গ্রামবাসীর টাকায় রাস্তা, প্রকল্প দেখিয়ে আত্মসাৎ

আত্মসাৎ করা অর্থ আদায় করতে ইউপি সদস্যের (প্রকল্প সভাপতি) বিরুদ্ধে সার্টিফিকেট মামলা।

নড়াইল জেলার ম্যাপ

গ্রামবাসীর উদ্যোগে গ্রামের লোকজনের কাছ থেকে টাকা তুলে সে টাকা দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। ওই রাস্তায় অতিদরিদ্র ব্যক্তিদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচির প্রকল্প দেখিয়ে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে।

এ ঘটনা নড়াইলের কালিয়া উপজেলার পুরুলিয়া ইউনিয়নের নওয়াগ্রামের। আত্মসাৎ করা অর্থ আদায় করতে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য (প্রকল্প সভাপতি) সেলিম মোল্লার বিরুদ্ধে সার্টিফিকেট মামলা করেছেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও)।

পিআইও কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১৭ এপ্রিল উপজেলায় অতিদরিদ্র ব্যক্তিদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি বাস্তবায়ন শুরু হয়। কাজ শেষের মেয়াদ ছিল ৯ জুন। উপজেলায় ৪৮টি প্রকল্পের কাজ হাতে নেওয়া হয়। মোট ১ হাজার ২৩৯ জন শ্রমিকের জন্য বরাদ্দ হয় ৯৯ লাখ ১২ হাজার টাকা। এর মধ্যে ৮ নম্বর প্রকল্প ছিল ‘নওয়াগ্রাম খাজা মোল্লার বাড়ি হতে বিল অভিমুখী রাস্তা মাটি দ্বারা উন্নয়ন’। ৪০ দিনের কর্মসূচির প্রকল্পটিতে ২৫ জন শ্রমিকের জন্য বরাদ্দ হয় ২ লাখ টাকা। প্রকল্পের সভাপতি ছিলেন স্থানীয় ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সেলিম মোল্লা। প্রকল্প এলাকায় প্রকল্প বিবরণী–সংবলিত সাইনবোর্ড টাঙানোর কথা। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর কর্মসূচিটি স্থানীয় ইউপির মাধ্যমে বাস্তবায়ন করছে।

পিআইও শরীফ মো. রুবেল বলেন, নওয়াগ্রামের রাস্তাটি আগেই গ্রামবাসী নিজেদের অর্থে নির্মাণ করেছেন। কিন্তু সেখানে প্রকল্পের কাজ না করেই দুই লাখ টাকার বিল দাখিল করেছিলেন প্রকল্প সভাপতি। তিনি এক লাখ টাকা তুলে নিয়েছেন। বাকি টাকা দেওয়ার আগে প্রকল্পের খোঁজখবর নিতে গিয়ে বিষয়টি বেরিয়ে আসে। এরপর টাকা আদায় করতে সেলিম মোল্লার বিরুদ্ধে ১৬ জুন সার্টিফিকেট মামলা করা হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১৬ জুন সকালে গ্রামের লোকজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেন। এরপর ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে সার্টিফিকেট মামলা করেন পিআইও। গ্রামবাসীর লিখিত অভিযোগে বলা হয়, গ্রামের মানুষের অর্থের দ্বারা নির্মিত রাস্তাটি সরকারি প্রকল্প দেখিয়ে ইউপি সদস্য সেলিম মোল্লা, ইউপি চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম, প্রকল্প সুপারভাইজার (পিআইও কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী) দেবদাস বিশ্বাস ও পিআইও বরাদ্দের টাকা লোপাট করেছেন।

এ সম্পর্কে ইউপি সদস্য সেলিম মোল্লা বলেন, ‘গ্রামবাসীর কাছ থেকে প্রায় তিন লাখ টাকা তুলে বালু ভরাট করে রাস্তাটি নির্মাণ করা হয়। ওই রাস্তা করতে গ্রামবাসীর সঙ্গে আমিও পরিশ্রম করেছি। প্রতিদিন ২০০-২৫০টি ফসলের গাড়ি ওই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করে। এতে রাস্তাটি মেরামত করার দরকার হয়। তাই ৯ জুনের আগে কিছু শ্রমিক দিয়ে ১০-১২ দিন প্রকল্পের কাজ করিয়েছি। এতে প্রকল্পের প্রায় ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।’

পিআইও শরীফ মো. রুবেল বলেন, ‘প্রকল্প সভাপতি অন্য জায়গার প্রকল্প দেখিয়ে ওই প্রকল্প বলে চালিয়ে দিয়েছেন। ওই অর্থ আত্মসাতের সঙ্গে আমি জড়িত নই।’