নারায়ণগঞ্জ শহরের পশ্চিম তল্লা এলাকায় মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় তিতাস গ্যাসের লিকেজ, বিদ্যুতের স্পার্ক ও মসজিদ কমিটির অবহেলাকে চিহ্নিত করেছে জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটি। ৪০ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনে ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে ১৮ দফা সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি।
বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে পাঁচটায় জেলা প্রশাসনের সম্মেলনকক্ষে জেলা প্রশাসক মো. জসিম উদ্দিনের হাতে তদন্ত প্রতিবেদন তুলে দেন তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট খাদিজা তাহেরী। এ সময় তদন্ত কমিটির সদস্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) টি এম মোশাররফ হোসেন, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ্ আরেফিন, তিতাস গ্যাস নারায়ণগঞ্জ অফিসের উপমহাব্যবস্থাপক মফিজুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট খাদিজা তাহেরী বলেন, তদন্তে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী, আহত ও নিহত ব্যক্তির পরিবারের স্বজন, মসজিদ কমিটিসহ সংশ্লিষ্ট লোকজনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে তদন্তে গ্যাসের লিকেজ, বিদ্যুতের স্পার্ক ও মসজিদ কমিটির অবেহলা থেকে দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে প্রতীয়মান হয়েছে। ভবিষ্যতে দুর্ঘটনা রোধে ১৮টি সুপারিশ করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত মর্মান্তিক। বিস্ফোরণের ওই ঘটনায় শিশুসহ ৩১ জনের প্রাণহানি হয়েছে। এর মধ্যে জেলা প্রশাসনের দুজন কর্মী রয়েছেন। এখনো গুরুতর দগ্ধ অবস্থায় চিকিৎসাধীন আছেন আরও পাঁচজন। তিনি বলেন, তদন্ত কমিটির দাখিল করা তদন্ত প্রতিবেদন ও সুপারিশগুলো মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তদন্ত কমিটির এক সদস্য প্রথম আলোকে বলেন, তদন্ত কমিটির ১৮ দফা সুপারিশের মধ্যে রয়েছে মসজিদ নির্মাণ ও পরিচালনার জন্য নীতিমালা প্রণয়ন, মসজিদে প্রশস্ত দরজা রাখা, মসজিদে জরুরি বহির্গমনের সিঁড়ির ব্যবস্থা রাখা, অগ্নি নির্বাপনব্যবস্থা রাখা, সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর (গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি, রাস্তা খোঁড়াখুঁড়িতে) মধ্যে সমন্বয় নিশ্চিত করা, তিতাস গ্যাসের পাইপলাইনের সংযোগে ডিজিটাল ম্যাপ ও অটোমোশন থাকা, ম্যাপিং হালনাগাদ করা, গ্যাস লাইনে নীতিমালা অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময় অন্তর পর্যবেক্ষণ করা, গ্যাস–সংযোগ ও লাইন স্থানান্তরে দাপ্তরিক অনুমোদন, নতুন সংযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে সমন্বয় করা, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে এনওসি নেওয়া প্রভৃতি।
৪ সেপ্টেম্বর রাতে নারায়ণগঞ্জ শহরের পশ্চিম তল্লা এলাকায় বাইতুস সালাত জামে মসজিদে বিস্ফোরণে এক শিশু, মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক হান্নান সাউদসহ ৩১ জনের মৃত্যু হয়। বিস্ফোরণে মসজিদের ছয়টি এসি পুড়ে গেছে ও থাই জানালার গ্লাস উড়ে গেছে। গুরুতর অবস্থায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে আরও পাঁচজন চিকিৎসাধীন আছেন। তাঁদের অবস্থা সংকটাপন্ন।
বিস্ফোরণের কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে তিতাস গ্যাস মসজিদের পূর্ব ও উত্তর পাশের সড়কের পুরো মাটি খুঁড়ে পরিত্যক্ত পাইপলাইনে ছয়টি ছিদ্র দেখতে পান। এ ঘটনায় তিতাসের চার কর্মকর্তাসহ আটজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।