চিকিৎসক দেখিয়ে ছেলেকে নিয়ে বাড়িফেরা হলো না আরিফার

লঞ্চডুবিতে স্ত্রী আরিফা বেগম ও দেড় বছর বয়সী ছেলে সাফায়েতকে হারিয়েছেন দীন ইসলাম। খবর পেয়ে বড় ছেলেকে নিয়ে ঘটনাস্থলে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি
ছবি: দিনার মাহমুদ

মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার রমজানবেগ এলাকার বাসিন্দা আরিফা বেগম (৩৫) অসুস্থ চাচাশ্বশুর আবদুর রবকে নারায়ণগঞ্জে শহরে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন। সঙ্গে ছিল দুই বছরের ছোট ছেলে সাফায়েত হোসেনও। চিকিৎসককে দেখানোর পর লঞ্চে করে মুন্সিগঞ্জে বাড়িতে যাবেন বলে স্বজনদের জানিয়েছিলেন আরিফা। তবে আর বাড়িফেরা হলো না আরিফা ও তাঁর ছেলে সাফায়েতের।

রোববার বেলা দুইটার দিকে শীতলক্ষ্যা নদীর মাহমুদনগর কলাবাগান এলাকায় রূপসী-৯ নামের কার্গোর ধাক্কায় ডুবে যাওয়া এমএল আশরাফউদ্দিন নামের লঞ্চের যাত্রী ছিলেন আরিফা বেগম, তাঁর ছেলে সাফায়েত হোসেন ও চাচাশ্বশুর আবদুর রব। লঞ্চটি অন্তত ৩০ যাত্রী নিয়ে নারায়ণগঞ্জ থেকে মুন্সিগঞ্জে যাচ্ছিল। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত দুজন নারী, দুটি শিশু ও একজন পুরুষের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে আরিফা ও তাঁর ছেলে সাফায়েত রয়েছেন। তবে বেঁচে গেছেন আরিফার চাচাশ্বশুর আবদুর রব। তাঁকে ফতুল্লার একটি ক্লিনিকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

আরিফা বেগম রমজানবেগ এলাকার দীন ইসলামের স্ত্রী। এ দম্পতির দুই ছেলের মধ্যে সাফায়েত ছোট। আরিফার ননদ লিপি বেগম বলেন, ‘আমার চাচা আবদুর রব অসুস্থ। সকালে চাচাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান ভাবি। সঙ্গে ছিল ভাতিজা সাফায়েত। তাঁরা লঞ্চে করে বাড়িতে আসছেন বলে দুপুরে আমাদের ফোনে জানিয়েছিলেন। এরপর বেলা আড়াইটার দিকে চাচা কল করে জানান, তাঁদের লঞ্চ ডুবে গেছে। আরিফা ও সাফায়েতকে পাওয়া যাচ্ছে না। খবর পেয়ে আমরা নারায়ণগঞ্জে ছুটি আসি। বিকেল চারটার দিকে আরিফা ও সাফায়েতের লাশ উদ্ধার করা হয়।’

মা ও ভাইকে হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে আরিফা বেগমের ছেলে মাহিম ব্যাপারী (১০)। সে বলে, ‘যাওয়ার আগে মা বলেছিল, বাড়িতে যেন থাকি। দুষ্টামি না করি। মারয়ে কথা মেনে সারা দিন বাড়িতে ছিলাম। মা বলেছিল, তাড়াতাড়ি চলে আসবে। ছোট ভাইকে নিয়ে গেল। আমার মা তো আর এল না। এখন আমার মা-ভাইকে কই পাব!’

স্ত্রী ও ছেলের মৃত্যুর খবর পেয়ে বুক চাপড়ে বিলাপ করছিলেন আরিফা বেগমের স্বামী দীন ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমার সব শেষ হয়ে গেল। আল্লাহ সব কাইরা নিয়া গেল।’

এ লঞ্চডুবির ঘটনায় মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার উত্তর ইসলামপুর এলাকার মো. জয়নাল ভূঁইয়ার (৬০) লাশও উদ্ধার করা হয়েছে। জয়নাল ভূঁইয়া ওই এলাকার জুলফু আলী ভূঁইয়ার ছেলে। তিনি ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের ব্যবসা করতেন।

জয়নাল ভূঁইয়ার স্বজন ও ব্যবসায়িক অংশীদার সৈয়দ মাতবর বলেন, ব্যবসায়িক কাজে সকালে ডেমরায় যান জয়নাল। কাজ সেরে এমএল আশরাফউদ্দিন নামের লঞ্চে করে বাড়িতে ফিরছিলেন। লঞ্চটি ডুবে যাওয়ার পরে তিনি সাঁতরে তীরে উঠতে পেরেছিলেন। এর কিছুক্ষণ পরেই মারা যান। তাঁর লাশ এখনো নারায়ণগঞ্জে আছে। আনার প্রক্রিয়া চলছে।