সৌদি আরবে নির্যাতনের শিকার হয়ে দেশে ফেরা পঞ্চগড়ের সুমি আক্তারকে (১৮) শুক্রবার রাতেই চোখের চিকিৎসার জন্য ঠাকুরগাঁওয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। গতকাল শনিবার রাতে তাঁকে চিকিৎসক দেখানো হয়েছে বলে জানিয়েছে তাঁর পরিবার।
সুমি বোদা উপজেলার বৈরাতি সেনপাড়া এলাকার রফিকুল ইসলামের মেয়ে। তিনি গৃহকর্মী হিসেবে সৌদি আরবে যান। সেখানে নির্যাতনের শিকার হয়ে শৌচাগারে লুকিয়ে নিজের অবস্থা বর্ণনা করে স্বামীর কাছে ভিডিও বার্তা পাঠান তিনি। সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর সরকার তাঁকে উদ্ধারের তৎপরতা শুরু করে।
শুক্রবার সকালে ঢাকায় ফেরেন সুমি। স্বামীর কাছে অনিরাপদ বোধ করায় সন্ধ্যায় বাবার বাড়ি যান সুমি। তাঁর স্বামী নুরুল ইসলাম দেখা করার জন্য রাতে সেখানে যান। তবে তাঁকে দেখা করতে দেওয়া হয়নি। সুমির মা মল্লিকা বেগম বলেন, সুমিকে বাড়ি নিয়ে আসার পর তিনি চোখের সমস্যায় ভুগছিলেন। তাঁর চোখ দুটি লাল। মাথাব্যথা ছিল। চিকিৎসক দেখানোর জন্য রাতেই তাঁকে ঠাকুরগাঁও নিয়ে যাওয়া হয়। সঙ্গে সুমির বাবা আছেন।
সুমির স্বামী নুরুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, ‘সুমি দেশে ফেরার সময় আমি সন্তানদের নিয়ে ঢাকায় বিমানবন্দরে অপেক্ষা করছিলাম। কিন্তু সুমি আমাদের সঙ্গে দেখা না করে বাবার বাড়িতে চলে যায়। আমি দুই সন্তানসহ রাতে সুমির বাবার বাড়ি যাই। সেখানে সুমির পরিবারের লোকজন আমাদের ঘরে আটকে রেখে মারধরের চেষ্টা করেন। গতকাল সন্তানদের নিয়ে কোনোমতে পালিয়ে আসি।’
গতকাল সন্ধ্যায় সুমির বাবা রফিকুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, ‘সুমির স্বামী শুক্রবার রাতে আমাদের বাড়িতে এসেছিল। সুমিকে তার সঙ্গে দেখা করতে দিইনি। তবে আটকে রাখা বা খারাপ ব্যবহার করা হয়নি। আমার মেয়ে অসুস্থ। এখন তাকে চোখের চিকিৎসক দেখানো হচ্ছে। সে একটু সুস্থ হোক। তখন ভেবেচিন্তে দেখব, আইনি সহায়তা নেব কি না।’
শুক্রবার সকালে সুমিকে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের পক্ষ থেকে বিমানবন্দরে গ্রহণ করা হয়। এ বোর্ডের উপসহকারী পরিচালক (ডিএডি) আবু হেনা মোস্তফা কামাল তাঁকে বোদায় নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ মাহমুদ হাসানের কাছে হস্তান্তর করেন। পরে পাঁচপীর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবীর প্রধানের উপস্থিতিতে তাঁকে মা–বাবার হাতে তুলে দেওয়া হয়। তাঁকে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের গাড়িতেই বৈরাতি সেনপাড়া এলাকায় পৌঁছে দেওয়া হয়।
ওই দিন বাড়িতে সুমি জানান, প্রায় দুই বছর আগে ঢাকায় তিনি পোশাক কারখানায় কাজ নেন। সেখানে আশুলিয়ার চারাবাগ এলাকার নুরুল ইসলামের সঙ্গে পরিচয় হয় তাঁর। ঢাকায় যাওয়ার ছয় মাস পর নুরুলকে বিয়ে করেন তিনি। গত ৩০ মে নুরুল তাঁকে ‘রূপসী বাংলা ওভারসিজ’ নামের একটি সংস্থার মাধ্যমে গৃহকর্মী হিসেবে সৌদি আরব পাঠান। দেশটির রাজধানী রিয়াদের একটি বাসায় গৃহকর্মীর কাজ শুরু করেন তিনি। সেখানে বাড়ির মালিক তাঁকে নির্যাতন করতেন। অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে নাজরান এলাকায় আরেক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে দেন ওই মালিক। সেখানেও তাঁর ওপর নির্যাতন শুরু হয়। তাঁর মুঠোফোন কেড়ে নেওয়া হয়। অনেক অনুরোধ করে সম্প্রতি মুঠোফোনটি নিয়ে তিনি শৌচাগারে লুকিয়ে নিজের কথা ভিডিও করে স্বামীর কাছে পাঠান।
সুমির স্বামী নুরুল ইসলাম গতকাল বলেন, ‘আমার প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার পর সুমিকে বিয়ে করি। আগের স্ত্রীর দুই ছেলেকে সুমি সন্তান হিসেবে গ্রহণ করেছিল। পরে সুমি আমাকে না জানিয়ে মীরপুরের এক নারীর প্ররোচনায় সৌদি আরব চলে যায়। সে পঞ্চগড়ে তার বাবার বাড়ি থেকেই রওনা দেয়। আমাকে কিছুই জানায়নি।’