গাইবান্ধার তাজনগর গ্রামের কৃষক মোখলেছুর রহমান (৫১) আগে ধান-গম চাষাবাদের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন। এতে লাভ দূরের কথা, উৎপাদনের খরচই উঠত না। তাই এসব ফসলের চাষ ছেড়ে দেন তিনি। শুরু করেন গোলাপ ফুলের চাষ। চার বিঘা জমিতে গোলাপ চাষ করে সাফল্য এনেছেন। আট বছর ধরে মাসে গড়ে ৩০-৩৫ হাজার টাকা আয় করছেন।
সাদুল্যাপুর উপজেলার ইদিলপুর ইউনিয়নের কৃষক মোখলেছুর রহমান। গতকাল বুধবার সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, জমিজুড়ে ফুটেছে গোলাপ। শ্রমিকেরা জমির পরিচর্যা করছেন। কিছু তরুণ-তরুণী বাগানে সেলফি তুলছেন। মোখলেছুর বলেন, সকালে যখন জমিতে গিয়ে দেখেন গোলাপ ফুটেছে, তখন আনন্দে বুক ভরে যায়। শুধু ব্যবসার জন্য নয়, গোলাপের সৌন্দর্যের প্রতিও তিনি মুগ্ধ।
মোখলেছুর বলেন, পৈতৃক সূত্রে পাওয়া জমিতে ধান–গমের চাষাবাদ করতেন। সার, বীজ, শ্রমিক ও কৃষি উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচ উঠত না। এরপর লেবুর চাষ করেও লাভ হয়নি। তিনি পরামর্শের জন্য তৎকালীন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ওবায়দুর রহমানের (বর্তমানে রংপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক) কাছে যান। তাঁর পরামর্শে গোলাপ চাষের পরিকল্পনা করেন।
২০১৪ সালে পাশাপাশি চার বিঘা জমিতে লাল গোলাপের চাষ করেন। এতে খরচ হয় প্রায় ১০ লাখ টাকা। ১০০টি গোলাপ পাইকারি হিসাবে বর্তমানে ৫০ টাকা এবং শীতের সময় ৪০০-৫০০ টাকায় বিক্রি করছেন। গাইবান্ধা ছাড়াও রাজশাহী, রংপুর, সিরাজগঞ্জ ও দিনাজপুরে ফুল বিক্রি করছেন তিনি। প্রতিবছর প্রায় ১৬ লাখ টাকার গোলাপ বিক্রি করছেন। শ্রমিক ও অন্যান্য খরচ বাদে বার্ষিক আয় হচ্ছে চার লাখ টাকা। এ হিসেবে তাঁর মাসিক আয় ৩০-৩৫ হাজার টাকা।
মোখলেছুর বলেন, বছরের নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শীত মৌসুমে ফুলের চাহিদা বেড়ে যায়। এ সময় ফুল বিক্রি হয় বেশি। দামও তুলনামূলক বেশি থাকে। তাঁর বাগানে তিনজন শ্রমিক কাজ করেন। তাঁর সরবরাহ করা গোলাপ দিয়ে স্থানীয় ফুল ব্যবসায়ীরা লাভবান হচ্ছেন।
গাইবান্ধা শহরের ডিবি রোডের মণিষা নামের ফুল বিক্রয়কেন্দ্রের মালিক শ্যামল কুমার বলেন, যশোর থেকে গাইবান্ধায় ফুল আনতে আনতেই শুকিয়ে যেত, পরিবহন খরচ বেশি পড়ত। এখন যশোরে যেতে হয় না। সাদুল্যাপুরে কম টাকায় ফুল পাওয়া যাচ্ছে। পাশাপাশি ক্রেতারা তাজা ফুল কম দামে পাচ্ছেন। বর্তমানে প্রতিটি গোলাপ স্থানীয় বাজারে ৫ টাকা এবং শীতের সময় ১০-২৫ টাকায় বিক্রি হয়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, উপজেলায় ৯৬ বিঘা জমিতে নানা জাতের ফুলের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে লাল গোলাপ ৪৫ বিঘা, সাদা গোলাপ ৩০ বিঘা, গ্লাডিওলাস ৬ বিঘা, চন্দ্রমল্লিকা ৬ বিঘা, জিনিয়া ৩ বিঘা ও রজনীগন্ধা ৬ বিঘা। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মতিউল আলম বলেন, ফুল কাটা ও পরিচর্যার জন্য উপজেলার ১৬৫ জন ফুলচাষিকে সরঞ্জাম দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রশিক্ষণ ও ফুল চাষে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।