বাঁশ কেটে তার ওপর রংতুলির আঁচড় দিচ্ছিলেন সুপন চাকমা (৩৬)। কিছুক্ষণের মধ্যেই একটুকরা বাঁশ চোখজুড়ানো ফুলদানির রূপ নিল। খাগড়াছড়ির দীঘিনালার পুলিন হেডম্যান পাড়া গ্রামের এই যুবক বাঁশ দিয়ে নানা রকম শিল্পকর্ম তৈরিতে পটু।
২০১৭ সালে দীঘিনালা সরকারি কলেজ থেকে স্নাতক পাস করেছেন সুপন। এরপর সবার মতো চাকরির পেছনে না ছুটে উদ্যোক্তা হিসেবে তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। পাহাড়ের সহজলভ্য বাঁশ চেঁচে–ছুলে বানিয়ে ফেলেন ফুলদানি, ট্রে, চায়ের কাপসহ ঘর সাজানোর বিভিন্ন উপকরণ। তাই শুধু উদ্যোক্তা নয়. সুপনকে শিল্পী বললেও ভুল হবে না।
সুপন প্রথম আলোকে বলেন, স্নাতক শেষ করার পর প্রায় দুই বছর তিনি কৃষিকাজ শুরু করেছিলেন। পরে এক বন্ধুর পরামর্শে ২০২১ সালে রাঙামাটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠি সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটে বাঁশের হস্তশিল্প তৈরির প্রশিক্ষণ নেন। ওই বছরের ডিসেম্বর থেকে পুরোদমে বাঁশের শিল্পকর্ম তৈরির কাজ শুরু করেছেন। অল্প সময়ের মধ্যে তাঁর তৈরি শিল্পকর্মগুলো বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
‘জুমঘর’ নামে একটি ফেসবুক পেজের মাধ্যমে ক্রেতাদের কাছে পণ্য পৌঁছে দেন সুপন। আবার অনেক সময় বিভিন্ন অনলাইন ব্যবসায়ীরা সুপনের বাড়িতে এসে পণ্য কিনে নিয়ে যান। সব খরচ বাদ দিয়ে এখন সুপন প্রতি মাসে প্রায় ২০ হাজার টাকা আয় করেন।
সুপনের সঙ্গে যেদিন আলাপ হয়েছিল, সেদিনও তাঁর বাড়িতে এন্টি চাকমা নামের এক নারী ব্যবসায়ী পণ্য কিনতে এসেছিলেন। এন্টি চাকমা বলেন, ‘সুপন চাকমার তৈরি পণ্যগুলো মানে ভালো ও দেখতেও সুন্দর। আমি তাঁর বাড়ি থেকে পণ্য কিনে “ধবি দোল কালেশন” নামের পেজ থেকে অনলাইনে বিক্রি করি। দেশের বিভিন্ন এলাকার মানুষ এসব পণ্য কেনেন। অনেক সময় তাঁরা পণ্যের জন্য আগাম ফরমাশ (অর্ডার) দিয়ে রাখেন।’
সুপন বলেন, মূলত রাজা বাঁশ বা কাঞ্চন বাঁশ দিয়ে এসব পণ্য তৈরি করেন তিনি। তবে এসব বাঁশ দীঘিনালা বা খাগড়াছড়িতে পাওয়া যায় না। তিনি রাঙামাটি থেকে বাঁশ সংগ্রহ করেন।
সুপন জানালেন, ট্রে, ফুলদানি, ঐতিহ্যবাহী জুমঘরের ছোট সংস্করণ, চায়ের কাপের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। এর মধ্যে ট্রে ৬০০ টাকা, ফুলদানি ৪০০ টাকা ও জুমঘর ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি করেন তিনি।
চাকরি না পেলে বেকার যুবকদের হতাশ না হয়ে উদ্যোক্তা হওয়ার পরামর্শ দেন সুপন। তাঁর মতে, হাত গুটিয়ে না বসে থেকে হস্তশিল্পের প্রশিক্ষণ নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ। এরপর অল্প পুঁজিতে সহজেই ব্যবসা শুরু করা যায় বলে মনে করেন তিনি।