গবেষণা সমীক্ষা

চিংড়ি চাষের ঝুঁকি মেটাচ্ছে ঘেরের পাড়ের সবজি চাষ

চিংড়িঘেরের আইলে সবজি চাষ করে লাভের মুখ দেখছেন চাষিরা। সম্প্রতি খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার ভুলবাড়িয়া এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো
চিংড়িঘেরের আইলে সবজি চাষ করে লাভের মুখ দেখছেন চাষিরা। সম্প্রতি খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার ভুলবাড়িয়া এলাকায়।  ছবি: প্রথম আলো

ঘেরে মড়ক বা অন্য কোনো কারণে মিঠা পানিতে অনেক সময় গলদা চিংড়ির উৎপাদন আশানুরূপ হয় না। তবে ঘেরের বেড়িবাঁধে বছরব্যাপী সবজি চাষের মাধ্যমে সে ক্ষতি কিছুটা হলেও পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে। পাশাপাশি পারিবারিক পুষ্টির জোগানও বেড়েছে। ঘেরের পাড়ে সবজি চাষ না হলে কেবল চিংড়ি চাষ চাষিদের জন্য আর্থিকভাবে বেশ ঝুঁকিপূর্ণ হতো।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিন পরিচালিত একটি গবেষণা প্রকল্পের ফলাফলে এসব তথ্য উঠে এসেছে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা সেল ওই গবেষণা প্রকল্পে অর্থায়ন করে।

বাগেরহাটের মোল্লাহাটের তিনটি ইউনিয়নের চিংড়ি ও একই সঙ্গে ঘেরের বেড়িতে সবজিচাষিদের ওপর ওই গবেষণা সমীক্ষা পরিচালিত হয়। সমীক্ষার ফলাফল উপস্থাপন উপলক্ষে গত বৃহস্পতিবার এক সেমিনারের আয়োজন করা হয়।

সেমিনারে উপস্থাপন করা গবেষণার ফলাফলে উল্লেখ করা হয়, এখনো এসব ঘেরের বেড়িবাঁধে সবজি চাষ ঠিক পরিকল্পিতভাবে হয় না। পরিকল্পিতভাবে তা করা গেলে উৎপাদন ও আয় দুই-ই বাড়তে পারে। বেড়িবাঁধে সবজি চাষকে বহুমুখী ও বছরব্যাপী করার প্রযুক্তি উদ্ভাবনের তাগিদ দিয়ে বলা হয়, পদ্মা সেতু চালু হলে রাজধানীতে টাটকা সবজির সরবরাহে দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোর জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে। সবজির চাহিদা ও দরও বাড়তে পারে। সারা বছর যাতে ঘেরের বেড়িতে সবজি উৎপাদন করা যায়, এ জন্য একটি ফসল পঞ্জিকা অনুসরণেরও তাগিদ দেওয়া হয়।

বাগেরহাটসহ এ অঞ্চলে ঘেরের বেড়িবাঁধে সবজি চাষ ও উৎপাদন বাড়ছে বলে উল্লেখ করে বলা হয়, এখন এক শতক বেড়িবাঁধের জমি থেকে বছরে ২১৮ কেজি সবজি পাওয়া যাচ্ছে, যা আরও বাড়ানো যায়। চিংড়িঘেরের এই সবজি চাষে ব্যবস্থাপনাগত ও কারিগরি বিষয়ে কৃষককে আরও দক্ষ করে তুলতে পারলে আর্থসামাজিকভাবে তা আরও ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে বলেও উল্লেখ করা হয়।

গবেষকেরা আরও দেখেছেন, যেসব কৃষক কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ বা এ ধরনের অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকে কারিগরি জ্ঞান নিয়ে সবজি চাষ করেন, তাঁরা বেশি লাভবান হচ্ছেন। বিশেষ করে সার প্রয়োগ, বালাইনাশক ব্যবহার, সেচ ও অন্যান্য কারিগরি বিষয়ে কৃষকের মধ্যে এখনো জ্ঞানের অভাব রয়েছে। আবার সময়মতো ভালো বীজ, সার, কীটনাশকপ্রাপ্তি ও প্রয়োগের অভাবও রয়েছে।

দেশের মোট জমির ২০ শতাংশ এবং চাষাবাদযোগ্য জমির ৩০ শতাংশ উপকূলীয় অঞ্চলে অবস্থিত উল্লেখ করে বলা হয়, বন্যা, খরা, ঝড় বা প্রাকৃতিক দুর্যোগে দেশের অন্যান্য অঞ্চলে যখন সবজি চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হয় তখনো বেড়িবাঁধের সবজি উৎপাদন অব্যাহত থাকে, যা রাজধানীসহ বিভিন্ন অঞ্চলের অনেকটাই চাহিদা মেটায়। বাগদা চিংড়ির ঘেরের বেড়িবাঁধে সবজি চাষের সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে বলা হয়, ওই এলাকার জন্যও কারিগরি সহায়তা প্রয়োজন।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন অ্যাগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিনের প্রধান অধ্যাপক সরদার শফিকুল ইসলাম। প্রধান অতিথি ছিলেন উপাচার্য মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন জীববিজ্ঞান স্কুলের ডিন অধ্যাপক মো. রায়হান আলী ও গবেষণা সেলের পরিচালক অধ্যাপক এ কে ফজলুল হক।

সূচনা বক্তব্য দেন গবেষণা প্রকল্পের প্রিন্সিপাল ইনভেস্টিগেটর অধ্যাপক মোহাম্মদ বশীর আহমেদ। গবেষণা ফলাফল উপস্থাপন করেন প্রকল্পের সহযোগী ইনভেস্টিগেটর অধ্যাপক মো. মতিউল ইসলাম।