ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট নিয়োগ না হওয়ায় এ সমস্যা হয়েছে। এতে বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের হৃদ্রোগীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
আনন্দ মোহন কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ জাকির হোসেন সম্প্রতি হঠাৎ করে বুকে ব্যথা অনুভব করেন। স্বজনেরা তাঁকে হাসপাতালে নেন। পরে তাঁর হৃৎপিণ্ডে ব্লক ধরা পড়লে রিং পরানোর প্রয়োজন পড়ে। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হৃদ্রোগ বিভাগে ক্যাথল্যাব থাকা সত্ত্বেও তিনি এ ধরনের সেবা পাননি। পরে তিনি ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়েছেন।
উদ্বোধনের সাড়ে ৯ মাস পরও ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হৃদ্রোগ বিভাগের ক্যাথল্যাব এখনো চালু হয়নি। কবে নাগাদ চালু হবে, তা–ও বলতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। জানা গেছে, ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট নিয়োগ না হওয়ায় এ সমস্যা হয়েছে। এতে বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের হৃদ্রোগীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। অ্যানজিওগ্রাম, রিং পরানো, পেসমেকার স্থাপন, হার্টের ভালভ রি-পেয়ারিংয়ের জন্য তাঁদের এখনো ঢাকায় কিংবা বিদেশে যেতে হচ্ছে। এ জন্য রোগীদের খরচ হচ্ছে বিপুল অঙ্কের অর্থ, ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে অন্যান্য ক্ষেত্রে।
হাসপাতালের প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি হাসপাতালের নতুন ভবনের ৪র্থ তলায় হৃদ্রোগ বিভাগে স্থাপন করা হয়েছিল ক্যাথল্যাব। সে সময় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, ক্যাথল্যাব চালুর মাধ্যমে সরকারনির্ধারিত মূল্যে হৃদ্রোগীদের চিকিৎসা দেবে। এ জন্য জাপান থেকে আনা সিমাকজো অ্যানজিওগ্রাম মেশিন স্থাপন করা হয়েছিল। প্রি–ক্যাথল্যাব ও পোস্ট–অপারেটিভ কক্ষ প্রস্তুত করা হয়েছিল।
ক্যাথল্যাব উদ্বোধনের আগে হৃদ্রোগ বিভাগের চারজন চিকিৎসক, চারজন সেবিকা এবং তিনজন টেকনিশিয়ান জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট থেকে প্রশিক্ষণও নিয়ে এসেছিলেন। একসঙ্গে আটজন রোগীকে চিকিৎসা প্রদান করা সম্ভব বলে জানিয়েছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ক্যাথল্যাব চালু করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট নিয়োগ না দেওয়ায় ওই সময় প্রথম আলোতে ‘বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়োগ না দিয়ে ক্যাথল্যাব উদ্বোধন’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়েছিল।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) ময়মনসিংহ শাখার সভাপতি মতিউর রহমান ভূঁইয়া জানান, ক্যাথল্যাব চালু না হওয়ায় এই অঞ্চলের রোগীদের চিকিৎসার জন্য ঢাকা এবং বিদেশে যেতে হচ্ছে। করোনাকালে চিকিৎসা নেওয়া অনেক কঠিন এবং প্রচুর ব্যয়সাধ্য। ক্যাথল্যাব চালু হলে অ্যানজিওগ্রাম পরীক্ষার পর রোগীদের নামমাত্র ফি দিয়ে রিং পরানো, পেসমেকার স্থাপনসহ প্রয়োজনে বাইপাস সার্জারি করা যেত। তাই অবিলম্বে ক্যাথল্যাবটি চালু করার দাবি জানান তিনি।
হাসপাতালের হৃদ্রোগ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ৫০ শয্যার হৃদ্রোগ বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ১৭০ থেকে ১৮০ জন রোগী ভর্তি থাকে, যা ধারণক্ষমতার প্রায় চার গুণ। এই হাসপাতালে বৃহত্তর ময়মনসিংহের ছয় জেলার পাশাপাশি সুনামগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, গাজীপুরের রোগীরাও আসেন।
হৃদ্রোগ বিভাগের প্রধান গণপতি আদিত্য জানান, করোনার প্রভাব এবং ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট নিয়োগ না দেওয়ায় ক্যাথল্যাব এখনো কার্যকর করা যায়নি। এ ছাড়া জাপানি কোম্পানিটি হৃদ্রোগ বিভাগের কাছে মেশিনটি আজও হস্তান্তর করেনি। বিশেষজ্ঞ টিম এসে অ্যানজিওগ্রাম মেশিনটি পরীক্ষা করে হৃদ্রোগ বিভাগের কাছে হস্তান্তর করার পর রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া সম্ভব হবে।
হাসপাতালের উপপরিচালক লক্ষ্মীনারায়ণ মজুমদার জানান, হৃদ্রোগ বিভাগে ক্যাথল্যাব চালু করতে ১০ শয্যার একটি পোস্টক্যাথল্যাব ওয়ার্ডসহ সব প্রস্তুতি রয়েছে। বিশেষজ্ঞ ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট নিয়োগ প্রসঙ্গে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে।