হর্টিকালচার সেন্টারের পরীক্ষামূলক চাষে সাফল্য ও সম্ভাবনা দেখে এবার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অধীনে ‘বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্প’-এর সহায়তায় হর্টিকালচার সেন্টার লটকনের দুই হাজার কলমের চারা উৎপাদন করেছে। লটকনের সম্প্রসারণের উদ্দেশ্যে এগুলো আগ্রহী কৃষকদের মধ্যে দেওয়া হবে।
হর্টিকালচার সেন্টারের উপপরিচালক উদ্যানতত্ত্ববিদ সাইফুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রায় ৩২ হাজার হেক্টর আমবাগানের অর্ধেকেও যদি গাছের ফাঁকে ফাঁকে লটকনের গাছ লাগানো যায়, তবে শতকোটি টাকার বেশি আয় হতে পারে। তিনি এর ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে মোট আমগাছের সংখ্যা ২৬ লাখ। এর অর্ধেক অর্থাৎ ১৩ লাখ গাছের মধ্যে চারটি গাছের ফাঁকে ফাঁকে লটকনগাছ লাগালে গাছের সংখ্যা দাঁড়ায় পাঁচ লাখ। এ ছাড়া জেলার প্রায় আড়াই লাখ কৃষক পরিবারের বসতবাড়িতেও একটি করে লটকনগাছ লাগানো সম্ভব। ১০–১২ বছরের একটি গাছে ৪০ কেজির মতো লটকনের ফলন হতে পারে। আর তিন-চার বছরের গাছেই ফলন দিতে শুরু করে।
সাইফুর রহমান বলেন, ‘আমরা হিসেব করে দেখেছি, আমবাগানগুলোতে লটকনের চাষ করা গেলে বছরে ২০০ কোটি টাকার লটকন উৎপাদিত হতে পারে। আধো আলো আধো ছায়ায় স্যাঁতসেঁতে মাটিতেই লটকন ভালো ফলে। সেই হিসেবে আমবাগানে সাথি ফসল হিসেবে লটকন চাষের অপার সম্ভাবনা রয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জে। এ ছাড়া লটকনও পাকে জুন মাসে। আমের মৌসুমে আমবাগানগুলোতে যে শ্রমিকেরা নিয়োজিত থাকেন, তাঁদের দিয়েই লটকনের পরিচর্যা ও গাছ থেকে লটকন সংগ্রহের কাজ করানো যাবে। আলাদা শ্রমিক নিযুক্ত করতে হবে না। এতে করে লটকন থেকে অতিরিক্ত আয় হবে। কয়েক বছর ধরে যেভাবে আমচাষিদের দুর্দিন চলছে, তাতে হতাশ হয়ে অনেকেই বাগানের আমগাছ কেটে ফেলার চিন্তা করছেন। সে ক্ষেত্রে লটকন চাষ আমচাষিদের আমবাগানে আয় বৃদ্ধির জন্য একটি বড় সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
সাইফুর রহমান আরও বলেন, বিশ্বের ৬৭৫টি অপ্রচলিত ফলের মধ্যে লটকন অন্যতম। লটকন একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফল। লটকনের রস মিষ্টি ও শ্বাস সামান্য টক। এটি আর্থরাইটিস, ফোড়া ও চর্মরোগের জন্য দারুণ উপকারী। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতেও ভালো কাজ করে। দক্ষিণ এশিয়ার এ ফল ভারত ও মালয়েশিয়ায় প্রচুর উৎপাদিত হয়। দেশের মধ্যে নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ ও পঞ্চগড়ে লটকনের চাষ হয়। অথচ আমবাগানের মধ্যে সাথি ফসল হিসেবে এর উজ্জ্বল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও¡চাঁপাইনবাবগঞ্জে এ ফলের চাষ হয় না। হর্টিকালচার সেন্টার থেকে লটকন চাষকে জনপ্রিয় করার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হবে।