নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ঘোড়াশালের আইএফআইসি ব্যাংকের দুই কর্মকর্তার যোগসাজশে স্থানীয় দুই গ্রাহকের পৌনে দুই লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় গতকাল বুধবার রাতে দুই ভুক্তভোগী গ্রাহক ব্যাংকটির শাখা ব্যবস্থাপকসহ তিনজনের নামে পলাশ থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
ভুক্তভোগী দুই গ্রাহক হলেন ঘোড়াশালের স্থানীয় ইট-বালুর ঠিকাদার জিয়াউল হক ও মুদি ব্যবসায়ী দেবল চন্দ্র মিত্র। অভিযুক্তরা হলেন আইএফআইসি ব্যাংকের ঘোড়াশাল শাখার ব্যবস্থাপক আমান উল্লাহ খান ও কাস্টমার সার্ভিস ম্যানেজার সোমা সাহা এবং কথিত হেড অফিসের কর্মকর্তা অজ্ঞাতনামা একজন। বুধবার দুপুরে জালিয়াতির মাধ্যমে ওই দুই গ্রাহকের ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা আত্মসাতের ঘটনা ঘটে।
লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, বুধবার সকালে আইএফআইসি ব্যাংকের ঘোড়াশাল শাখার কাস্টমার সার্ভিস ম্যানেজার সোমা সাহা, শাখা ব্যবস্থাপক আমান উল্লাহ খানের মুঠোফোন নম্বর থেকে জিয়াউল হক ও দেবল চন্দ্র মিত্রকে কল দেন। এ সময় সোমা সাহা তাঁদের জানান, আপনার অ্যাকাউন্টের এটিএম কার্ড নিয়ে সমস্যা হয়েছে, এ বিষয়ে হেড অফিসের এক কর্মকর্তাকে কিছু তথ্য দিতে হবে। এর পরপরই এক ব্যক্তি তাঁদের মুঠোফোন নম্বরে কল করে হেড অফিসের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে তাঁদের এটিএম কার্ডের গোপন তথ্য জানতে চান। গোপন তথ্য দেওয়ার কিছুক্ষণ পরই ওই দুই গ্রাহকের ব্যাংক হিসাব থেকে ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা ডেবিট হয়ে যায়।
এতে আরও বলা হয়, টাকা উঠিয়ে নেওয়ার পরপরই ওই ব্যাংকের শাখায় গিয়ে যোগাযোগ করেন ভুক্তভোগী দুজন। কিন্তু এ বিষয়ে শাখা ব্যবস্থাপক তাঁদের কোনো সমাধান দিতে পারেননি। তিনি শুধু জানান, প্রতারক চক্র তাঁদের ব্যাংক হিসাব থেকে টাকা তুলে নিয়ে গেছে। ব্যাংক কর্মকর্তার পরামর্শেই কথিত ওই হেড অফিসের কর্মকর্তাকে তথ্য দেওয়া হলেও তাঁদের কাছ থেকে কোনো সমাধান না পেয়ে পরে তাঁরা আইনের আশ্রয় নেন।
ভুক্তভোগী জিয়াউল হক বলেন, ‘বুধবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে সোমা সাহা ব্যাংকটির শাখা ব্যবস্থাপকের ফোন নম্বর থেকে আমাকে কল দেন। এ সময় তিনি আমাকে জানান, কিছুক্ষণের মধ্যে হেড অফিস থেকে আমার মুঠোফোনে একটি কল আসবে। আমার এটিএম কার্ডসংক্রান্ত আপডেটের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য চাওয়া হবে। একটু পরই আমার মুঠোফোনে একটি নম্বর থেকে কল আসে এবং তিনি হেড অফিসের কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দিয়ে জানতে চান, ঘোড়াশাল শাখা থেকে তথ্য আপডেটের বিষয়টি জানানো হয়েছিল কি না? তাঁকে এটিএম কার্ডসংক্রান্ত বেশ কিছু তথ্য দেওয়ার পরেই দেখি আমার ব্যাংক হিসাব থেকে কয়েক ধাপে এক লাখ টাকা তোলা হয়েছে।’
একইভাবে প্রতারণার শিকার দেবল চন্দ্র মিত্র বলেন, ‘গতকাল (বুধবার) সকালে ব্যাংকটির একজন নিরাপত্তাকর্মীকে দিয়ে সোমা সাহা আমার মুঠোফোন নম্বর সংগ্রহ করেন। পরে তিনি আমাকে একইভাবে কল করে এটিএম কার্ডের তথ্য আপডেটের বিষয়টি জানান। পরে আমিও সরল বিশ্বাসে হেড অফিসের কর্মকর্তা পরিচয় দেওয়া ওই ব্যক্তিকে সব তথ্য জানিয়ে দিই। এরপরই আমার হিসাব থেকে কয়েক ধাপে ৭৫ হাজার টাকা উত্তোলন করা হয়।’
এ বিষয়ে আইএফআইসি ব্যাংকের ঘোড়াশাল শাখার ব্যবস্থাপক আমান উল্লাহ খান ও কাস্টমার সার্ভিস ম্যানেজার সোমা সাহার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা জানান, এ বিষয়ে হেড অফিসের অনুমতি ব্যতীত কোনো বক্তব্য বা মন্তব্য করা সম্ভব নয়। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে, তাঁরা বিষয়টি দেখছেন।
পলাশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইলিয়াছ বলেন, ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে গতকাল রাতে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।