ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলায় বৃদ্ধ মিলন সরকারের (৮০) চোখ উপড়ে ও কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে প্রতিপক্ষের ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শুক্রবার দুপুরে তাঁদের আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের আজইরাবাড়ির জালাল মিয়া (৫২), আলাল মিয়া (৫০), দয়াল শাহ (৩৯), জামাল মিয়া (৪৮), হোসেন মিয়া (৪৮), মাসুদুর রহমান (৩৫), মিজানুর রহমান (৫০), আমির হোসেন (৫০), মঈন উদ্দিন ওরফে মনির মিয়া (৫০), মুহিন উদ্দিন (২৫), কামাল মিয়া (৬০), রজব আলী (৭৫), শাহীন মিয়া (২০) ও ডালিম মিয়া (৪০)।
একই গ্রামের আজইরাবাড়ির লোকজন গত সোমবার রাতে চোখ উপড়ে ও কুপিয়ে সরকারবাড়ির মিলন সরকারকে হত্যা করেছেন বলে অভিযোগে বলা হয়। হত্যার ঘটনার ৭০ ঘণ্টা পর বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে আটটার দিকে নিহত মিলন সরকারের ছেলে মোমিন সরকার বাদী হয়ে থানায় মামলা করেন। মামলায় আজইরাবাড়ির কাউসার মোল্লাকে প্রধান আসামি করে ৫৫ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ২০-২২ জনকে আসামি করা হয়।
নিহত মিলন সরকার কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের গৌরনগর গ্রামের মৃত তালেব আলীর ছেলে। তিনি সরকারবাড়ির প্রধান ও গ্রামের সরদার ছিলেন। দীর্ঘ প্রায় ৪০ বছরের বেশি সময় তিনি গ্রামের সালিসে মুখ্য ভূমিকা পালন করে আসছিলেন। সালিসে তিনি উপযুক্ত সিদ্ধান্ত দিতেন। এ কারণে প্রতিপক্ষ তাঁর ওপর ক্ষুব্ধ ছিল। পূর্ববিরোধ, খুনের প্রতিশোধ, গ্রাম্য সালিসে নেতৃত্ব দেওয়ায় মিলন সরকারকে হত্যা করা হয়েছে বলে এলাকাবাসী জানান।
নবীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুর রশিদ বলেন, র্যাব ১৪ জনকে থানায় হস্তান্তর করেছে। মিলন সরকার হত্যা মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।
দুই পক্ষ ও স্থানীয় লোকজন জানান, ১৯৮৩ সাল থেকেই এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গৌরনগর গ্রামের সরকারবাড়ি ও আজইরাবাড়ির লোকজনের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। আজইরাবাড়ির নেতৃত্বে আছেন আব্বাস উদ্দিন। ২০১১ সালে প্রতিপক্ষের লোকজন হামলা চালিয়ে সরকারবাড়ির রবিউল ইসলামকে (৩৫) হত্যা করেন। ওই হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ নিতে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে সরকারবাড়ির লোকজন প্রতিপক্ষের দুলাল মিয়া ও জয়নাল মিয়াকে কুপিয়ে হত্যা করেন। দুলালের সারা মুখে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাতের ক্ষত ছিল। সোমবার রাতে সরকারবাড়ির প্রধান মিলনকে একইভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সোমবার রাতে গৌরনগর গ্রামে আয়োজিত ওয়াজ মাহফিলে যোগ দিতে গেলে আজইরাবাড়ির ছানাউল্লাহ মিয়া নামের এক যুবককে সরকারবাড়ির কয়েকজন মারধর করেন। পরে সাড়ে ৯টা থেকে পৌনে ১০টার দিকে আজইরাবাড়ির লোকজন রামদা, চায়নিজ কুড়াল, চাপাতি, ছুরি, বল্লম, টেঁটা, দা ও লাঠিসোঁটা নিয়ে সরকারবাড়ির লোকজনের ওপর হামলা চালান। একপর্যায়ে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হলে অন্তত ১০ জন আহত হন।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, সংঘর্ষ চলাকালে প্রতিপক্ষের লোকজন সরকারবাড়ির মিলন সরকারকে নদীর পাড়ে একা পেয়ে তাঁর ওপর হামলা চালান। তাঁরা মিলনের দুটি চোখ উপড়ে ফেলেন এবং তাঁকে কুপিয়ে হত্যা করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে মঙ্গলবার বিকেলে মিলনকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।