সরকারিভাবে ধান-চাল সংগ্রহ

চুক্তি করেও চাল দেননি দিনাজপুরের চালকল মালিকেরা

উৎপাদনের খরচের চেয়ে চালের সরকারি নির্ধারিত দাম কম। এ কারণে চালকল মালিকেরা চাল সরবরাহ করছেন না। চলতি মৌসুমে খাদ্য বিভাগের ধান-চাল সংগ্রহের শেষ দিন গতকাল সোমবার পর্যন্ত সেদ্ধ চাল ক্রয় হয়েছে ৫৭ হাজার ৫১৬ মেট্রিক টন, যা লক্ষ্যমাত্রার ৬৪ শতাংশ।

ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষকেরা।
ফাইল ছবি

দিনাজপুরে চুক্তি করলেও সরকারি গুদামে চাল সরবরাহ করেননি মিলাররা। চলতি মৌসুমে খাদ্য বিভাগের ধান-চাল সংগ্রহের শেষ দিন গতকাল সোমবার পর্যন্ত সেদ্ধ চাল ক্রয় হয়েছে ৫৭ হাজার ৫১৬ মেট্রিক টন, যা লক্ষ্যমাত্রার ৬৪ শতাংশ। আতপ চাল ক্রয় সম্পন্ন হয়েছে ৮ হাজার ৩৭৯ মেট্রিক টন, যা লক্ষ্যমাত্রার ৬৫ শতাংশ। এ ছাড়া ধান সংগ্রহ হয়েছে ৮ হাজার ৯২৮ মেট্রিক টন, যা লক্ষ্যমাত্রার ২৮ শতাংশ।

খাদ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত মে মাসের শুরুতে ২৬ টাকা দরে ৩২ হাজার ৬৬২ মেট্রিক ধান এবং ৩৬ টাকা দরে ৯১ হাজার ৭২৩ মেট্রিক টন সেদ্ধ চাল এবং ৩৫ টাকা দরে ১২ হাজার ৮৭১ মেট্রিক টন আতপ চাল কেনার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। দিনাজপুরে লটারির মাধ্যমে ৩২ হাজার কৃষককে নির্বাচন করা হয়, যাঁরা ধান বিক্রির সুযোগ পান। আর চাল সরবরাহের জন্য ২ হাজার ১২৩ জন মিলারের সঙ্গে চুক্তি করা হয়।

১ হাজার ৮৩১টি  হাস্কিং মিল ২৮ হাজার ৬৭৭ মেট্রিক টন চাল সরবরাহের জন্য চুক্তিবদ্ধ হলেও চাল সংগৃহীত হয়েছে ১৩ হাজার ৬৮০ মেট্রিক টন। ১০৩টি আতপ মিলের মালিক ১২ হাজার ৮৭১ মেট্রিক টনের বিপরীতে সরবরাহ করেছেন ৮ হাজার ৩৭৯ মেট্রিক টন। আর ১৮৯টি স্বয়ংক্রিয় চালকলের মালিক ৬১ হাজার ৭০৮ মেট্রিক টনের বিপরীতে সরবরাহ করেছেন ৪৩ হাজার ৮৩৬ মেট্রিক টন। তাঁদের কেউ কেউ চুক্তি অনুযায়ী শতভাগ সরবরাহ করেছেন, আংশিক সরবরাহ করেছেন কেউ, আবার একেবারেই চাল দেননি, এমন অনেকেই আছেন। খাদ্য বিভাগ বলছে, যাঁরা চুক্তি অনুযায়ী চাল সরবরাহ করেননি, তাঁদের বিরুদ্ধে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

চলতি বোরো মৌসুমের শুরুতেই সরকার-নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বোরো ধানের দাম বাজারে বেশি থাকায় খাদ্য বিভাগের কাছে ধান বিক্রি করা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন কৃষকেরা। আবার বাড়ির উঠান থেকেও মাড়াইয়ের সঙ্গে সঙ্গে কৃষকের কাছ থেকে ধান কিনেছেন ব্যবসায়ীরা। সরকার প্রতি কেজি ধান ২৬ টাকা দর নির্ধারণ করলেও মৌসুমের শুরু থেকে অদ্যাবধি মোটা জাতের হাইব্রিড ধান প্রতি কেজি ২৬-২৮ টাকা এবং ২৮ ও ২৯ জাতের চিকন ধান বিক্রি হয় ২৭-৩০ টাকা দরে।

চিরিরবন্দর উপজেলার কারেন্টহাট এলাকার কৃষক রয়েল হোসেন জানান, এবার লটারিতে এক টন ধান সরকারের কাছে বিক্রি করার জন্য লটারিতে নাম উঠেছিল তাঁর। কিন্তু বাজারেই ২৬ টাকা কেজি দাম পাওয়ায় খাদ্যগুদামে ধান বিক্রি করেননি তিনি। রয়েল হোসেন বলেন, ‘বাজারেই যদি ২৬ টাকা কেজি পাই, তাহলে খাদ্য বিভাগের বিভিন্ন নিয়ম মেনে ধান বিক্রি করে লোকসান গুনব কেন?’

ধানের মতো বর্তমানে চালের দামে রয়েছে ঊর্ধ্বগতি। গতকাল দিনাজপুরে চালের বাজারে প্রতি কেজি মোটা চাল বিক্রি হয়েছে ৪১-৪২ টাকায়। মিলাররা বলছেন, ধানের দাম বেশি। মোটা জাতের ধান কিনে প্রতি কেজি উৎপাদনে ৪০ টাকার ওপরে খরচ হচ্ছে। সেখানে সরকার দর দিয়েছে ৩৬ টাকা।

জেলা চালকল মালিক গ্রুপের সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, বোরো মৌসুমের শুরু থেকেই ধানের বাজার ঊর্ধ্বগতি হওয়ায় আশানুরূপ ধান কিনতে পারেননি মিলাররা। মিলমালিকেরা একত্র হয়ে চালের বাজার ঊর্ধ্বমুখী করেছেন বলে যে কথা প্রচলিত আছে, তা ভিত্তিহীন। করোনা-আতঙ্কে দেশে খাদ্যঘাটতির আশঙ্কায় অনেক কৃষক ধান বিক্রি করেননি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত বোরো মৌসুমে এ জেলায় ১ লাখ ৭১ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়, যেখানে চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৭ লাখ ৩১ হাজার ১৭৩ মেট্রিক টন। বর্তমানে জেলায় আমন ও বোরো—দুই মৌসুমে প্রায় ১৬ লাখ মেট্রিক টন চাল উৎপাদিত হচ্ছে। স্থানীয়ভাবে চাহিদা রয়েছে বীজসহ আট লাখ মেট্রিক টন। হিসাব অনুযায়ী চাল উদ্বৃত্ত থেকে যাচ্ছে।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. আশ্রাফুজ্জামান বলেন, চলতি বোরো মৌসুমে ধান ও চাল কেনার সময়সীমা শেষ হয়েছে। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ক্রয় সম্পন্ন হয়নি। মিলারদের ধান সরবরাহের জন্য পত্র দিয়ে তাগাদা দেওয়া হয়েছিল। যাঁরা সরকারের সঙ্গে চুক্তি করেও চাল সরবরাহ করেননি, তাঁদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অনেকের লাইসেন্স বাতিল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।