জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

ছাত্রলীগ নেতার বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে ভুল তথ্য, ভিডিও ভাইরাল

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান
ছবি: সংগৃহীত

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিবাহের সাল, তাঁর মাতা–পিতার নামের উচ্চারণ, ভাইবোনের সংখ্যা নিয়ে বেশ কিছু ভুল তথ্য দিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান। তাঁর এ বক্তব্যের ভিডিওর কিছু অংশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

জাতির জনকের জন্মদিন উপলক্ষে গত বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সামনে আয়োজিত সমাবেশে এ বক্তব্য দেন হাবিবুর রহমান। এর আগে ওই দিন সকালে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা।

হাবিবুর রহমান তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন লুৎফর রহমান এবং সাহারা খাতুনের চার ছেলে ও তিন মেয়ের মধ্যে তৃতীয়। তিনি ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। তিনি সাত বছর বয়সে শিক্ষাজীবন শুরু করেন। ১৪ বছর বয়সে বেরিবেরি রোগে আক্রান্ত হন। ফলে তাঁর শিক্ষাজীবন চার বছর পিছিয়ে পড়ে। শিক্ষাজীবন পিছিয়ে যাওয়ার পরও তিনি দমে যাননি।’

এরপর বঙ্গবন্ধুর বিয়ে নিয়ে তিনি বলেন, ‘১৯২৮ সালে, সরি ১৯২৪ সালে, না ১৯১৮ সালে জনাব...জনাবা...১৯১৮ সালে ফজিলাতুন্নেছা মুজিবকে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ করেন।’ এ সময় পাশ থেকে কয়েকজন ১৯৩৮ সাল বলে শিখিয়ে দেন। এরপরও হাবিবুর বলেন, ‘১৯১৮ সালে...২০১৮ সালে... ১৯১৮ সালে তিনি বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছাকে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়... এবং তিনি তাঁর শিক্ষাজীবন ক্রমাগত চালিয়ে যান...।’

মুজিব শতবর্ষ ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা শেখ লুৎফর রহমান, মা শেখ সায়েরা খাতুন। তাঁদের চার কন্যা ও দুই পুত্রসন্তানের মধ্যে শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন তৃতীয়। ১৮ বছর বয়সে (১৯৩৮ সালে) তিনি শেখ ফজিলাতুন্নেছাকে (রেনু) বিয়ে করেন।

হাবিবুরের এমন বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর সংগঠনের নেতা–কর্মীসহ অনেকেই সমালোচনা করছেন। সমালোচকেরা বলছেন, অযোগ্য লোককে দায়িত্ব দেওয়ায় এমন হচ্ছে।

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের সহসভাপতি ইয়াজ আল রিয়াদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিষয়ে দেশের প্রত্যেক নাগরিকের ধারণা রয়েছে। বাঙালি জাতির পিতা হিসেবে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানেন না, এমন কাউকে এ দেশে খুঁজে পাওয়া মুশকিল। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক যেসব ভুলভাল তথ্য দিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন, তা রীতিমতো অপরাধ। এখানে ভুল হওয়ার সুযোগ নেই। বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে না জেনে কেউ ছাত্রলীগের কর্মীও হতে পারেন না, সেখানে কীভাবে তিনি (হাবিবুর রহমান) নেতা হয়েছেন, তা অনেক বড় চিন্তার বিষয়।’

চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি আকতারুজ্জামানকে সভাপতি ও হাবিবুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের ৪৩তম ব্যাচে (২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষ) পোষ্য কোটায় ভর্তি হন হাবিবুর রহমান। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী, পোষ্য কোটায় ভর্তি হওয়া কেউ আবাসিক হলে অবস্থান করতে পারবেন না। কিন্তু হাবিবুর রহমান ভর্তি হওয়ার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে থাকছেন। হলটির ৩৪৬ ও ৩৪৭ নম্বর (চারজনের কক্ষ) কক্ষে তিনি একাই থাকেন। এর মধ্যে ৩৪৬ নম্বর রুমকে ছাত্রলীগের সম্পাদকের অলিখিত ‘অফিস কক্ষ’ বানিয়েছেন তিনি।

সাধারণ সম্পাদক হওয়ার আগে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসম্পাদক ছিলেন। এ পদে থাকাকালে ২০১৯ সালের ২৭ জানুয়ারি রাজধানীর একটি ভ্রমণবিষয়ক প্রতিষ্ঠানের মালিকের কাছ থেকে সাড়ে ৯৫ হাজার টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগ ওঠে হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে। তবে এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বক্তব্যটিকে ‘স্লিপ অব টাঙ’ (মুখ ফসকে বলা) মন্তব্য করে হাবিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছাত্রলীগে আগে তো বক্তব্যের চর্চা হতো, এখন আর হয় না, সে জন্য ভুল হয়ে গেছে। ১৭ মার্চের অনুষ্ঠান নিয়ে আগের রাতে প্রস্তুতি নিতে হয়েছে। সে জন্য বক্তব্যের প্রস্তুতিটা ওইভাবে হয় নাই আরকি।’

হাবিবুর রহমান ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। এ বিষয়ে বক্তব্যের জন্য লেখকের মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও সাড়া দেননি তিনি।