ঘোড়ার গাড়িতে এলেন প্রতিবন্ধী বর-কনে

বরিশাল নগরের পলাশপুর গুচ্ছগ্রামে প্রতিবন্ধী বর-কনে। রোববার বিকেলে তোলা
ছবি: সংগৃহীত

বরিশাল নগরের পলাশপুর গ্রচ্ছগ্রামে গতকাল রোববার বিকেলে এক ভিন্ন রকমের বিয়ের আয়োজন করেছিলেন স্থানীয় লোকজন। এই বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে বর-কনেকে বাড়ি নিয়ে এলেন ঘোড়ার গাড়িতে।

সোমবার দুপুরে ছিল বর-কনের গায়েহলুদের অনুষ্ঠান। এতে এলাকার লোকেরা চাঁদা তুলে অতিথি আপ্যায়ন থেকে শুরু করে সবকিছু করেন। আনন্দে মাতেন বয়সী নারী-পুরুষ, শিশুরাও। বর দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী কালাম ব্যাপারী (২২) এবং কনে সুমা আক্তার (১৮) শ্রবণ ও বাক্‌প্রতিবন্ধী।

সোমবার বিকেলে নগরীর ৫ নম্বর ওয়ার্ডের পলাশপুর গুচ্ছগ্রামে ১ নম্বর লেনে গিয়ে দেখা যায়, বর-কনেকে ঘিরে আছেন এলাকার লোকজন। তাঁরা নানাভাবে আনন্দ-উৎসব করছেন।

সুমন সরদার এই বিয়ের উদ্যোক্তাদের একজন। তিনি বলেন, ‘রোববার বিকেলে আমরা ঘোড়ার গাড়ি নিয়ে কনের বাড়িতে যাই। তাঁদের বিবাহ নিবন্ধন হয়। সেখানে ফিরনি-মিষ্টি দিয়ে উপস্থিত লোকজনকে আপ্যায়ন শেষে ঘোড়ার গাড়িতে করে কনেকে বরের বাড়িতে তুলে আনেন তাঁরা। বর-কনের বাড়ি পাশাপাশি হলেও ঘোড়ার গাড়িতে বর-কনেকে পুরো এলাকা ঘোরানো হয়। এ সময় উৎসুক লোকজন রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে তাঁদের শুভেচ্ছা জানান।’

বরিশাল নগরের পলাশপুর গুচ্ছগ্রামে প্রতিবন্ধী বর-কনে। গায়েহলুদের পর সোমবার বিকেলে তোলা

বিয়ের যাবতীয় ব্যয় নির্বাহের জন্য এলাকার লোকজন চাঁদা তোলেন। প্রায় ২৫ হাজার টাকা তুলে বর-কনের পোশাক, আপ্যায়ন ব্যয় থেকে শুরু করে সবকিছু করেন এলাকাবাসী। স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর কেফায়েত হোসেনও ছিলেন এই উদ্যোগে। তিনি বিয়ের উপহার হিসেবে বরকে একটি হুইলচেয়ার দেন।

স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, বর কালামের গ্রামের বাড়ি বাকেরগঞ্জের কালীগঞ্জ গ্রামে। মা–বাবা নেই। তাঁরা দুই ভাই। কালাম ছোট। বড় ভাই আবদুস সালামও বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী। শ্রমিকের কাজ করে যা আয় করেন, তা দিয়ে পলাশপুরের গুচ্ছগ্রামে ছোট্ট একটি খুপরি ভাড়া করে থাকেন। আর কনে সুমার বাবা বাবুল পালওয়ান। তিনি রিকশা চালান। দুই মেয়ে, এক ছেলে নিয়ে পাঁচজনের সংসার চলছে টেনেটুনে।
সোমবার বিকেলে কথা হয় বর কালামের সঙ্গে। কনে সুমা কথা বলতে না পারলেও তাঁর অবয়ব দেখে বোঝা যাচ্ছিল বিয়েতে খুব খুশি তিনি। কনের পাশে বর কালামও ছিলেন হাস্যোজ্জ্বল।

বিয়ের পর অনুভূতি জানতে চাইলে কালাম হাসতে হাসতে বলছিলেন, ‘ভালোই লাগে, আবার চিন্তাও লাগে। আগে তো এলহা আছিলাম। এহন ঘরে বউ আইছে। কয়ডা টাহা ভাতা পাই। হেইয়্যা দিয়া সোংসার চালামু ক্যামনে? যদি কেউ আমারে একটা কামের (কাজ) ব্যবস্থা করতো, তয় নিজের সোংসার নিজেই চালাইতে পারতাম। এই ধরেন কিছু মালামাল দেলে বইয়্যা হেইগুলা বেইচ্চা জীবনডা চইল্লা যাইতো।’

নববধূ সুমা স্বামীর পাশে বসে আছেন। কিন্তু তিনি স্বামীর এই আকুতি শুনতে পান না। কিন্তু স্বামীর মুখের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকানো সুমার হাস্যোজ্জ্বল মুখটা তখন অনেকটাই মলিন। বোঝা গেল শ্রবণশক্তি না থাকলেও তাঁর স্বামী যে ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার কথা বলছেন, তা ঠিকই ইন্দ্রিয় তাঁকে বুঝতে সহায়তা করছে।