চন্দন বড়ুয়ার রিলিফ ভাস্কর্য

নিজ বাড়ির উঠানে কাঠের রিলিফ তৈরি করছেন চন্দন বড়ুয়া। গত সোমবার সকালে। প্রথম আলো
নিজ বাড়ির উঠানে কাঠের রিলিফ তৈরি করছেন চন্দন বড়ুয়া। গত সোমবার সকালে।  প্রথম আলো

গৌতম বুদ্ধ, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম কিংবা মাদার তেরেসার অবিকল প্রতিকৃতি কাঠের ওপর ফুটিয়ে তোলেন তিনি। চারুকলার কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই তাঁর। তবু শিল্প সৃষ্টিতে কোনো কিছুই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। চন্দন বড়ুয়া নামের এই নিভৃতচারী শিল্পীর বসবাস খাগড়াছড়ির দীঘিনালায়। শিল্পকর্ম বিক্রির পাশাপাশি সংসার চালাতে কাপড়ের ব্যবসাও করেন তিনি।

দীঘিনালার বোয়ালখালী সদর ইউনিয়নের পশ্চিম কাঁঠালতলী গ্রামে টিনের ছাউনি দেওয়া ঘরে বসবাস করেন চন্দন বড়ুয়া। বাবা-মা, স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে সংসার তাঁর। গত সোমবার তাঁর বাড়ি গিয়ে দেখা গেল, ঘরের আঙিনায় পাটি বিছিয়ে ছেনি হাতুড়ি নিয়ে কাঠ খোদাই করছেন।

কার ছবি ফুটিয়ে তুলছেন—জানতে চাইলে চন্দন বলেন, কাঠের ওপর অধ্যক্ষ জ্ঞানশ্রী মহাস্থবিরের রিলিফ ভাস্কর্য করছেন তিনি। এ ধরনের আরও তিনটি ছবির ফরমাশ পেয়েছেন। এটি শেষ হলে সেগুলোতে হাত দেবেন।

চন্দন বড়ুয়ার বাড়িতে ঢুকতেই দেখা গেল, কাঠের তৈরি নানা ভাস্কর্য ছড়িয়ে আছে নানা ঘরময়। এর মধ্যে নজরুলের ভাস্কর্যটি দেখে থমকে দাঁড়াতে হয়। পাশাপাশি হাতি, হরিণসহ নানা ধরনের প্রাণীর ভাস্কর্যও শোভা ছড়াচ্ছে। 

চন্দন বড়ুয়া জানালেন, বোয়ালখালী বাজারে তৈরি পোশাকের ছোট্ট একটি দোকান আছে তাঁর। ভোর ছয়টা থেকে সকাল দশটা পর্যন্ত কাঠ খোদাইয়ের কাজ করেন বাড়িতে। সকাল দশটার পর বাজারে দোকান খোলেন তিনি। 

কাপড়ের ব্যবসার পাশাপাশি রিলিফ ভাস্কর্য করে সংসার চালান চন্দন
কাঠের ওপর ফুটিয়ে তোলেন শিল্পকর্ম

 কী করে কাঠ খোদাই করা শিখলেন—জানতে চাইলে চন্দন বড়ুয়া জানালেন, অভাবের কারণে দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় ১৯৯৮ সালে পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায় তাঁর। লেখাপড়া ছেড়ে গিয়ে ওঠেন কদলপুর ভিক্ষু প্রশিক্ষণকেন্দ্রে। তখন ওই আশ্রমে ফাদার লুই নামে এক ব্যক্তি তাঁকে ভাস্কর্য তৈরির কাজ শিখতে অনুপ্রেরণা দেন। ফাদার লুইয়ের আর্থিক সাহায্যে চট্টগ্রাম পাথরঘাটা নজু মিয়া লেইনের রাধু বড়ুয়ার কাছে দুই বছর কাজ শেখেন তিনি। তিন বছরের প্রশিক্ষণের মেয়াদ ছিল তাঁর। তবে দুই বছরেই কাজ রপ্ত করে ফেলেন চন্দন। এরপর চলে আসেন দীঘিনালায়। বাজারে কাপড়ের ব্যবসার পাশাপাশি শুরু করেন ভাস্কর্য তৈরির কাজ।

চন্দন বড়ুয়া বলেন, এক–একটি রিলিফ ভাস্কর্য আকারভেদে তিন হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকায় বিক্রি করেন তিনি। একবার কাজ ধরলে শেষ করতে লাগে সাত থেকে দশ দিন।

চন্দন বড়ুয়ার কাছে কাঠের ওপর রিলিফ ভাস্কর্য তৈরি করে দেওয়ার ফরমাশ দিয়েছেন বিটন বড়ুয়া। তিনি বলেন, চন্দনের কাজ অসাধারণ। যেকোনো কারও মুখ হুবহু কাঠের গায়ে খোদাই করে ফুটিয়ে তুলতে পারেন তিনি। গাছের গুঁড়ি কেটে ত্রিমাত্রিক ভাস্কর্যও তৈরি করতে পারেন। 

চন্দন বড়ুয়া প্রথম আলোকে বলেন, কাপড়ের ব্যবসার পাশাপাশি কাঠের ওপর রিলিফ ভাস্কর্য তৈরি করে তাঁর সংসার ভালোই চলছে। তবে রিলিফ ও ভাস্কর্য তৈরির বিশেষায়িত যন্ত্র নেই তাঁর কাছে।

চন্দন বলেন, সাধারণ কাঠমিস্ত্রিরা যে ধরনের ছেনি-বাটালি দিয়ে কাজ করেন, তিনিও সেসব যন্ত্র ব্যবহার করে কাঠ খোদাই করেন। সহায়তা পেলে ভাস্কর্য তৈরির সূক্ষ্ম যন্ত্রপাতি কিনবেন তিনি। তৈরি করবেন নিজের একটি স্টুডিও।