পাবনার বেড়া উপজেলার মাশুন্দিয়া কলেজ বাজারে চায়ের দোকান চালানো সেই তৌহিদুল ইসলাম শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাচ্ছেন। ১৫ জুলাই রাতে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) তাঁকে উপজেলার আমিনপুর আয়েনউদ্দিন উচ্চবিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করেছে।
তৌহিদুলের বাবা মজিদ মোল্লা একসময় পরিবহনশ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। ১৩ বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় মারাত্মক আহত হন তিনি। ওই সময় সংসার চালাতে মাশুন্দিয়া বাজারে ছোট একটি চায়ের দোকান দেন মজিদ মোল্লা। তৌহিদুল তখন পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র। তখন থেকেই তৌহিদুল বাবাকে চায়ের দোকান চালাতে সাহায্য করে আসছেন। এই চায়ের দোকান করেই তিনি জেএসসি থেকে শুরু করে রসায়ন শাস্ত্রে স্নাতকোত্তর (এমএসসি) পর্যন্ত পড়াশোনা চালিয়ে গেছেন। যদিও করোনা পরিস্থিতির কারণে স্নাতকোত্তরের কয়েকটি পরীক্ষা হওয়ার পর স্থগিত রয়েছে। চায়ের দোকানে কাজ করার পরেও নিয়মিত ছাত্র হিসেবে প্রতিটি পরীক্ষাতেই তিনি ভালো ফল করেছেন।
গত বছরের ১৪ মার্চ তৌহিদুলকে নিয়ে প্রথম আলোয় ‘তাঁর কাছে কোনো কাজই ছোট নয়’ ও ১২ এপ্রিল ‘শিক্ষকতার পাশাপাশি চা বিক্রি করেন তিনি’ শিরোনামে দুটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে অনেকে ‘অনুপ্রেরণার প্রতীক’ হিসেবে তাঁকে অভিহিত করেন। প্রতিবেদন প্রকাশের ওই সময়েও তিনি স্নাতকোত্তর পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার পাশাপাশি সকাল-সন্ধ্যা চায়ের দোকান চালিয়ে আসছিলেন। তবে এর আগেই তিনি এনটিআরসিএর শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে এমপিওভুক্ত শিক্ষক হওয়ার আশায় ছিলেন।
গত বৃহস্পতিবার রাতে এনটিআরসিএ দেশে বেসরকারি বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৫৪ হাজার শিক্ষক (এমপিওভুক্ত) নিয়োগের ফল প্রকাশ করে। এতে বেড়া উপজেলার আমিনপুর আয়েনউদ্দিন উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের জন্য তৌহিদুল সুপারিশপ্রাপ্ত হন।
তৌহিদুল বলেন, ‘নিয়োগের ফল প্রকাশের দিনেও সকাল-সন্ধ্যা দোকানে চা বানিয়ে পরিবেশন করেছি। পরে রাতে এনটিআরসিএর রেজাল্ট বের হলে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার খবর পাই। শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার খবরটি ছিল আমার কাছে অসামান্য ও জীবনের সেরা। চাকরির টাকায় আমি আরও ভালোভাবে পরিবারের সদস্যদের পাশে দাঁড়াতে পারব।’ তৌহিদুল জানান, তিনি বিসিএস পরীক্ষার জন্যও প্রস্তুতি নিচ্ছেন। গত মার্চে অনুষ্ঠিত ৪১তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা তাঁর বেশ ভালো হয়েছে।
তৌহিদুলেরা দুই ভাই ও এক বোন। তাঁর ভাই ও বোন পাবনার এডওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে বিএ (সম্মান) শ্রেণিতে পড়াশোনা করেন। ভাইবোনদের পড়াশোনার খরচের বিষয়টিও তাঁকেই দেখতে হয় বলে তৌহিদুল জানান।
মাশুন্দিয়া কেজিবি ভবানীপুর কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষক আলাউল হোসেন বলেন, কোনো কাজই যে ছোট নয়, তৌহিদুল তা ভালোভাবে প্রমাণ করেছেন। এলাকার অনেকেই এখন তাঁকে অনুপ্রেরণার প্রতীক হিসেবে দেখছেন।