জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে স্থানীয় সাংসদ মুরাদ হাসানের অনুসারীদের চাঁদা না দেওয়ায় গোয়ালবাতান এলাকায় খাল খনন প্রকল্পের কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গত মঙ্গলবার সকাল থেকে আজ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত খাল খননের কাজ বন্ধ আছে বলে জানা গেছে।
আওনা ইউনিয়ন পরিষদ ও খাল খনন প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আওনা ইউনিয়নের কাবাডিয়াবাড়ী স্লুইসগেট থেকে গোয়ালবাতান বরবাইদ পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার খাল খননের কাজের জন্য ৬৬ লাখ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। চলতি বছরের ১৪ মার্চ থেকে খাল খনন প্রকল্পের কাজ শুরু করা হয়েছে।
এর মধ্যে খাল খননের কাজে অনিয়মের অভিযোগ তুলে মঙ্গলবার স্থানীয় সাংসদের অনুসারীরা বরবাইত পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলামের কাছে গিয়ে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
নুরুল ইসলাম বলেন, জামালপুর-৪ (সরিষাবাড়ী) আসনের স্থানীয় সাংসদ এবং সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানের অনুসারী রিপন মিয়া, বাবলু মিয়া, নজরুল ইসলাম তাঁদের কাছে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না দেওয়ায় মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় খাল খননের কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চাঁদা চাওয়া নিয়ে ওই দিন বরবাইত পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি হাফিজুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলামের সঙ্গে সাংসদ মুরাদের অনুসারী রিপন মিয়ার বাগ্বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে আওনা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আবু বক্কর সিদ্দিক ও তাঁর সহযোগীরা মোটরসাইকেল নিয়ে এসে গোয়ালবাতান সেতুর পূর্বপাশে ফাঁকা গুলি নিক্ষেপ করে। এ সময় পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
জানতে চাইলে রিপন মিয়া, বাবলু মিয়া ও নজরুল ইসলাম—তিনজনই চাঁদা দাবির অভিযোগ অস্বীকার করেন। রিপন মিয়া বলেন, ‘নিয়মমাফিক কাজ না হওয়ায় এলাকার লোকজনের দাবি অনুযায়ী খননকাজ ঠিকমতো করার জন্য বলা হয়েছিল। এটা বলাতেই তাঁরা আমাদের ওপর ক্ষিপ্ত হন। আমরা কোনো চাঁদা দাবি করিনি। একপর্যায়ে আবু বক্কর সিদ্দিক ও তাঁর সহযোগীরা মোটরসাইকেল নিয়ে ফাঁকা গুলি করলে আমরা সেখান থেকে চলে আসি।’
গুলি নিক্ষেপের বিষয়ে জানতে চাইলে আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ‘রিপন, বাবুল, নজরুল দল বেঁধে ধাওয়া করেছিল। জীবন বাঁচাতেই কাজটি করেছি। এটা পত্রিকায় দিয়েন না।’
এ ব্যাপারে আওনা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান বেল্লাল হোসেন বলেন, খাল খনন প্রকল্পের কাজে সাংসদ মুরাদের অনুসারী রিপন, নজরুল, বাবলুর নেতৃত্বে বরবাইত পানি ব্যাবস্থাপনা সমিতি লিমিটেডের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের চাঁদা দাবি করা হয়েছে। চাঁদা না দেওয়ায় খাল খননকাজ বন্ধ আছে।
জানতে চাইলে তারাকান্দি পুলিশি তদন্তকেন্দ্রের পরিদর্শক (তদন্ত) আবদুল লতিফ বলেন, মঙ্গলবার সকালে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে পিস্তলের গুলি হয়েছে কি না, সেটা তিনি জানেন না। এ ব্যাপারে অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।