খুলনার দাকোপ উপজেলার চালনা পৌরসভা নির্বাচনে ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে। আজ সোমবার সকাল ৮টায় ভোট শুরু হয়ে চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। এই উপজেলায় যেকোনো ধরনের নির্বাচনে প্রথমবারের মতো ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ হচ্ছে।
নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে চালনা পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান মেয়র সনত কুমার বিশ্বাস, ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো. আবুল খয়ের খান, জগ প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সাবেক মেয়র অচিন্ত্য কুমার মণ্ডল এবং নারকেলগাছ প্রতীক নিয়ে গৌতম কুমার রায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
সকালে ভোট গ্রহণের শুরুতে কেন্দ্রগুলোয় লোকজনকে লম্বা সারিতে দেখা গেছে। বিশেষ করে নারীদের লাইন ছিল অনেক দীর্ঘ। তবে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট হওয়ায় অনেকে বুঝে উঠতে পারছেন না। ফলে ভোট চলছে ধীরগতিতে।
২ নম্বর ওয়ার্ডের কেন্দ্র চালনা কেসি পাইলট স্কুলে লম্বা লাইনে ভোটাররা দাঁড়িয়ে ছিলেন। ১ হাজার ৬০০ ভোটারের ওই কেন্দ্রে প্রথম এক ঘণ্টায় ৯৪টি ভোট পড়েছিল।
লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা ভোটার লক্ষ্মী সানা বলেন, ‘বাড়িতে কাজ আছে। ধান কাটতে যেতে হবে। তাই সকাল সকাল আসলাম। তবে এখন দেখছি লম্বা লাইন।’
ভোট দিয়ে বেরিয়ে আসা জোহরা বেগম বলেন, ‘ভিড় এড়ানোর জন্য আগে এসেছিলাম। লাইন চলছিল না। তবে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে সমস্যা হয়নি। ব্যালটের চেয়ে সোজা। তবে অনেকে এই বিষয়ে নতুন হওয়ায় ঝামেলা হচ্ছে। দেরি হয়ে যাচ্ছে।’
৩ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটকেন্দ্র চালনা মহিলা কলেজ কেন্দ্রে ভোটের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা অসীম মণ্ডল বলেন, এক ঘণ্টা ধরে তিনি দাঁড়িয়ে আছেন। তবে লাইন এগোচ্ছে না।
ওই কেন্দ্রের বাইরে নারী-পুরুষ ভোটারের দীর্ঘ লাইন। প্রার্থীদের লোকজন কেন্দ্রের বাইরে টানানো ইভিএম ব্যানার দেখিয়ে ভোটারদের ভালো করে ভোট দেওয়ার পদ্ধতি বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন। বুথের মধ্যে নির্বাচন কর্মকর্তারা ভোটারদের সাহায্য করছেন। ওই কেন্দ্রের একটি বুথের সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা বিকাশ কুমার মণ্ডল বলেন, ‘অনেকে বুঝতে না পেরে ডাকছেন। আমরা প্রক্রিয়াটা দেখিয়ে দিচ্ছি।’
ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা প্রবীর রায় প্রথম আলোকে বলেন, ভোটারদের উপস্থিতি অনেক ভালো, তবে ভোট চলছে ধীরগতিতে। ৯৩৯ জন ভোটারের ওই কেন্দ্রে প্রথম দুই ঘণ্টায় ১৬০টি ভোট পড়েছে।
বেলা পৌনে ১১টায় শিশু কানন প্রি-ক্যাডেট স্কুল কেন্দ্রে গিয়েও লম্বা লাইন চোখে পড়ে। বয়স্ক ভোটারদের কোলে করে নিয়ে এসেছেন স্বজনেরা। ওই কেন্দ্রে লাইনে দাঁড়ানো ভোটার রূপবান বেগম (৬৫) বলেন, ‘সকাল নয়টার দিকে না খেয়ে ভোট দিতে আসছি। এখনো লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। লাইন তো টানে না।’
ওই কেন্দ্রে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা প্রণয় রঞ্জন মণ্ডল বলেন, ১ হাজার ৬৯৯ জন ভোটারের এই কেন্দ্রে সকাল ১০টা পর্যন্ত প্রায় ১৫ শতাংশ অর্থাৎ ২৬০টি ভোট পড়েছে।
বেলা ১১টা পর্যন্ত ১৫টি ভোট বুথে গিয়ে দেখা গেছে, সব বুথেই নৌকা, ধানের শীষ ও জগ প্রতীকের প্রার্থীর এজেন্ট আছে। বাইরেও উৎসবমুখর পরিবেশ।
সকাল সাড়ে আটটার দিকে শিশু কানন প্রি-ক্যাডেট স্কুল কেন্দ্রে ভোট দেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী সনত কুমার বিশ্বাস। ভোট দেওয়ার পর তিনি বলেন, ভোটের পরিবেশ নিয়ে তিনি সন্তুষ্ট। জয়ের ব্যাপারে তিনি শতভাগ আশাবাদী।
বিএনপির প্রার্থী মো. আবুল খয়ের খান অসুস্থ থাকায় খুলনা নগরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এবার তিনি নিজে প্রচারণায় নামতে পারেননি। ভোট দিতেও আসতে পারছেন না। তাঁর নির্বাচনী এজেন্ট মোজাফফর হোসেন বলেন, ‘আমাদের লোকদের হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে। অনেক কেন্দ্রে এজেন্টদের চাপ দেওয়া হচ্ছে।’
স্বতন্ত্র প্রার্থী অচিন্ত্য কুমার মণ্ডল সকাল আটটার দিকে চালনা সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, বয়স্ক লোকদের সঙ্গে আনসার বা পুলিশের লোক যাচ্ছেন। এতে সমস্যা হচ্ছে। বয়স্ক লোকদের স্বজনদের যেতে দেওয়া হোক। এ ছাড়া ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কেন্দ্রে মাসুম নামের একজন নৌকার এজেন্ট বোতামে চাপ দিয়ে দিচ্ছেন। সারা দিন ভালো ভোট হলে জয়ের ব্যাপারে তিনি আশাবাদী।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটকেন্দ্রে পিসাইডিং কর্মকর্তা প্রবীর রায় বলেন, প্রার্থীর কাছ থেকে অভিযোগ পাইনি। তবে ওই এজেন্ট নিয়ে অন্যরা আপত্তি জানানোয় তাঁকে বের করে দেওয়া হয়েছে।
খুলনা জেলার মাত্র দুটি পৌরসভার চালনা একটি। পৌরসভায় মোট ভোটার ১২ হাজার ১০০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৫ হাজার ৮৬৩ এবং নারী ভোটার ৬ হাজার ২৩৭ জন। পৌরসভার নয়টি সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ২৭ জন এবং তিনটি সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ১০ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
বেলা ১১টায় খুলনা আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ইউনুচ আলী সাংবাদিকদের বলেন, ‘উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট চলছে। প্রত্যন্ত এই অঞ্চলেও ইভিএমে ব্যাপক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। সব কেন্দ্রে আমরা ঘুরেছি। এখনো পর্যন্ত কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার খবর আমাদের কাছে নেই।’