নওগাঁর মহাদেবপুর

গ্রাম্য সালিসে শ্লীলতাহানির শাস্তি তিন থাপ্পড়

নওগাঁ জেলার মানচিত্র।
প্রতীকী ছবি

থানায় অভিযোগ করলে গ্রামে থাকতে দেবে না—এমন শঙ্কায় মেয়ের শ্লীলতাহানির অভিযোগ নিয়ে গ্রামের মাতবরের কাছে যান নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার চেরাগপুর ইউনিয়নের একটি গ্রামের একজন কৃষক। এরপর সালিস বৈঠক ডেকে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে শাস্তি হিসেবে তিন থাপ্পড় ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

ছাত্রীর স্বজনেরা অভিযোগ করেছেন, অভিযুক্ত ব্যক্তি ও তাঁর স্বজনেরা গ্রামের প্রভাবশালী হওয়ায় এমন বিচার মেনে নিতে হয়েছে তাঁদের।  

গত রোববার রাতে গ্রামে ওই সালিস বৈঠক হয়। অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম খোদাবক্স (৪৪)। সালিস বৈঠকে বিচারের কাজ করেন তাঁর চাচাতো ভাই সেকেন্দারসহ গ্রামের মাতবর রাজ্জাক মণ্ডল।

চেরাগপুর ইউনিয়নের একটি সূত্রের মাধ্যমে খবর পেয়ে আজ বুধবার ওই গ্রামে গিয়ে কথা হয় ছাত্রীর বড় ভাই ও ভাবির সঙ্গে। তাঁরা বলেন, সালিস বৈঠকে শ্লীলতাহানির সত্যতা পাওয়ার পরও দোষী ব্যক্তিকে উপযুক্ত সাজা দেওয়া হয়নি। বিচারের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে জোর করে সাদা স্টাম্পে ছাত্রী ও বাবার স্বাক্ষর করে নেওয়া হয়েছে। বিচার সুষ্ঠু না হলেও মাতবরদের সিদ্ধান্তই মানতে হবে। এর বাইরে গেলে গ্রামেই থাকা যাবে না হয়তো।

ভুক্তভোগী একটি বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী। তার স্বজনেরা জানান, ১০ জুন বিকেলে কিশোরী বাড়িতে নিজের কক্ষে একাই ছিল। প্রতিবেশী খোদাবক্স তখন ঘরে ঢুকে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেন। কিশোরীর চিৎকারে প্রতিবেশীরা এগিয়ে এলে খোদাবক্স পালিয়ে যান।

এ ঘটনায় কিশোরীর বাবা গ্রামের মাতবরের কাছে বিচার দাবি করেন। মাতবরেরা বিষয়টি নিয়ে গত রোববার রাতে সালিস-বৈঠকে বসেন। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মেয়েটির বাবাকে অভিযুক্ত খোদাবক্সকে তিনটি থাপ্পড় মারতে বলা হয়। এ ছাড়া খোদাবক্সকে জরিমানা করা হয় ২০ হাজার টাকা।

স্কুলছাত্রীর বড় ভাই অভিযোগ করেন, খোদাবক্সের বিরুদ্ধে এর আগেও এক নারীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠেছিল। কিন্তু গ্রামের মধ্যে তিনি ও তাঁর স্বজনেরা প্রভাবশালী। তাঁর চাচাতো ভাই সেকেন্দার গ্রামের প্রধান মাতবর। সেকেন্দার প্রভাব খাটিয়ে গ্রামের মাতবরদের দিয়ে এমন লঘু শাস্তির ব্যবস্থা করেছেন। জরিমানার টাকাও সেকেন্দার নিজে রেখে দিয়েছেন।

এ বিষয়ে সেকেন্দার বলেন, বৈঠকে মাতবরেরা সবাই সিদ্ধান্ত নেন যে জরিমানার ২০ হাজার টাকা তাঁর (সেকেন্দার) কাছে রাখা হবে এবং মেয়েটির যখন বিয়ে হবে, তখন এই টাকা খরচ করা হবে। কারণ, মেয়েটির বাবা খুব গরিব। এই টাকা তাঁদের হাতে দিলে তা খরচ হয়ে যাবে।

শ্লীলতাহানির সালিস বৈঠকে বিচারের বিষয়ে জানতে চাইলে মহাদেবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজম উদ্দিন মাহমুদ বলেন, তিনি এ ঘটনা সম্পর্কে জানেন না। থানায় কেউ অভিযোগ দেননি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।