ব্রাহ্মণবাড়িয়া

চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় অনীহা, ঝুঁকিতে জনস্বাস্থ্য

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সাধারণ বর্জের সঙ্গে চিকিৎসা বর্জ্য এক জায়গায় ফেলা হচ্ছে। এর ফলে পরিবেশদূষণের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার মানচিত্র
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার মানচিত্র

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চিকিৎসা বর্জ্য অপসারণে যথাযথ নিয়ম মানছে না বেশির ভাগ বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি সৃষ্টিকারী এসব বর্জ্য প্রতিদিনই পৌরসভার ট্রাকে সাধারণ বর্জ্যের সঙ্গে খোলা জায়গায় ফেলা হচ্ছে। এতে পরিবেশদূষণের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি।

জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা এলাকায় ৫২টি বেসরকারি হাসপাতাল ও ৭১টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। কিন্তু জেলার অধিকাংশ বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কার্যকরী কোনো ব্যবস্থা নেই।

সিভিল সার্জন মোহাম্মদ একরাম উল্লাহ বলেন, ‘জেলার হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়টি খুবই কম মানা হয়, যা মোটেও সন্তোষজনক নয়। করোনার সময়ে এখানে যোগদান করেছি। করোনা নিয়ন্ত্রণসহ স্বাস্থ্য খাতকে উন্নত করতে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কাজ করে যাচ্ছি। মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়টি আমরা পর্যবেক্ষণ করছি।’

চিকিৎসা বর্জ্য (ব্যবস্থাপনা ও প্রক্রিয়াজাতকরণ) বিধিমালা, ২০০৮ অনুযায়ী, স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে অবশ্যই চিকিৎসা বর্জ্য পুড়িয়ে ফেলা ও জীবাণুমুক্ত করার নিজস্ব ব্যবস্থাপনা থাকতে হবে। কিন্তু জেলার বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে চিকিৎসা বর্জ্য পোড়ানো কিংবা জীবাণুমুক্ত করার নিজস্ব কোনো ব্যবস্থা নেই।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর কার্যালয় সূত্র জানায়, বর্জ্য অপসারণে প্রতিষ্ঠানগুলো পৌরসভার ওপর নির্ভরশীল। শুধু পৌর এলাকায়ই প্রতিদিন প্রায় দুই টন চিকিৎসা বর্জ্য সংগ্রহ করে পৌরসভার কর্মচারীরা। পৌরসভার সচিব মোহাম্মদ শামসুজ্জামান বলেন, শহরের ৩৫–৪০টি বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে প্রতিদিন রাতে প্রায় দুই টন মেডিকেল বর্জ্য সংগ্রহ করে পৌরসভার নির্ধারিত ডাম্পিং স্টেশন ছয়বাড়িয়া এলাকায় ফেলা হয়। সেখানে মাঝেমধ্যে মেডিকেল বর্জ্য পোড়ানো হয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা বলছে, কঠিন বর্জ্য ধ্বংসের জন্য হাসপাতালেই মেডিকেল ইনসিনেরেটর, অটোক্লেভ মেশিন বা দাহন যন্ত্রসহ বিভিন্ন আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবস্থা থাকতে হবে। কিন্তু জেলার বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো এসব নিয়ম মানছে না।

সম্প্রতি দি ল্যাবএইড ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যান্ড স্পেশালাইজড হাসপাতাল, সেন্ট্রাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যান্ড হাসপাতাল, মডার্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারসহ কয়েকটি হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, হাসপাতালগুলোর বাইরে ও ফটকের সামনে প্লাস্টিকের একাধিক ড্রামে চিকিৎসা বর্জ্য ভরে রাখা হয়েছে। এসব ড্রামে রক্তমাখা তুলা, গজ, ব্যান্ডেজ, শরীরের অঙ্গ ও সুচজাতীয় সরঞ্জাম রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ৮৭ পৃষ্টার চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গাইডলাইনে কালো, লাল, নীল ও হলুদ রঙের পৃথক পৃথক পাত্রে এসব বর্জ্য রাখার নিয়ম থাকলেও সেখানে এমন পাত্র দেখা যায়নি। বরং নীল রঙের প্লাস্টিকের ছোট-বড় পাত্রেই চিকিৎসা বর্জ্য রাখা হচ্ছে। এ ছাড়া কোনো হাসপাতালে অটোক্লেভ মেশিন ও ইনসিনেরেটর চোখে পড়েনি।

আদি ডাচবাংলা ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যান্ড হসপিটালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সোহেল এবং পেশেন্ট কেয়ার শিশু ও জেনারেল হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ আশিকুর রহমান বলেন, ধারালো বর্জ্য কেটে টুকরা টুকরা করা হয়। পরে সব চিকিৎসা বর্জ্য পৌরসভার ট্রাক এসে নিয়ে যায়।

জেলা বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতাল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মশিউর রহমান বলেন, জেলার সব হাসপাতাল-ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে গজ, ব্যান্ডেজ নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পুড়িয়ে ফেলার নির্দেশনা দেওয়া আছে। অনেকেই সিরিঞ্জ, সুই, সার্জিক্যাল ব্লেড মেশিনের মাধ্যমে ধ্বংস করছে।

কয়েক দশক ধরে চিকিৎসা বর্জ্য সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত পৌরসভার কর্মচারী মহরম মিয়া পবলেন, ‘প্রতিদিনই হাত-পায়ে সুচ ও কাচের আঘাত লাগে। পেটের দায়ে দুর্গন্ধ সহ্য করছি। ড্রাম থেকে ময়লা ঢালতে গেলে ক্লান্ত লাগে। প্রায় অসুখ–বিসুখ হয়। বড় ধরনের কোনো সমস্যা হলে পৌরসভা থেকে একটা ইনজেকশন দিয়ে দেয়।’