দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্যতম প্রবেশদ্বার রাজবাড়ী সদর উপজেলার গোয়ালন্দ মোড় এলাকায় আটকে রাখা হচ্ছে ঢাকাগামী পণ্যবাহী গাড়ি। দৌলতদিয়া ঘাটে যানজট বা গাড়ির চাপ কমাতে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে এর ফলে মহাসড়কে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থেকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে চালক-সহকারীদের। আজ মঙ্গলবার দুপুরে প্রায় চার কিলোমিটার লম্বা লাইনে কয়েক শ গাড়ি আটকে থাকতে দেখা যায়।
দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের গোয়ালন্দ মোড় থেকে রাজবাড়ীর দিকে আহ্লাদীপুর পর্যন্ত সড়কের এক পাশে সারিবদ্ধভাবে পণ্যবাহী গাড়ির দীর্ঘ লাইন। প্রায় চার কিলোমিটার লম্বা এই লাইনে থাকা অধিকাংশ গাড়ি আজ সকালের দিকে আসা। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা ঢাকামুখী এসব গাড়ি দৌলতদিয়া ঘাট দিয়ে নদী পার হওয়ার অপেক্ষা করছে। তবে অভিযোগ রয়েছে, দীর্ঘ লাইনে আটকে থাকা অনেক গাড়িকে স্থানীয় চক্র কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে যোগসাজশ করে লাইন ভেঙে আগে বের হয়ে যাওয়ার সুবিধা দিতে উৎকোচ নিচ্ছে।
অভিযোগ রয়েছে, দীর্ঘ লাইনে আটকে থাকা অনেক গাড়িকে স্থানীয় চক্র কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে যোগসাজশ করে লাইন ভেঙে আগে বের হয়ে যাওয়ার সুবিধা দিতে উৎকোচ নিচ্ছে।
দুপুরে গোয়ালন্দ মোড় থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে রাজবাড়ীর দিকে সড়কে সিরিয়াল ভঙ্গ করে কয়েকটি গাড়ি লাইন ছেড়ে গোয়ালন্দ মোড়ের দিকে অগ্রসর হতে দেখা যায়। এ সময় লাইনে অপেক্ষারত বাকি গাড়িচালকেরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সিরামিকসের পণ্যবোঝাই ট্রাকের চালক আবদুর রহিম বলেন, ‘সকাল সাড়ে আটটার দিকে এসে সিরিয়ালে বসে আছি। চার ঘণ্টার বেশি সময় ধরে আটকে থেকে সিরিয়াল মেনে সামনের দিকে আগাচ্ছি। অথচ আমার পেছন দিক থেকে একটি কাভার্ড ভ্যান বের হয়ে গেল। এসব গাড়ির চালক স্থানীয় কিছু ব্যক্তির মাধ্যমে ট্রাফিক পুলিশকে টাকা দিয়ে বের হয়ে গেল।’
এই সড়ক পুরোটা ফাঁকা। প্রকৃতির কাজ সারতে কোথাও শৌচাগারের ব্যবস্থা নেই। থাকা-খাওয়ার সমস্যা। দৌলতদিয়া ঘাটের দুটি বড় বড় টার্মিনাল ফাঁকা পড়ে আছে। এই সড়কে রাতে আটকে থাকায় মাঝেমধ্যে ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটছে। এসব সমস্যা সমাধানে কোনো ব্যবস্থা নেই।নিজাম উদ্দিন, যশোরের বেনাপোল থেকে আসা পণ্যবাহী গাড়ির চালক
সিরিয়াল ভঙ্গ করে আসা নুরুল ইসলাম নামের একজন কাভার্ড ভ্যানচালককে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করতেই প্রথমে তিনি থতমত খেয়ে যান। নিজেকে সামলে নিয়েই তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘সামনে লাইনের ভেতর ফাঁকা থাকার খবর পেয়ে দ্রুত বের হয়েছি। এ ছাড়া কোনো সিস্টেম-টিস্টেম করিনি। তবে অনেকেই সিস্টেম করে বের হয়ে যায়, এ কথা সত্য।’ তিনি আরও বলেন, ‘খুলনা থেকে তেলের ব্যারেল নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা করে সকাল ১০টার দিকে এখানে এসে লাইনে আটকে ছিলাম।’
লাইনেই দাঁড়িয়ে থাকা যশোরের বেনাপোল থেকে আসা পণ্যবাহী গাড়ির চালক নিজাম উদ্দিন ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘এই সড়ক পুরোটা ফাঁকা। প্রকৃতির কাজ সারতে কোথাও শৌচাগারের ব্যবস্থা নেই। থাকা-খাওয়ার সমস্যা। দৌলতদিয়া ঘাটের দুটি বড় বড় টার্মিনাল ফাঁকা পড়ে আছে। এই সড়কে রাতে আটকে থাকায় মাঝেমধ্যে ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটছে। এসব সমস্যা সমাধানে কোনো ব্যবস্থা নেই।’
এদিকে উৎকোচ গ্রহণের অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গোয়ালন্দ মোড় ট্রাফিক বক্সে দায়িত্বরত সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এ ধরনের অভিযোগ মোটেও সত্য নয়। প্রতিদিন শত শত গাড়ি আসা-যাওয়া করে। অনেক সময় ফরিদপুর বা ওই রুটের গাড়ি লাইনের পেছনে থেকেও বের হয়ে চলে যায়। অনেকে মনে করেন পেছনের গাড়ি সুবিধা দিয়ে আগে যাচ্ছে। আবার গোয়ালন্দ মোড় এলাকায় বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পণ্য নামানোর জন্য লাইন ভেঙে এগিয়ে আসে।’
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক আবু আবদুল্লাহ বলেন, ১৮টি ফেরি চালু থাকায় ঘাটে চাপ কিছুটা কম। এ ছাড়া দুটি বড় টার্মিনাল ফাঁকা পড়ে আছে। ঘাটে যানজট বা গাড়ির চাপ কমাতেই গোয়ালন্দ মোড় এলাকায় পণ্যবাহী গাড়ি আটকে রাখা হচ্ছে।