‘চাইল ডাইল তেল লবণ পাইছি, আইজ রাইতে ভাত খাইমু’

সিলেট সদর উপজেলার দর্শা গ্রামে আজ রোববার দুপুরে প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে ২০০ জনের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করা হয়। ত্রাণ পেয়ে উচ্ছ্বসিত হয়ে বাড়ি ফেরেন সূর্যবান বেগম
ছবি: প্রথম আলো

‘মাইনষের দেওয়া খিচুড়ি আর চিড়া খাইয়া দিন কাটছে। পেট ভরিয়া ভাত খাই না কত দিন! আইজ চাইল ডাইল তেল লবণ পাইছি, আইজ রাইতে ভাত খাইমু।’

কথাগুলো সিলেট সদর উপজেলার কান্দিগাঁও ইউনিয়নের দর্শা গ্রামের সূর্যবান বেগমের (৭০)। আজ রোববার বেলা দুইটায় প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে বিতরণ করা ত্রাণ পেয়ে তিনি এসব কথা বলেন। তিনিসহ গ্রামের ২০০ জনের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়।

সূর্যবান বেগম জানান, তাঁর স্বামী গোলাম আলী আট বছর আগে মারা যান। তিন ছেলে তাঁর। তিনি থাকেন বড় ছেলে পঞ্চাশোর্ধ্ব রহমান আলীর সঙ্গে। সেখানে বড় ছেলে ও তাঁর স্ত্রী এবং এক ছেলে ও এক মেয়ে আছে। ছেলে পেশায় দিনমজুর। বন্যায় তাঁদের ঘরে বুকপানি হলে একটা আশ্রয়কেন্দ্রে সবাই স্থান নেন। এখন পানি নেমে গেলে বাড়ি ফিরেছেন। তবে প্রচণ্ড খাবারসংকটে পড়েছেন। এই ত্রাণ পেয়ে তাঁদের উপকার হয়েছে।

দর্শা মসজিদ প্রাঙ্গণে ত্রাণ নিতে আসা প্রত্যেকের হাতে পাঁচ কেজি করে চাল, এক লিটার সয়াবিন তেল, এক কেজি মসুর ডাল, এক কেজি আটা, এক কেজি লবণ, ১০০ গ্রাম গুঁড়া মরিচ ও ১০০ গ্রাম গুঁড়া হলুদ তুলে দেওয়া। বিপাকে পড়া সময়ে ত্রাণ পেয়ে উচ্ছ্বসিত হন মানুষজন। এ সময় ত্রাণ পাওয়া অনেকে প্রথম আলো বন্ধুসভার সদস্যদের মাথা-কপালে হাত বুলিয়ে প্রথম আলো ট্রাস্টের জন্য দোয়া করেন।

ত্রাণ বিতরণকালে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সমাজকর্মী নূরুল ইসলাম, প্রথম আলো বন্ধুসভা সিলেটের সাধারণ সম্পাদক অন্তর শ্যাম, সাংগঠনিক সম্পাদক মিহরাব আহমেদ চৌধুরী, পাঠাগার ও পাঠচক্রবিষয়ক সম্পাদক দৃষ্টি রানী বর্মণ, ম্যাগাজিনবিষয়ক সম্পাদক বৃষ্টি বর্মণ, সদস্য মোহাম্মদ আবদুল মোহাইমিন প্রমুখ।

বিপাকে পড়া সময়ে ত্রাণ পেয়ে উচ্ছ্বসিত হন মানুষজন। সিলেট সদর উপজেলার দর্শা গ্রামে

সমাজকর্মী নূরুল ইসলাম বলেন, যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রথম আলো সব সময়ই অসহায় ও বিপাকে পড়া মানুষের পাশে দাঁড়ায়। এবারও ব্যতিক্রম হয়নি। এবার বন্যা শুরু হওয়ার পর থেকেই প্রথম আলো সিলেটের বন্যাকবলিত মানুষের দুঃখ-দুর্দশার চিত্র অতিযত্নের সঙ্গে উপস্থাপন করেছে। এখন অসহায় মানুষের হাতে খাদ্যসহায়তাও তুলে দিচ্ছে। এ পত্রিকাটি সংবাদ পরিবেশনের পাশাপাশি সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেও কাজ করে চলেছে।

ত্রাণ পেয়ে বাড়ি ফেরার সময় ষাটোর্ধ্ব মাদারেস আলী জানান, তিনি অসুস্থ থাকায় কাজ করতে পারেন না। তাঁর একমাত্র ছেলে ফাহিম হোসেন স্থানীয় একটা বিস্কুটের কারখানায় কাজ করে সংসার চালান। ছেলের সামান্য আয়েই সংসার চলে। বন্যায় তাঁর ঘরে বুকপানি হয়। এই দুঃসময়ে খাবারের সংকটে পড়েছেন। এখন প্রথম আলো ট্রাস্টের ত্রাণ পেয়ে তাঁর আগামী কয়েক দিনের দুশ্চিন্তা দূর হয়েছে।

বন্যার্তদের সহায়তায় এগিয়ে আসুন

বন্যার্ত মানুষের সহযোগিতায় আপনিও এগিয়ে আসতে পারেন। সহায়তা পাঠানো যাবে ব্যাংক ও বিকাশের মাধ্যমে। হিসাবের নাম: প্রথম আলো ট্রাস্ট/ত্রাণ তহবিল, হিসাব নম্বর: ২০৭২০০১১১৯৪, ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড, কারওয়ান বাজার শাখা, ঢাকা। অথবা বিকাশে পেমেন্ট করতে পারেন: ০১৭১৩০৬৭৫৭৬ এই মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট নম্বরে। এ ছাড়া বিকাশ অ্যাপের ডোনেশনের মাধ্যমেও আপনার সহযোগিতা পাঠাতে পারেন।