মাগুরায় ইউপি নির্বাচন

চ্যালেঞ্জের মুখে নৌকার প্রার্থীরা

আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের এক সাধারণ সম্পাদকসহ ২৪ জন ।

  • মহম্মদপুরের ৮ ইউপিতে ১৫ জন এবং শালিখায় ৭ ইউপিতে ৯ জন বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন।

  • বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত মোট ১২ জন প্রার্থী স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করছেন।

মাগুরার মহম্মদপুর ও শালিখা উপজেলায় ১৫টি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। এখানে নৌকার বিপরীতে প্রার্থী হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের এক সাধারণ সম্পাদকসহ ২৪ জন বিদ্রোহী প্রার্থী। দলের মধ্যে বিভক্তি থাকায় তাঁদের নির্বাচনের মাঠ থেকে সরাতে পারেননি নেতারা।

দ্বিতীয় দফায় মাগুরা সদরে ১২টি ইউপিতে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হওয়ায় বিএনপিসহ অন্যান্য দলের প্রার্থীরাও নড়েচড়ে বসেছেন। এমন পরিস্থিতিতে দুই উপজেলার প্রতিটি ইউপিতেই হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীর কারণে অস্বস্তিতে রয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা। তৃতীয় দফায় ২৮ নভেম্বর এই দুই উপজেলায় ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মহম্মদপুর ও শালিখার ১৫টি ইউপিতে আওয়ামী লীগের ২৪ জন বিদ্রোহী প্রার্থী নির্বাচনের মাঠে রয়েছেন। এর মধ্যে মহম্মদপুরের ৮ ইউপিতে ১৫ জন এবং শালিখায় ৭ ইউপিতে ৯ জন বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। এর মধ্যে শালিখা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরজ আলী বিশ্বাস রয়েছেন। আড়পাড়া ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান এবারও দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে একই পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে এই নেতাসহ ২৪ জন বিদ্রোহীকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে আওয়ামী লীগ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বেশির ভাগ ইউপিতে নৌকার সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের দ্বিমুখী ও ত্রিমুখী লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। কোথাও কোথাও আওয়ামী লীগের সমর্থকদের একটি অংশ দলের বিদ্রোহী প্রার্থীকে সমর্থন দিচ্ছে।

এদিকে দুই উপজেলায় বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত মোট ১২ জন প্রার্থী স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করছেন। মহম্মদপুর ও শালিখা উপজেলা বিএনপির নেতারা জানিয়েছেন, বিএনপি যেহেতু নির্বাচনে যায়নি, ফলে যাঁরা প্রার্থী হয়েছেন, তাঁরা সবাই নিজ দায়িত্বে হয়েছেন। দলের সঙ্গে তাঁদের কোনো সমন্বয় নেই। তবে দলীয় সমর্থন না পেলেও কয়েকটি ইউপিতে বিএনপির প্রার্থীদের জয়ের সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন তাঁরা।

আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও স্থানীয় ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিটি ইউপিতে ভোটের ফলাফল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন বিএনপি সমর্থক ভোটাররা। এদিকে আওয়ামী লীগের পর দলীয় প্রতীকে দুই উপজেলায় ১৩টি ইউপিতে প্রার্থী রয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের। সদরে একটি ইউনিয়নে জয় ও দুটিতে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকায় তৃতীয় ধাপেও কয়েকটি ইউনিয়নে ভালো ফল প্রত্যাশা করছেন দলটির নেতারা। এর বাইরে মহম্মদপুরের রাজাপুর ও পলাশবাড়িয়াসহ কয়েকটি ইউনিয়নে জামায়াতে ইসলামী–সমর্থিত প্রার্থীরাও ভোটের মাঠে রয়েছেন।

১১ নভেম্বর মাগুরা সদর উপজেলায় ১২টি ইউনিয়নে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে দুজন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নয়জন নৌকার প্রার্থী বিজয়ী হন। অন্য তিনটি ইউপির দুটিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী এবং অন্যটিতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী জয়ী হন। ওই তিন ইউপিতে নৌকার পরাজয়ের জন্য স্থানীয় আওয়ামী লীগের বিভক্তিকে দায়ী করেছেন জেলার নেতারা। একই আশঙ্কা রয়েছে শালিখা ও মহম্মদপুরের বেশ কয়েকটি ইউপিতে। কারণ, প্রতিটি ইউপিতে বিদ্রোহী প্রার্থীদের ঘিরে স্থানীয় আওয়ামী লীগের সমর্থকেরা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। অনেক ইউপিতে গোপনে বিদ্রোহী প্রার্থীদের সমর্থন দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের নেতাদের পাশাপাশি সরকার দলীয় সাংসদদের বিরুদ্ধে।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ কুমার কুন্ডু গত সোমবার দুপুরে মুঠোফোনে বলেন, ‘প্রতিটি ইউনিয়নে নৌকার বিপরীতে দলের এক বা একাধিক লোক ভোটের মাঠে রয়ে গেছেন। তাঁদের বেশির ভাগকেই ঠেকানো যায়নি। যে কারণে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সুযোগ পাচ্ছেন। সদরে বিদ্রোহী প্রার্থীদের বেশির ভাগই দলের প্রতি আনুগত্য দেখিয়েছেন। কিন্তু মহম্মদপুর ও শালিখায় আমাদের অনেক নেতা এই বিদ্রোহীদের দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন। যে কারণে দলের ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে।’