করোনার কারণে এবার চট্টগ্রামে তুলনামূলক কোরবানি কম হয়েছে বলে মনে করছেন চামড়া আড়তদারেরা। সব মিলিয়ে চার লাখের মতো চামড়া শহরে ও গ্রামে আড়তদারদের কাছে রয়েছে বলে ধারণা করছেন তাঁরা। তবে উপজেলা থেকে চামড়া নিয়ে এসে অনেকে বিক্রি করতে পারেননি বলেও অভিযোগ রয়েছে। আড়তদারদের গাফিলতির কারণে এ রকম প্রায় ১৫ হাজার নষ্ট চামড়া পরিচ্ছন্ন কর্মীরা নিয়ে ভাগাড়ে ফেলেছেন।
চট্টগ্রাম নগরের আতুরারডিপো এলাকায় এখন চামড়ার আড়তগুলো ব্যস্ত সময় পার করছে। শনিবার কোরবানি শুরু হওয়ার পর থেকে নগর ও উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে চামড়া আসতে শুরু করে। রাতভর চামড়া আসতে থাকে। পাশাপাশি চলে লবণ দিয়ে চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রক্রিয়াও। সকালের দিকে মুরাদপুর এলাকায় হাটহাজারী সড়কে পড়েছিল অনেক চামড়া।
রাতে বৃষ্টিতেও ভিজেছে বেশ কিছু চামড়া। উপজেলা থেকে আসা অনেক ব্যবসায়ী চামড়া নিয়ে আড়তদারদের মুখাপেক্ষী ছিলেন। কিন্তু উপজেলার অনেকে শেষ পর্যন্ত চামড়া ন্যায্য দামে বিক্রি করতে পারেননি বলে অভিযোগ। আবার অনেক চামড়া নষ্ট হয়ে গেছে অজুহাতে নেওয়া হয়নি বলেও অভিযোগ। হাটহাজারী সড়ক থেকে এ রকম প্রায় আট হাজার নষ্ট চামড়া উদ্ধার করে ফেলে দিয়েছেন সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্ন কর্মীরা। এ ছাড়া নগরের চৌমুহনী, পাথরঘাটা, চামড়ার গুদাম এলাকা থেকেও আরও নষ্ট চামড়া ফেলে দেওয়া হয়।
সিটি করপোরেশনের উপপ্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মো. মোরশেদুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলা থেকে আনা কিছু চামড়া নষ্ট হয়েছে। আড়তদারদের গাফিলতি ছিল। দেরি করেছে। দাম কম দিতে চেয়েছে বলে এসব চামড়া অনেকে বিক্রি করতে পারেনি। এ ছাড়া সুন্নিয়া আহম্মদিয়া মাদ্রাসা মাঠে প্রায় পাঁচ হাজার চামড়া নষ্ট হয়েছে। এই চামড়াগুলো আড়তদারেরা কিনে নিয়েছিলেন। কিন্তু শ্রমিকের অভাবে সঠিক সময়ে লবণ দিতে পারেনি। এভাবে প্রায় ১৫ হাজার চামড়া নষ্ট হয়েছে।
বিবিরহাট আহমদিয়া সুন্নিয়া মাদ্রাসা প্রাঙ্গণ থেকে বিকেলে নষ্ট চামড়াগুলো সিটি করপোরেশন সরিয়ে নেয়। সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন চামড়া কেন নষ্ট হয়েছে সে বিষয়ে আড়তদারদের কাছ থেকে কৈফিয়ত চেয়েছেন। এর আগে সকালে উপজেলা থেকে আসা পচে যাওয়া সরাতে গেলে আড়তদারদের লোকজন বাধা দেয়। তাদের দাবি এই চামড়া আড়তদারেরা কিনেছে। এ নিয়ে পরিচ্ছন্ন কর্মীদের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডায় লিপ্ত হয়। পরে এসব চামড়া রাস্তা থেকে তুলে ময়লার গাড়িতে করে নিয়ে যায় পরিচ্ছন্ন কর্মীরা।
চামড়া নষ্ট হওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বৃহত্তর চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার সমিতির আহ্বায়ক মাহবুব আলম বলেন, উপজেলা থেকে আনা কিছু চামড়া নষ্ট হয়েছে। যার কারণে কেনা যায়নি। প্রায় আটশো চামড়া রিফ লেদার নিয়ে গেছে। এগুলো কিছুটা নষ্ট ছিল। পরিচ্ছন্ন কর্মীরা হাজার দু-এক নষ্ট চামড়া ফেলে দিয়েছে। এবার সার্বিকভাবে কোরবানি কম হয়েছে। তবে গতবারের মতো চামড়া নষ্ট হয়নি।
সব মিলিয়ে (গরু–ছাগল) চার লাখের বেশি চামড়া সংগৃহীত হয়নি বলে তাঁর অভিমত।
ব্যবসায়ীদের মতে করোনার কারণে অনেকে গরু না দিয়ে ছাগল কোরবানি দিয়েছে। যার কারণে চামড়া সংগ্রহ তুলনামূলক কম হয়। এ ছাড়া দামও ছিল অনেক কম। চট্টগ্রামে প্রায় আড়াই শ আড়তদার রয়েছে। তারা চামড়া প্রক্রিয়াজাত করার কয়েক দিন পর ঢাকা থেকে ট্যানারি মালিকেরা এসে এগুলো কিনে নেবেন।
আড়তদার সমিতির সাবেক সভাপতি মো. মুসলিম উদ্দিন বলেন, এবার চামড়া একটু কম হয়েছে। কিছু চামড়া গ্রামেগঞ্জে লবণ দিয়ে রাখা হয়েছে। তবে সেভাবে কোনো চামড়া নষ্ট হয়নি। সুন্দর ব্যবস্থাপনা ছিল। কয়েক দিন পর ঢাকার কারখানা থেকে লোকজন এসে চামড়া নিয়ে যাবেন। এখনই প্রক্রিয়াজাত করে রাখা হয়েছে।