রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ ঘাট এলাকায় ঢাকামুখী যানবাহনের চাপে দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়েছে। আজ মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত দৌলতদিয়া ফেরিঘাট থেকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের গোয়ালন্দ ফিডস পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার লম্বা লাইনে যানবাহনের সারি দেখা যায়। রোদ আর গরমে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকায় যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
ঘাটসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০টি ফেরির জন্য ৫টি ঘাট সচল রয়েছে। ৫ ও ৭ নম্বর ঘাট রো রো ফেরির জন্য এবং বাকি ৩, ৪ ও ৬ নম্বর ঘাট ইউটিলিটি (ছোট) ফেরির জন্য। রো রো ঘাটে তিনটি করে পকেট রয়েছে ও ইউটিলিট ঘাটে মাত্র একটি করে পকেট রয়েছে। অর্থাৎ তিনটি ঘাটে মাত্র তিনটি পকেটে তিনটি ফেরি ভিড়তে পারে। রো রো ঘাটে প্রতিটি পকেটে ফেরি ভিড়তে পারে। ফেরির সংখ্যা অনুযায়ী ঘাটসংখ্যা কম রয়েছে। যে কারণে মাঝেমধ্যে ঘাট না পেয়ে ফেরিগুলো ঘাটের কাছে এসে ঝুলে থাকে।
দৌলতদিয়ার ৭ নম্বর ঘাটের কাছে নাব্যতা দ্রুত কমতে থাকায় দুই দিন আপের একটি পকেট বন্ধ ছিল। সেখানে খননযন্ত্রের সাহায্যে মাটি অপসারণ করা হচ্ছে। ফলে ওই ঘাটের আংশিক বন্ধ রেখে বাকি পকেটটি চালু রাখা হয়। বাকি চারটি ঘাটের মধ্যে ৩ ও ৪ নম্বর ঘাটের কাছে পানির তীব্র স্রোতে ফেরি ভেড়াতে অনেক বেগ পোহাতে হয়। পাটুরিয়া আসা অধিকাংশ ফেরি ৫, ৬ ও ৭ নম্বর ঘাটে ভেড়ার চেষ্টা করে। ঘাটস্বল্পতা ছাড়া অতিরিক্ত গাড়ির চাপ এবং বিশৃঙ্খলার কারণে মহাসড়কে যানজট তৈরি হচ্ছে।
পাঁচটি ঘাটের মধ্যে দুটি রো রো এবং বাকি তিনটি ইউটিলিটি ফেরির জন্য নির্মিত। এই মুহূর্তে জরুরিভাবে রো রো ফেরিঘাট আরেকটি বাড়ানো দরকার।
আজ বেলা ১১টা থেকে ২টা পর্যন্ত দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় দেখা যায়, ফেরিঘাট থেকে মহাসড়কের গোয়ালন্দ ফিডস মিল পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার লম্বা যানবাহনের লাইন। ঢাকামুখী লাইনের অধিকাংশ রয়েছে দূরপাল্লার যাত্রীবাহী পরিবহন। সঙ্গে রয়েছে অনেক পণ্যবাহী ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, পিকআপ। এসব গাড়ি ফেরিতে উঠতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করছে।
সাতক্ষীরা থেকে আসা কাঠবোঝাই ট্রাকচালক মো. আবদুল্লাহ বলেন, গতকাল সোমবার বিকেলে গাজীপুরের উদ্দেশে রওনা করে রাত ১০টায় গোয়ালন্দ মোড় পৌঁছান। এ সময় বেশ কিছু পণ্যবাহী গাড়ি তিনি দেখতে পান। রাত দুইটার দিকে ঘাটের দিকে ছেড়ে দিলে ঘাট থেকে পাঁচ কিলোমিটার পিছনে গোয়ালন্দ ফিড মিলসের কাছে আটকা পড়েন। ১০ ঘণ্টা ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে ফেরির জন্য অপেক্ষা করছেন। এ রকম অনেক গাড়ি রয়েছে বলে তিনি জানান।
দক্ষিণাঞ্চল থেকে আসা ঢাকাগামী একটি যাত্রীবাহী বাসের চালক শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘চার ঘণ্টার বেশি সময় ধরে লাইনে অপেক্ষা করছি। এখনো ফেরিতে উঠতে পারিনি। গরমের মধ্যে বসে থাকতে যাত্রীরা, বিশেষ করে নারী ও শিশুরা ক্লান্ত হয়ে পড়ছে।’
যশোর থেকে আসা পাথরকুচিবোঝাই ট্রাকচালক জমির আলী বলেন, ফেরির সংখ্যা বাড়ানো হলে কয়েক দিন দৌলতদিয়া ঘাটে তেমন দুর্ভোগ পোহাতে হয়নি। হঠাৎ করে গাড়ির চাপ বেড়ে যানবাহনের সারি তৈরি হয়েছে। এই দুর্ভোগ কবে শেষ হবে!
বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক মো. শিহাব উদ্দিন বলেন, ফেরিসংখ্যা পর্যাপ্ত থাকলেও মূলত ঘাটস্বল্পতা রয়েছে। পাঁচটি ঘাটের মধ্যে দুটি রো রো এবং বাকি তিনটি ইউটিলিটি ফেরির জন্য নির্মিত। এই মুহূর্তে জরুরিভাবে রো রো ফেরিঘাট আরেকটি বাড়ানো দরকার। অথবা কোনো ইউটিলিটি পন্টুন সরিয়ে রো রো পন্টুন বসানো দরকার। তা না হলে সহজে এ সমস্যা দূর হবে না।