চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (চাকসু) নীতিমালা বা গঠনতন্ত্র পর্যালোচনা কমিটি তৈরির মধ্য দিয়ে নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ। এই কমিটির মাধ্যমেই দীর্ঘ ২৯ বছরের অচলায়তন ভাঙতে যাচ্ছে চাকসু।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে পাঁচ সদস্যের ওই কমিটি গঠন করা হয়। এতে আহ্বায়ক হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের ডিন মোহাম্মদ সফিউল আলম, সদস্যসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ডেপুটি রেজিস্ট্রার (নির্বাচন ও বিধিবিধান) মোহাম্মদ ইউসুফ এবং সদস্য হিসেবে থাকবেন আইন অনুষদরে ডিন এ বি এম আবু নোমান, লোকপ্রশাসন বিভাগের সভাপতি আমীর মুহাম্মদ নসরুল্লাহ ও সহকারী প্রক্টর লিটন মিত্র।
কমিটি গঠনের বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এ কমিটি গঠনের মধ্যে দিয়েই নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে। কমিটি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা পর্যালোচনা করে চাকসুর জন্য একটি আধুনিক নীতিমালা তৈরি করবে।
কমিটির আহ্বায়ক ও বিজ্ঞান অনুষদের ডিন মোহাম্মদ সফিউল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘মৌখিকভাবে কমিটি গঠনের কথা শুনেছি। আগামী রোববার থেকে কমিটি কাজ শুরু করবে। প্রাথমিকভাবে চাকসুর নীতিমালা পর্যালোচনা করা হবে। পাশাপাশি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের নীতিমালাগুলোর আলোকে একটি আধুনিক নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে। এ ছাড়া প্রয়োজনে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকেও মতামত নেওয়া হবে।’
১৯৯০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি সর্বশেষ চাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর পার হয়েছে ২৯ বছর। কিন্তু চাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠানের কোনো দায়িত্ব নেয়নি কর্তৃপক্ষ। এই নির্বাচনের দাবিতে ছাত্রলীগসহ অন্যান্য ছাত্রসংগঠনগুলো দীর্ঘদিন ধরে কর্মসূচি পালন করে আসছে।
চাকসুর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রতি শিক্ষাবর্ষে একবার এই নির্বাচন হবে। মেয়াদ হবে এক বছর। ১৯ সদস্যের চাকসুর কমিটিতে উপাচার্য পদাধিকারবলে সভাপতি। কোষাধ্যক্ষ পদটি শিক্ষকদের মধ্য থেকে একজন মনোনীত করবেন উপাচার্য। বাকি ১৭টি পদ ছাত্রদের। তাঁরা ছাত্রদের ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হবেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ-১৯৭৩-এর ২২ ধারা অনুযায়ী, সিনেটের ১০১ সদস্যের ৫ জন হবেন ছাত্র প্রতিনিধি। কিন্তু চাকসু না থাকায় সিনেটে কোনো ছাত্র প্রতিনিধি নেই। ফলে ছাত্র প্রতিনিধি ছাড়াই প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হচ্ছে সিনেট সভা।
১৯৬৬ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর প্রথম চাকসু নির্বাচন হয় ১৯৭০ সালে। ওই নির্বাচনে সহসভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন যথাক্রমে মো. ইব্রাহিম ও মো. আবদুর রব। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হন আবদুর রব। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু সরকারের আমলে ১৯৭১-৭২ এবং ১৯৭২-৭৩ সালে চাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর জিয়াউর রহমানের আমলে দুবার এবং এরশাদের আমলে একবার নির্বাচন হয়। এরশাদের পতনের পর থেকে আর নির্বাচন হয়নি।