পটুয়াখালীর মহিপুর থানা চত্বরে অবস্থান নেওয়া মানুষজনকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠিপেটা করে। আজ বিকেলে
পটুয়াখালীর মহিপুর থানা চত্বরে অবস্থান নেওয়া মানুষজনকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠিপেটা করে। আজ বিকেলে

গ্রেপ্তার আসামিকে ছাড়িয়ে নিতে থানা ঘেরাও, ৮ পুলিশসহ আহত ২৫

নির্বাচন পরিবর্তী হামলা মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া এক আসামিকে ছাড়িয়ে নিতে থানা ঘেরাও করেছিলেন তাঁর ভাই ও সমর্থকেরা। এ সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান তাঁরা। এতে ৮ পুলিশসহ অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন। আজ শুক্রবার বেলা সাড়ে তিনটা থেকে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার মহিপুর থানা চত্বরে এ ঘটনা সংঘটিত হয়।

এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ থানা চত্বর থেকে গ্রেপ্তার আসামি মো. খলিল ঘরামির ভাই আবদুল জলিল ঘরামিকেও গ্রেপ্তার করে। আবদুল জলিল ঘরামি উপজেলার লতাচাপলী ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে ২ নম্বর ওয়ার্ডের পরাজিত ইউপি সদস্য প্রার্থী। সংঘর্ষের পর মহিপুর এলাকায় পরিস্থিতি বর্তমানে উত্তপ্ত রয়েছে।

আহত ব্যক্তিদের মধ্যে মহিপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আবদুল হালিমকে সন্ধ্যায় কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং নারী কনস্টেবল শীলা ও নাসরিনকে কুয়াকাটার ২০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ছাড়া কনস্টেবল মিলন, আফজাল, ওবায়দুল, নারী কনস্টেবল নাহার ও লিজাকে মহিপুর উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

খলিল ঘরামিকে পুলিশের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য তাঁর ভাই আবদুল জলিল ঘরামি (পরাজিত প্রার্থী) ও তাঁর সমর্থক লাইলি বেগমের নেতৃত্বে বিক্ষুব্ধ নারী-পুরুষ মহিপুর থানা ঘেরাও করেন।

আহত লোকজনের মধ্যে আবদুর রাজ্জাক, রাজা মিয়া, দুলাল, মনির মোল্লা, মো. মনিরুজ্জামান, আবদুল কাদের মাঝি, মিলন বেপারী, মো. ওবায়দুল্লাহ, ইলিয়াস হোসেন, রায়হান উদ্দিন, মোসলেম আলী, আবদুল মজিদ, ইউসুফ আলী, বিউটি বেগম ও সাফিয়া বেগমের নাম জানা গেছে। আহত এসব লোকজনের দাবি, তাঁরা শান্তিপূর্ণভাবে থানায় অবস্থান করছিলেন। পুলিশ তাঁদের অন্যায়ভাবে লাঠিপেটা করেছে।

গ্রেপ্তার আসামিকে ছাড়িয়ে নিতে পটুয়াখালীর মহিপুর থানা চত্বরে অবস্থান নেওয়া মানুষজন। আজ দুপুরে

মহিপুর থানা-পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত বুধবার লতাচাপলী ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। পরদিন বৃহস্পতিবার ওই ইউপির ২ নম্বর ওয়ার্ডের পরাজিত ইউপি সদস্য প্রার্থী আবদুল জলিল ঘরামির ভাই মো. খলিল ঘরামি দলবল নিয়ে কবির মোল্লার ওপর হামলা করেন। এতে কবির মোল্লা গুরুতর জখম হন। কবির মোল্লা ওই ওয়ার্ডের বিজয়ী ইউপি সদস্য আবুল হোসেন কাজীর সমর্থক। কবির মোল্লা বর্তমানে কুয়াকাটা ২০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

এ ঘটনায় কবির মোল্লার স্ত্রী শিউলি বেগম বাদী হয়ে মহিপুর থানায় খলিল ঘরামিসহ কয়েকজনকে আসামি করে মামলা করেন। ওই মামলার এজাহারভুক্ত আসামি হিসেবে খলিল ঘরামিকে মহিপুর থানা-পুলিশ আজ বেলা তিনটার দিকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যায়। এর পরপরই খলিল ঘরামিকে পুলিশের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য আবদুল জলিল ঘরামি ও তাঁর সমর্থক লাইলি বেগমের নেতৃত্বে বিক্ষুব্ধ নারী-পুরুষ মহিপুর থানা ঘেরাও করেন।

পটুয়াখালীর মহিপুর থানা চত্বরে সংঘর্ষে আহত পুলিশের উপপরিদর্শক মো. আবূুল হালিমকে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হচ্ছে। আজ বিকেলে

প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে জানা যায়, পুলিশ জড়ো হওয়া লোকজনকে থানা থেকে চলে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করে। বিক্ষুব্ধ লোকজন থানা থেকে চলে না গিয়ে থানায় কর্তব্যরত পুলিশের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডায় লিপ্ত হন। এ সময় পুলিশ থানায় অবস্থান করা এসব মানুষকে ছত্রভঙ্গ করার জন্য লাঠিপেটা করে। এতে থানা চত্বরে অবস্থানরত লোকজনের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বাধে। দুই পক্ষের মধ্যে চলে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া। বিক্ষুব্ধ মানুষ পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন এ সময় মহিপুর থানা চত্বর ও পার্শ্ববর্তী এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।

স্থানীয় কয়েকজন জানান, গ্রেপ্তার খলিল ঘরামিকে (৪২) ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য পরাজিত ইউপি সদস্য প্রার্থী আবদুল জলিল ঘরামির দুই শতাধিক সমর্থক মহিপুর থানা চত্বরে জড়ো হয়ে থানা ঘেরাও করেন। এ সময় তাঁরা খলিল ঘরামিকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য স্লোগান দিতে থাকেন।

মহিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার মো. আবুল খায়ের প্রথম আলোকে বলেন, গ্রেপ্তার আসামিকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য উচ্ছৃঙ্খল লোকজন থানা চত্বরে প্রবেশ করে অরাজকতা সৃষ্টি করে। পুলিশ সদস্যরা এসব লোককে থানা চত্বর থেকে চলে যেতে অনুরোধ করেন। গ্রেপ্তার করা আসামিকে ছেড়ে দেওয়ার সুযোগ নেই তা উপস্থিত লোকজনকে বলা হয়। কিন্তু উচ্ছৃঙ্খল মানুষ তা না শুনে পুলিশের ওপর চড়াও হয় এবং পুলিশকে মারধর করেন। পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেলও নিক্ষেপ করেন। একপর্যায়ে গ্রেপ্তার আসামিকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশ লাঠিপেটা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। উচ্ছৃঙ্খল লোকজনের হামলায় আটজন পুলিশ সদস্য আহত হন বলে তিনি জানান।

ওসি আবুল খায়ের আরও জানান, আইনশৃঙ্খলার অবনতি এবং গ্রেপ্তার আসামিকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টার ঘটনায় মামলা করা হবে। বর্তমানে এলাকার পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।