‘ঘুমাইনি, সারা রাত চুপচাপ বসে ছিলাম’

দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে পুড়ে যাওয়া ঘরের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েন জয়ন্তী রানী। আজ মঙ্গলবার সকালে পীরগঞ্জ উপজেলার বড় করিমপুরে
ছবি: রহিদুল মিয়া

কয়েক দিনের ভ্যাপসা গরমে রংপুরে জনজীবন অতিষ্ঠ। অবশেষে গতকাল সোমবার রাত থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। এতে জনজীবনে স্বস্তি ফিরলেও কষ্টে পড়েছে মাঝিপাড়া গ্রামের বড় করিমপুর এলাকায় হিন্দুপাড়ার শতাধিক মানুষ।

গত রোববার রাতে তাঁদের বসতঘর ভাঙচুর ও আগুনে পুড়িয়ে দেয় উত্তেজিত জনতা। এখন তাঁরা খোলা আকাশের নিচে। বৃষ্টির কারণে ওই সব মানুষের রাত কেটেছে অনেকটা বিনিদ্র। তাঁরা কেউ আশ্রয় নিয়েছিলেন স্থানীয় মন্দিরে, আবার তিনটি পরিবার ছিল অস্থায়ীভাবে রেড ক্রিসেন্টের করা তিনটি তাঁবুতে। এলাকাটি রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার রামনাথপুর ইউনিয়নে অবস্থিত। ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে গত রোববার রাতে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলা চালানো হয়।

ওই রাতের ঘটনা সম্পর্কে লক্ষ্মী রাণী (৪২) আজ সকাল সাড়ে নয়টায় বলেন, ‘ওঁরা (উত্তেজিত জনতা) আগে আসি লুটা করছে। তারপর ঘরে আগুন দিয়া ভাগরাম হইছে। তার আগেই ভয়ে বাড়ি ছাড়ি আমি ছেলেকে নিয়া ধানখেতের ভেতর লুকাই থাকি জীবন বাঁচাইছি। ভোরে বাড়িতে আসিয়া দেখি সব শেষ। আমার চারটা ঘর পুড়ি দেছে। ৩টা গরু, ৫টা জাল, ৫০ হাজার টাকা আর টিভিটা লুট করছে। রাত থাকি বৃষ্টি নামছে। এ্যালা থাকার জায়গা নাই। রাতে আমি দেবরের বাড়িতে আর ছেলেটা তার চাচার বাড়িতে ছিল। এখন কী দিয়া ঘর নয়া করি সাজামো তার বুদ্ধি নাই।’

আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছেন রুপিন চন্দ্র দাস (৬০)। তিনি বলেন, ‘আমাদের তো সব শেষ। এখন বৃষ্টিটায় হইছে যন্ত্রণার। থাকি কোনটে। কীভাবে জেবন চলবে সেটা ভগবান জানে। রাইতে একখানে খাবার রান্না করি সবাইকে দিছে।’

সুমন চন্দ্র বলেন, ‘স্ত্রী ও ছোট দুই সন্তানকে নিয়ে রাতে মন্দিরে ছিলাম। ঘরে চাল নেই। থাকার জায়গা নেই। কী করি? ঘুমাইনি, সারা রাত চুপচাপ বসে ছিলাম। কাল দুপুরে রাতে রান্না করা খাবার দিছে। সেটা খাইছি।’

আগুনে পোড়া ঘরের টিন সরাচ্ছেন লক্ষ্মী রাণী ও তাঁর ছেলে স্বপন চন্দ্র রায়। মঙ্গলবার সকালে পীরগঞ্জ উপজেলার বড় করিমপুরে

বৃষ্টির কারণে রাতে মন্দিরে রাত কাটানোর কথা জানান, পলাশ রায় ও রীতা রাণীসহ অন্তত ১০ জন।

রীতা রাণী বলেন, ‘বৃষ্টিটায় এ্যালা যন্ত্রণা হইলো। খাবার নাই, ঘর নাই, টেকা নাই, থাকার জায়গাটাও নাই।’

রেড ক্রিসেন্টের পীরগঞ্জ উপজেলার দলনেতা সুমন মণ্ডল বলেন, বৃষ্টিতে বড় করিমপুর গ্রামের মানুষ দুর্ভোগে পড়েছে। গতকাল রাতে সেখানে তিনটি তাঁবু টাঙানো হয়েছে। আজ আরও দুটি তাঁবু টাঙানো হয়েছে। সেখানে পাঁচটি পরিবার থাকতে পারবে।