্ঠান করতে হবে? নির্বাচন হলে ছাত্র সংসদের একজন ক্রীড়া সম্পাদক থাকবেন। অন্য পদের নেতারা থাকবেন। তাঁরাই ক্রীড়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। সেটা হয় খুবই প্রাণবন্ত। ছাত্রদের অনুষ্ঠান যখন ছাত্ররাই আয়োজন করেন, তখন এর মধ্যে কোনো আমলাতান্ত্রিকতা থাকে না। ছাত্র সংসদের টাকা দিয়ে কর্তৃপক্ষ অনুষ্ঠান করবে, এটা কাম্য নয়।
প্রথম আলো: রাকসু নির্বাচন হলেই কি ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরবে?
ফজলে হোসেন বাদশা: আমি আশির দশকের নির্বাচনে ভিপি হয়েছিলাম ছাত্রমৈত্রী থেকে। তখন ওই কার্যনির্বাহী কমিটিতে অন্য সংগঠনের রাজনীতি করা নেতারাও ছিলেন। আমরা একসঙ্গে কাজ করতাম। সভায় মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিয়ে রাকসুর সব কার্যক্রম পরিচালনা করা হতো। রাকসুর নির্বাচনের মাধ্যমেই ছাত্রদের মধ্যে নেতৃত্ব তুলে দিলে ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি হবে। তখন ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে থাকা ছাত্রসংগঠনগুলো একচ্ছত্রভাবে ক্যাম্পাসে রাজত্ব করতে পারবে না। সবকিছুতে একটা ভারসাম্য আসবে।
প্রথম আলো: মূল্যবান সময় দিয়ে কথা বলার জন্য ধন্যবাদ।
ফজলে হোসেন বাদশা: প্রথম আলোকেও ধন্যবাদ।