ছাত্রলীগ নেতার হুমকির পর প্রাধ্যক্ষ ও চার আবাসিক শিক্ষকের পদত্যাগ

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস
ছবি: সংগৃহীত

ময়মনসিংহের ত্রিশালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল হাসান একটি হলের বিজয় দিবসের বিশেষ খাবারের আয়োজনের সব টাকা ওই হলের প্রাধ্যক্ষকে তাঁর হাতে তুলে দিতে বলেছিলেন। কিন্তু ওই টাকা না দেওয়ায় ওই ছাত্রলীগ নেতা প্রাধ্যক্ষসহ পাঁচ শিক্ষককে হুমকি দেন এবং তাঁদের অপমান করেন। এ ঘটনায় প্রাধ্যক্ষসহ ওই পাঁচ শিক্ষক গতকাল বুধবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল হাসান উত্তেজিত হয়ে মঙ্গলবার বিকেলে সমুদয় টাকা তাঁর হাতে তুলে দেওয়ার জন্য দোলনচাঁপা ছাত্রী হলের প্রাধ্যক্ষ সিরাজুম মুনিরাকে হুমকি–ধমকি দিতে থাকেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিজয়ের সূবর্ণজয়ন্তী উদ্‌যাপন উপলক্ষে ছাত্রীদের জন্য উন্নত মানের খাবার পরিবেশনের উদ্যোগ নেয় ময়মনসিংহের ত্রিশালে অবস্থিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দোলনচাঁপা ছাত্রী হল কর্তৃপক্ষ। খাবারের জন্য পোলাওয়ের চাল ও খাসি কেনা হয়। খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল হাসান উত্তেজিত হয়ে মঙ্গলবার বিকেলে সমুদয় টাকা তাঁর হাতে তুলে দেওয়ার জন্য দোলনচাঁপা ছাত্রী হলের প্রাধ্যক্ষ সিরাজুম মুনিরাকে হুমকি–ধমকি দিতে থাকেন। এ ঘটনায় সিরাজুম মুনিরা এবং ওই হলের আবাসিক শিক্ষক আরিফ আহমেদ, আফরুজা ইসলাম লিপি, রাশেদুর রহমান ও ফারজানা খানম পদত্যাগ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার হুমায়ুন কবীর ওই পাঁচজনের পদত্যাগপত্র পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

প্রাধ্যক্ষসহ পাঁচ শিক্ষককে হুমকি দেওয়ার এবং তাঁদের বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান আয়োজনের সব টাকা চাওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল হাসান বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের অনুরোধে আমরা দুটি হলের খাবারের আয়োজন একসঙ্গে করতে চেয়েছিলাম। আর এই আলাপটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা ও প্রক্টর স্যারের সামনেই হয়েছে। বরং দোলনচাঁপা ছাত্রী হল প্রভোস্ট ছাত্রী প্রতিনিধিদের না জানিয়ে একতরফাভাবে খাবারের আয়োজন করেছে। এতে হলের ছাত্রীরা ক্ষুব্ধ হয়ে পড়ে।’

তবে এ বিষয়ে দোলনচাঁপা ছাত্রী হলের প্রাধ্যক্ষ সিরাজুম মুনিরা বলেন, ‘একজন শিক্ষক ও প্রভোস্টের সঙ্গে কীভাবে কথা বলতে হয়, সেটা ভুলে গিয়ে আমাকে হুমকি দিয়ে ছাত্রদের হলে যেতে বলা হয়েছিল। কিন্তু আমি সেখানে যাইনি। পরে ছাত্র উপদেষ্টা তপন কুমার সরকার ও প্রক্টর উজ্জ্বল কুমার প্রধান আমাদের কাছে এলে আমরা ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে কথা বলি। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল দোলনচাঁপা হলের খাবারের জন্য বরাদ্দ দেওয়া পুরো টাকা তার হাতে তুলে দিতে বলেন। এ সময় রাকিবুলসহ ছাত্রলীগের অন্য নেতারা নানা হুমকি দিতে থাকে এবং অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করতে থাকে।’

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর উজ্জ্বল কুমার প্রধানের মুঠোফোনে গতকাল রাতে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। পরে এ বিষয়ে কথা বলার জন্য ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা তপন কুমার সরকারের মুঠোফোনে ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আবাসিক শিক্ষক বলেন, ‘আমরা খাবারের জন্য ৬১ হাজার টাকা ও অন্যান্য উপহারসামগ্রী ছাত্রী হলের জন্য জোগাড় করি। আমরা খাসি, পোলাওয়ের চালসহ সবকিছু কিনে ফেলেছি। ছাত্রীদের খাবারের টোকেনও দেওয়া হয়েছে। বিজয়ের সূবর্ণজয়ন্তী উদ্‌যাপন উপলক্ষে ছাত্রীদের উপহার দেওয়ার জন্য ঢাকা থেকে নানা উপহারসামগ্রীও কেনা হয়েছে। এতে ছাত্রলীগ নেতারা আরও বেশি উত্তেজিত হয়ে খাসি ও অন্যান্য সামগ্রী বিক্রি করে তাদের হাতে পুরো টাকা তুলে দিতে বলে। তারা জোর করে ছেলেদের হলের সঙ্গে একসাথে অনুষ্ঠান আয়োজনের দাবি জানায়। এমনকি যারা ছাত্রলীগ করবে না, তারা হলে থাকতে পারবে না বলেও হুমকি দেওয়া হয়।’