বাসা থেকে স্কুল কিংবা মাদ্রাসায় যাওয়া-আসা করতে শিক্ষার্থীদের একপ্রকার যুদ্ধে নামতে হয়। ঝুঁকি নিয়ে উঠতে হয় বাস কিংবা টেম্পোতে। এবার সেই দুর্ভোগ থেকে তাদের ‘মুক্তি’ মিলছে। আগামীকাল রোববার থেকে চট্টগ্রাম নগরে শিক্ষার্থীদের জন্য নামছে ১০টি দ্বিতল বাস। দুই রুটে দিনের দুই বেলায় চলবে এসব বাস। মাত্র পাঁচ টাকা ভাড়া দিয়ে শিক্ষার্থীরা এই বাসগুলোতে চড়তে পারবে।
এই ‘স্টুডেন্ট বাস’ সেবা চালু হলে একদিকে যেমন শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ ও পরিবহন ব্যয় কমবে, অন্যদিকে গণপরিবহনের ওপর চাপও কমে আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
২০১৮ সালে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময় চট্টগ্রামের শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা বাসসেবা চালুর দাবি উঠেছিল। সেই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৯ সালের ১৫ এপ্রিল শিক্ষার্থীদের জন্য ১০টি বাস বরাদ্দের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এত দিন ধরে দ্বিতল বাসের চালকসংকট ও পরিবহন ব্যয় সংস্থানের কারণে বিষয়টি এত দিন ঝুলে ছিল। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মাসিক বিজ্ঞাপন চুক্তি হওয়ার পর সেই সমস্যা দূর হয়েছে।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি) সূত্র জানায়, দ্বিতল এই বাসগুলোর প্রতিটিতে ৭৩টি করে আসন রয়েছে। প্রথম থেকে এসএসসি ও সমমানের শিক্ষার্থীরা তাদের পরিচয়পত্র দেখিয়ে এসব বাসে উঠতে পারবে। ভাড়া নেওয়ার জন্য বাসগুলোতে থাকবে না কোনো চালকের সহকারী। বাসের সামনে ও পেছনে সংরক্ষিত তালাবন্দী ‘সততা বাক্সে’ ভাড়া দিয়ে শিক্ষার্থীরা নির্ধারিত গন্তব্যে যাতায়াত করবে।
কোথায় থেকে কোথায় যাবে
১০টি বাস সকাল ও বিকেল—এই দুই দফায় দুটি রুটে চলাচল করবে। এর মধ্যে পাঁচটি বহদ্দারহাট থেকে ছেড়ে বাদুড়তলা, মুরাদপুর, চকবাজার, গণি বেকারি, জামালখান, চেরাগী পাহাড়, আন্দরকিল্লা, কোতোয়ালি হয়ে নিউমার্কেট মোড়ে যাবে। আবার একইভাবে বহদ্দারহাট মোড়ে ফিরে আসবে। অন্যদিকে বাকি পাঁচটি বাস অক্সিজেন থেকে মুরাদপুর, ২ নম্বর গেট, জিইসি মোড়, ওয়াসা, টাইগারপাস হয়ে আগ্রাবাদ যাবে। একইভাবে অক্সিজেনে ফিরে যাবে। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে থেমে শিক্ষার্থীদের ওঠানো-নামানো করা হবে।
স্টুডেন্ট বাস তদারকি কমিটির প্রধান ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. আবু হাসান সিদ্দিক প্রথম আলোকে বলেন, পৃথক বাস সার্ভিস চালুর জন্য শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। শিক্ষার্থীরা তাদের পরিচয়পত্র দেখিয়ে এসব বাসে উঠতে পারবে।
অভিভাবকদের ভাষ্য
শিক্ষার্থীদের জন্য পৃথক বাস চালুর উদ্যোগে খুশি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা। কারণ, নগরের বেশির ভাগ বিদ্যালয় ও মাদ্রাসায় নিজস্ব বাস নেই। আবার চট্টগ্রামের শিক্ষার্থীদের জন্য অর্ধেক ভাড়ার ব্যবস্থাও চালু নেই। এসব কারণে শিক্ষার্থীদের একদিকে কয়েক গুণ ভাড়া দিতে হয়, অন্যদিকে কয়েকটি গাড়ি বদলিয়ে স্কুলে যাওয়া–আসা করতে হয়। এখন পৃথক বাসসেবা চালু হওয়ায় আর সেই ভোগান্তি হবে না।
জান্নাতুল ফেরদৌস নামের একজন অভিভাবক বলেন, তাঁর মেয়ে বাংলাদেশ মহিলা সমিতি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে পড়ে। প্রয়োজনীয় গাড়ি না থাকায় প্রতিদিন দেওয়ানহাট মোড় থেকে মেয়েকে বিদ্যালয়ে আনা–নেওয়ার জন্য তাঁকে রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয়। পৃথক বাস চালু হলে এ কষ্ট দূর হবে।
নগরের বহদ্দারহাট এলাকার হালিমা বেগম নামের আরেকজন অভিভাবক বলেন, সরাসরি গাড়ি না থাকায় ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে পড়ুয়া মেয়েকে নিয়ে প্রতিদিন রিকশা করে আসা-যাওয়া করতে হয়। আবার মেয়ে যতক্ষণ বিদ্যালয়ে থাকে, ততক্ষণ তাঁকেও অপেক্ষা করতে হয়। এখন আর সেই সমস্যা হবে না।