রাজশাহীর চারঘাটের বড়বড়িয়া বেলতলী গ্রামের মিঠনকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর ‘মাদকসেবী’ ও ‘মাদক ব্যবসায়ী’ বানিয়ে মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ। তবে তাঁর মা গঞ্জেরা বেগম ডোপ টেস্ট করিয়ে নিশ্চিত হন, ছেলে মাদকসেবী নন। এই অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় রাজশাহীর পুলিশ সুপার (এসপি) ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন।
ওই পুলিশ কর্মকর্তার নাম মুকুল চন্দ্র বিশ্বাস। তিনি চারঘাট থানায় সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তাঁকে প্রত্যাহার করে গতকাল মঙ্গলবার রাজশাহী জেলা পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করার খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন রাজশাহীর এসপি মো. শহীদুল্লাহ।
মিঠনের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এএসআই মুকুল গত ২ অক্টোবর মিঠনকে ধরে নিয়ে যান। এই পুলিশ কর্মকর্তা তখন দাবি করেন, মিঠন মাদকসেবী ও মাদক ব্যবসায়ী। মিঠনকে আটকের পর চারঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সমিত কুমার কুন্ডুও বলেছিলেন, এই যুবক একজন মাদকসেবী। চারঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গিয়ে তাঁর পরীক্ষা করানো হয়েছে। পরে মাদক সেবনের ধারায় মামলা দিয়ে পরের দিন তাঁকে আদালতে সোপর্দ করা হয়।
মিঠনের মা গঞ্জেরা বেগমের দাবি, ছেলেকে আটকের পর ২ অক্টোবর রাতে এএসআই মুকুল তাঁর কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। এই টাকা না দিলে তাঁর ছেলেকে ২০০ পিস ইয়াবা বড়ি দিয়ে আদালতে চালান দেওয়া হবে। ছেলেকে পেটানো হবে। তিনি আত্মীয়-স্বজনের কাছে দৌড়াদৌড়ি করেও টাকার ব্যবস্থা করতে পারেননি। টাকা চাওয়ার সময় চারঘাট উপজেলার ভায়ালক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য হাওয়া খাতুন উপস্থিত ছিলেন বলে তিনি দাবি করেন।
জানতে চাইলে হাওয়া খাতুন বলেন, তাঁর সামনেই এএসআই মুকুল ৫০ হাজার টাকার জন্য গঞ্জেরা বেগমকে চাপ দিচ্ছিলেন। খারাপ কথাও বলছিলেন। টাকা না দিলে মিঠনের বাড়িতে মাদক রেখে পরে আবার মাদকসহ ধরার হুমকিও দেন।
গত ৬ অক্টোবর মিঠন আদালত থেকে জামিন পান। পরের দিন তিনি কারাগার থেকে ছাড়া পান। মিঠনের মা গঞ্জেরা বেগম দাবি করেন, কারাগার থেকে বের হওয়ার পর ছেলের কাছে তিনি জানতে চান, সে মাদক সেবন করে কিনা। ছেলে মাদক সেবন করার কথা অস্বীকার করেন। তারপরও মা ছেলেকে নিয়ে রাজশাহী মাদক নিরাময় কেন্দ্রে গিয়ে ডোপ টেস্ট করান। এতে নিশ্চিত হন, তাঁর ছেলে মাদকসেবী না।
কারাগার থেকে বের হওয়ার পর মিঠন দাবি করেন, চারঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তাঁর কাছে কিছু জানতে চাওয়া হয়নি। তাঁর কোনো পরীক্ষাও করা হয়নি। তাঁকে দেখে চিকিৎসক শুধু একটি কাগজে সিল দিয়ে সই করে দেন। তবে চারঘাট থানার ওসি তাঁকে আটকের দিন বলেছিলেন, চারঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তাঁর পরীক্ষা করানো হয়েছে। সেখানেই ধরা পড়ে তিনি মাদকসেবী।
পুলিশ সূত্র জানায়, বিষয়টি রাজশাহীর এসপির কানে যায়। তিনি ঘটনা তদন্তের জন্য পুলিশ পাঠান। তাঁরা প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হন যে এই যুবক মাদক সেবন করেন না। মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পর্ক নেই। এরপর এসপি ওই এএসআইয়ের বিরুদ্ধে অভ্যন্তরীণ তদন্তের নির্দেশ দেন। তদন্ত শেষে গতকাল এএসআই মুকুল চন্দ্র বিশ্বাসকে চারঘাট থানা থেকে প্রত্যাহার করে রাজশাহী পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়।
আজ বুধবার এ বিষয়ে চারঘাটের ওসি সমিত কুমার কুন্ডু বলেন, সাধারণত আটকের পর চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেলে মাদকসেবীরা নিজেই স্বীকার করেন। সেই স্বীকারোক্তির ভিত্তিতেই চিকিৎসক মাদকাসক্ত বলে সই করে দেন। এটাই রেওয়াজ। রাতে টাকা চাওয়ার অভিযোগ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘অনেক সময় ভয় দেখিয়ে সত্য কথা বের করার জন্য পুলিশ এমন চাপ দিতে পারেন।’
রাজশাহীর এসপি মো. শহীদুল্লাহ বলেন, তিনি ঘটনাটি জানতে পেরে তদন্তের ব্যবস্থা করেন। অভিযোগের সত্যতা পান। ওই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এখন বিভাগীয় মামলা প্রক্রিয়াধীন আছে।