যশোর সদর উপজেলার ইছালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে যুবলীগ নেতার হত্যার হুমকি দেওয়ার পর ১৩ দিন পেরিয়ে গেছে। এ ঘটনায় গত ৩১ মার্চ যশোর কোতোয়ালি থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন শিক্ষক রবিউল ইসলাম। জিডি করার এক সপ্তাহ পর এসে পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনা তদন্তের জন্য পুলিশ গতকাল বুধবার আদালতের অনুমতি পেয়েছে। এখন জেলা পুলিশ সুপারের কাছ থেকে মুঠোফোনের কথোপকথনের তালিকা পেলে তদন্ত শুরু হবে।
গত সোমবার ইছালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলাম ও যশোর সদর উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মাজহারুল ইসলামের মধ্যে মুঠোফোনে কথোপকথনের একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। ৬ মিনিট ৮ সেকেন্ডের ওই কথোপকথনের অডিওতে শোনা যাচ্ছে, যুবলীগের নেতা মাজহারুল বারবার অকথ্য ভাষায় প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলামকে গালাগালি করছেন। প্রধান শিক্ষকের উদ্দেশে মাজহারুলকে বলতে শোনা যায়, ২৪ ঘণ্টা পর যদি ওই শিক্ষক যশোরে থাকতে পারেন, তাহলে তিনি চুড়ি পরে ঘুরে বেড়াবেন।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলাম যশোরেই আছেন। প্রতিদিনের মতো তিনি বিদ্যালয়েও গেছেন। তবে উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মাজহারুল ইসলাম চুড়ি পরেছেন কি না, সে বিষয়ে কেউ খোঁজ দিতে পারেনি।
এ বিষয়ে গতকাল রাত পৌনে ১১টার দিকে যুবলীগ নেতা মাজহারুল ইসলাম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘চুড়ি পরে ঘুরব কেন? একটা মিসটেক হয়েছে, আর আপনারা গণমাধ্যমের লোকজন ভিন্নভাবে সেটা প্রচার করছেন। আমার ইউনিয়নে আমি কত ভালো কাজ করেছি, তা নিয়ে তো আপনারা কিছু লেখেন না। করোনাকালে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। সুখে-দুঃখে মানুষের পাশে থাকি।’
গত ২৪ মার্চ দুপুরে হত্যার এ হুমকি দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলাম। এ ঘটনায় জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে যশোর কোতোয়ালি থানায় ৩১ মার্চ জিডি করেছেন তিনি। পুলিশের পক্ষ থেকে ঘটনা তদন্তের জন্য আদালতের অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয়। গতকাল বুধবার যশোরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মঞ্জুরুল ইসলাম তদন্তের অনুমতি দেন। এরপর অভিযোগ তদন্তের জন্য ইছালী পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) মোকাররম হোসেনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
যশোর জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও ডিবি যশোরের ওসি রূপক কুমার সরকার বলেন, যুবলীগ নেতা মাজহারুলের বিরুদ্ধে তদন্তের অনুমতি দিয়েছেন আদালত। মুঠোফোনের কথোপকথনের তালিকা চেয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা মোকাররম পুলিশ সুপারের কাছে আবেদন করেছেন। সেটি পাওয়ার পর তদন্ত শুরু হবে।
গত ৩১ মার্চ যশোর কোতোয়ালি মডেল থানায় করা ওই জিডিতে ভুক্তভোগী প্রধান শিক্ষক উল্লেখ করেছেন, যশোর সদর উপজেলার ইছালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর আগের কমিটির অগোচরে যুবলীগ নেতা মাজহার ও তাঁর সহযোগিতারা অ্যাডহক কমিটির সভাপতি হিসেবে মনিরুজ্জামান নামের এক ব্যক্তিকে নিযুক্ত করেন। এতে ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও অভিভাবকেরা ওই কমিটির বিরুদ্ধে অনাস্থা এনে উচ্চ আদালতে মামলা করেন। বর্তমানে এ মামলা চলমান। গত ২৪ মার্চ বেলা দুইটার দিকে মাজহারুল তাঁর মুঠোফোন নম্বর থেকে প্রধান শিক্ষককে ফোন দিয়ে কমিটি অনুমোদনের জন্য আবেদন করতে বলেন। তাঁকে কমিটির বিষয়ে মামলা চলমান রয়েছে জানালে অকথ্য ভাষায় গালাগালি ও জীবননাশের হুমকি দেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। ওই জিডির মাধ্যমে নিরাপত্তা চেয়ে তিনি প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছিলেন।
নেওয়া হচ্ছে সাংগঠনিক ব্যবস্থা
বিদ্যালয়ের শিক্ষককে যুবলীগ নেতা মাজহারুল ইসলামের হত্যার হুমকি ও গালাগালির ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে যুবলীগ। এ বিষয়ে আজই তাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হবে।
যশোর জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম চাকলাদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির চেয়ারম্যানের সঙ্গে এ বিষয়ে আমার কথা হয়েছে। যশোর সদর উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মাজহারুল ইসলাম একজন শিক্ষকের সঙ্গে এমন আচরণ কেন করলেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তাঁকে এ বিষয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হচ্ছে। আজই তাঁকে নোটিশ পাঠানো হবে।’