কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলায় মাংসের চাহিদার চেয়েও উদ্বৃত্ত রয়েছে। কিন্তু দুধ ও ডিমের চাহিদা পূরণ হচ্ছে না। প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের চলতি বছরের জুন মাসের পরিসংখ্যানে এই চিত্র তুলে ধরা হয়।
গত রোববার দুপুরে জানতে চাইলে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা চন্দন কুমার পোদ্দার প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিদিন একজন মানুষের ১২০ গ্রাম মাংসের প্রয়োজন। আদর্শ সদর উপজেলায় ১২২ দশমিক ৬০ গ্রাম মাংসের জোগান হচ্ছে। চাহিদার চেয়ে উদ্বৃত্ত আছে ২ দশমিক ৬০ গ্রাম। অপরদিকে একজন মানুষের বছরে ১০৪টি ডিম খাওয়া প্রয়োজন (সপ্তাহে দুটি করে)। কিন্তু জনপ্রতি ৯৫টি ডিমের জোগান দেওয়া হচ্ছে। ডিমের ক্ষেত্রে ৯টি ঘাটতি রয়েছে। তা ছাড়া, প্রতিদিন একজন মানুষের ২৫০ মিলিলিটার দুধ পান করা প্রয়োজন। কিন্তু জোগান হচ্ছে ১৫৮ দশমিক ১ মিলিলিটার। দুধে ঘাটতি আছে ৯১ দশমিক ৯ মিলিলিটার।
কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার ১৪৫ দশমিক ৩৮ বর্গকিলোমিটার এলাকার ছয়টি ইউনিয়নে জনসংখ্যা ৪ লাখ ৫৬ হাজার ১৯১। এদের আমিষ ও দুধের চাহিদা পূরণের জন্য উপজেলায় গরু ও মুরগির খামার রয়েছে। মাংসের ক্ষেত্রে ৪০ শতাংশ জোগান দিচ্ছে ব্রয়লার মুরগি। বাকি অংশের জোগান হচ্ছে গরু, ছাগল, মহিষ ও ভেড়া থেকে।
এ বছর সারা দেশে কোরবানির হাটে ১ কোটি ১৮ লাখ গরু ওঠে। এবার চাহিদা ছিল ১ কোটি ৮ লাখ। আরও ১০ লাখ গরু উদ্বৃত্ত ছিল। আদর্শ সদর উপজেলায় গরু জবাই হয়েছে ৯ হাজার ৪৬৯টি, ছাগল ২ হাজার ৩৫০টি। মোট ১১ হাজার ৮১৯টি পশু জবাই হয়। আদর্শ সদর উপজেলার ১০টি হাটে এবার ৫২০টি গরু ও ২৩টি ছাগল অবিক্রীত ছিল।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা চন্দন কুমার পোদ্দার বলেন, আদর্শ সদর উপজেলায় ডিম উৎপাদনের খামার আছে ২১টি, দুধের খামার ১৬৯টি, ব্রয়লার মুরগির খামার আছে ১১০টি, রয়েছে কয়েকটি সোনালি (কক) মুরগির খামারও। তিনি আরও বলেন, এখন গাভি পালনের ওপর সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে। সরকার গুঁড়া দুধ আমদানি বাদ দিয়ে তরল দুধের প্রতি নজর দিচ্ছে। চলতি বছরের জুলাইয়ে এলডিডিপির (লাইভস্টক অ্যান্ড ডেইরি ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম) আওতায় সারা দেশের সব কটি উপজেলায় গাভি পালনের জন্য ৪ হাজার ৩০০ কোটি টাকার পাঁচ বছরের প্রকল্প শুরু হয়েছে। এতে খামারিরা দুধ উৎপাদন করবেন। সে জন্য খামারিদের প্রশিক্ষণ, কর্মশালা করে সচেতন ও কলাকৌশল শেখানো হচ্ছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে দুধের ঘাটতি কমে আসবে। ডিমের ঘাটতি কমানোর জন্যও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
আদর্শ সদর উপজেলার কালীবাজার ইউনিয়নের ধনুয়াখলা গ্রামের জেড এইচ অ্যাগ্রো পার্কের স্বত্বাধিকারী জিয়াউল হক বলেন, ‘আমার খামারে ডিম ও দুধ উৎপাদিত হচ্ছে। প্রতিদিন আমার খামার থেকে অন্তত ৮ হাজার ডিম ও ২০০ লিটার দুধ জোগান দেওয়া হচ্ছে।’
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘মাংস, দুধ ও ডিমের চাহিদা মেটাতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আদর্শ সদরে মাংসের চাহিদার চেয়েও বেশি পাওয়া যাচ্ছে।’