২০০০ সালে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ পৌরসভা প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত তিনটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে প্রতিযোগিতাপূর্ণ নির্বাচন হয়। তবে ১৪ ফেব্রুয়ারি চতুর্থ দফায় অনুষ্ঠেয় পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপির কোনো প্রার্থী নেই। তাই লড়াই হচ্ছে আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে।
পৌরসভা ও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০০০ সালের ২৬ জুলাই থেকে গোয়ালন্দ পৌরসভার কার্যক্রম শুরু। ২০০২ সালের ১৩ মে নির্বাচনে শেখ মো. নিজাম প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন। সাড়ে ৮ বছর পর ২০১১ সালের ১৭ জানুয়ারি দ্বিতীয় দফা নির্বাচন হয়। শেখ মো. নিজামের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন পৌর বিএনপির সভাপতি রেজাউল হাসান ইদ্রিস এবং আওয়ামী লীগ নেতা নাজিরুল ইসলাম দুলু। দ্বিতীয়বারেও মেয়র নির্বাচিত হন শেখ মো. নিজাম। তৃতীয় দফা ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে মেয়র শেখ মো. নিজাম স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে (জগ) প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে যুবলীগ নেতা নজরুল ইসলাম মণ্ডল (নৌকা), পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাসেম মণ্ডল (ধানের শীষ) ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী সাংবাদিক হেলাল মাহমুদ (লাঙ্গল) নির্বাচন করেন। এবার প্রায় আড়াই হাজার ভোটের ব্যবধানে টানা তিনবারের মতো মেয়র নির্বাচিত হন শেখ মো. নিজাম।
তৃতীয় দফা নির্বাচন শেষে সাবেক মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের হাত ধরে রাজবাড়ীর এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগে যোগ দেন শেখ মো. নিজাম। তিনি গোয়ালন্দ উপজেলা আওয়ামী লীগের ১ নম্বর কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য। এবার কেন্দ্রীয়ভাবে দলীয় মনোনয়ন চেয়ে না পেয়ে তিনি ও তাঁর ছোট ভাই শেখ নজরুল ইসলাম স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। পরে মেয়র শেখ নিজাম মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেওয়ায় ছোট ভাই শেখ মো. নজরুল ইসলাম (জগ) প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নৌকার বিপক্ষে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করায় এবং ছোট ভাইয়ের পক্ষে প্রচারণায় অংশ নেওয়ার অভিযোগে ৪ ফেব্রুয়ারি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী ইরাদত আলী স্বাক্ষরিত দলীয় প্যাডে আওয়ামী লীগ থেকে শেখ মো. নিজাম ও শেখ মো. নজরুল ইসলামকে বহিষ্কার করা হয়।
নৌকার প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন পৌর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নজরুল ইসলাম মণ্ডল ও জাতীয় পার্টির (এরশাদ) প্রার্থী হেলাল মাহমুদ (লাঙ্গল)। প্রতি নির্বাচনে তিন রাজনৈতিক দলের প্রার্থী থাকলেও এ বছর বিএনপি কোনো প্রার্থী দেয়নি। দলের ভেতর অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও দ্বিধা–বিভক্তির কারণে অনেকটা নেতৃত্বের সংকট দেখা দেওয়ায় বিএনপি কোনো প্রার্থী দিতে পারেনি।
উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবলু বলেন, ‘উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী দেওয়া হয়। ভোটারদের উপস্থিতি কম এবং দলের দ্বিধা–বিভক্তির কারণে মাত্র ২ হাজার ৩০০ ভোট পায়। গত পৌরসভা নির্বাচনে প্রার্থী থাকলেও লজ্জাজনক ভোট পাওয়ায় অনেকে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। বর্তমানে টাকা ছাড়া নির্বাচন হয় না। স্বতন্ত্র ও সরকারদলীয় প্রার্থীর অর্থের প্রভাবের কাছে টিকে থাকা মুশকিল। দলের দ্বিধাবিভক্তিতে আমরা এবারের পৌরসভা নির্বাচনে প্রার্থী দিতে পারিনি।’
প্রার্থী না দেওয়া প্রসঙ্গে রাজবাড়ী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক লিয়াকত হোসেন বলেন, ‘সদ্য উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপি থেকে প্রার্থী দিতে যোগ্য অনেককে আহ্বান করলেও কেউ সাড়া দেননি। পরে বাধ্য হয়ে মাহাবুব আলম শাহিন নামের একজনকে দিই। কিন্তু জেলা বিএনপির সাবেক সাংসদ, সাবেক সভাপতি আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়াম ও সাবেক সহসভাপতি বর্তমান জেলা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আসলাম মিয়া চরম বিরোধিতা করেন। এসব কারণে পৌরসভা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী খুঁজে পাইনি।’
১৪ ফেব্রুয়ারি গোয়ালন্দ পৌরসভার নির্বাচনে মেয়র পদে পৌর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নজরুল ইসলাম মণ্ডল (নৌকা), স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান মেয়র শেখ মো. নিজামের ছোট ভাই তরুণ শিল্পপতি শেখ মো. নজরুল ইসলাম (জগ) ও জাতীয় পার্টি (এরশাদ) মনোনীত দলের জেলা কমিটির যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক হেলাল মাহমুদ (লাঙ্গল) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
প্রসঙ্গত, গোয়ালন্দ পৌরসভার মোট ভোটার সংখ্যা ১৬ হাজার ৫৪৮। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৮ হাজার ২৫৪ জন এবং নারী ভোটার সংখ্যা ৮ হাজার ২৯৪।