দুই দফা মারামারির পর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের (চমেক) ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন। আজ শুক্রবার সকাল থেকে তাঁরা কাজ বন্ধ রেখে ধর্মঘট পালন করছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে চট্টেশ্বরী সড়কের চমেক ছাত্রাবাস এবং সংলগ্ন এলাকায় ইন্টার্ন চিকিৎসকদের এবং ছাত্রলীগের দুপক্ষে মারামারি হয়।
রাতে ছাত্রাবাসসংলগ্ন গুলজার মোড়ে মারামারির ঘটনায় চমেক ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের (আইডিএ) আহ্বায়ক ওসমান গনিসহ তিনজন আহত হন। তাঁদের মধ্যে ওসমান এখন চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এই হামলার জন্য দুপক্ষ পরস্পরকে দায়ী করেছে। এর মধ্যে একটি পক্ষ শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর এবং অপর পক্ষটি সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী।
ওসমান গনিরা নাছিরপন্থী। ইন্টার্ন চিকিৎসকদের মধ্যে তাঁদের পাল্লাটা ভারী। রাতে মারামারির পর তাঁরা শুক্রবার সকাল থেকে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ধর্মঘটের ডাক দেয়। সকাল থেকে তাঁরা ক্যাম্পাসে মিছিল সমাবেশ করতে থাকেন। ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকে বাঁশ দিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। একপর্যায়ে পুলিশ এসে তা তুলে দেয়।
এ ব্যাপারে আইডিএ এর যুগ্ম আহ্বায়ক আবিদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিকেলে প্রথম দফা হোস্টেলে ঢুকে আমাদের ওপর বহিরাগত গ্রুপটি হামলা করে। ওই ঘটনায় রাতে চকবাজার থানায় অভিযোগ দিয়ে ফেরার সময় গুলজার মোড়ে আমাদের ওপর হামলা হয়। এতে ওসমানসহ চার পাঁচজন আহত হয়। এর প্রতিবাদে আমরা অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট আহ্বান করেছি।’
ধর্মঘটের কারণে কোনো চিকিৎসক কাজে যোগ দেননি। এক মাস ধরে চমেক হাসপাতালে ৮৬ জন ইন্টার্ন চিকিৎসক সেবায় নিযুক্ত রয়েছেন। গত মার্চে যোগদানের কথা থাকলেও করোনার অজুহাতে তাঁরা এত দিন কাজে অংশ নেননি। করোনা সংক্রমণের সময় ইন্টার্ন চিকিৎসক ছাড়া চলেছে চমেক হাসপাতাল।
হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ূন কবীর প্রথম আলোকে বলেন, ‘জুলাই মাসে হাসপাতালে ইন্টার্নরা আসেন। এত দিন করোনার কারণে তাঁরা আসেননি। বর্তমানে ৮৬ জন কর্মরত। আরও কয়েকজন কিছুদিনের মধ্যে যোগ দেবেন। তাঁদের নিজেদের মধ্যে মারামারির ঘটনায় ধর্মঘটে গেছেন। আমি প্রশাসনকে জানিয়েছি। ইন্টার্নদের বলেছি যেন নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করে। রোগীদের যেন সমস্যা না হয়। ইন্টার্ন ছাড়া এতদিন চালিয়েছি। ধর্মঘটের জন্য সেবা ব্যাহত হবে না।’
চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রুহুল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, বিকেলের পর রাতে আবার দুপক্ষে মারামারি হয়। এর পর পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। কোনো পক্ষ মামলা করেনি। ইন্টার্ন চিকিৎসকদের হোস্টেলে জায়গা না হওয়ায় কয়েকজন চিকিৎসককে চমেক প্রধান ছাত্রাবাসে রাখা হয়েছে। সেখানে মারামারি ঘটনা ঘটে।
ইন্টার্ন চিকিৎসকদের পাশাপাশি কলেজ ছাত্রলীগ মিলে দুটি পক্ষ বেশ কিছুদিন ধরে ক্যাম্পাসে ঝগড়াবিবাদ করছে। এর আগে গত ১২ জুলাই দুই পক্ষের মধ্যে ক্যাম্পাসে মারামারি হয়। গতকাল আবার দুই পক্ষে মারামারির ঘটনা ঘটল। এ ঘটনায় চকবাজার থানায় একপক্ষ অভিযোগ দিয়েছে। এর আগে জুলাইয়ের ঘটনায় পাল্টাপাল্টি মামলা হয়েছিল। ক্যাম্পাস ও ছাত্রাবাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।