গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি, সংরক্ষণ বা সরবরাহ—কোনো কিছুতেই নেই সতর্কতা। মানা হচ্ছে না নিয়মনীতিও।
ওষুধ, মুদি, মনিহারি, হার্ডওয়্যার বা স্যানিটারি দোকান—প্রায় সবখানেই বাড়তি পণ্য হিসেবে রাখা হয়েছে এলপিজি গ্যাসের সিলিন্ডার। সিলিন্ডারগুলোর কোনোটি দোকান ছাড়িয়ে রাস্তার ওপর, কোনোটি অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে ঘিঞ্জি আকারে, কোনোটি–বা রাখা হয়েছে দোকানে থাকা বৈদ্যুতিক বোর্ড বা পেট্রোলিয়াম পণ্যের পাশ ঘেঁষে। বিক্রি, সংরক্ষণ বা সরবরাহ—কোনো কিছুতেই নেই সতর্কতা। মানা হচ্ছে না নিয়মনীতিও।
গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রির এ চিত্র গাজীপুর জেলায়। নিয়ম অনুযায়ী, গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি ও মজুতের স্থানে পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের প্রয়োজন হয়। প্রয়োজন হয় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতারও। এ ক্ষেত্রে ফায়ার সার্ভিস লাইসেন্স, জ্বালানি অধিদপ্তরের লাইসেন্স, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেওয়ার বিধানও রয়েছে। কিন্তু এসবের কোনোটি মানা হচ্ছে না গাজীপুরে। নগর বা নগর এলাকার বাইরে বিভিন্ন দোকানপাটে সাধারণ পণ্যের মতোই বিক্রি হচ্ছে গ্যাস সিলিন্ডার। এতে বাড়ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি।
বিস্ফোরক পরিদপ্তরের নিয়ম অনুযায়ী, খুচরা দোকানে বিক্রির জন্য সর্বোচ্চ ১০টি গ্যাস সিলিন্ডার রাখা যায়। ১০টির বেশি গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করতে হলে বিস্ফোরক পরিদপ্তরের লাইসেন্স বাধ্যতামূলক। কিন্তু গাজীপুর নগর (সিটি করপোরেশন) এলাকাসহ পাঁচটি উপজেলায় গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে কয়েক হাজার দোকানে। এর মধ্যে অধিকাংশ দোকানের নেই লাইসেন্স বা অনুমতিপত্র।
এক সপ্তাহ ধরে গাজীপুর নগর এলাকার টঙ্গী বাজার, বউবাজার, কলেজ গেট, বোর্ডবাজার, জয়দেবপুর, কোনাবাড়ী, কাশিমপুর, আরিচপুর, আউচপাড়াসহ কাপাসিয়া, কালীগঞ্জ, শ্রীপুর, কালিয়াকৈরসহ সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে সড়কের দুই পাশ বা পাড়া–মহল্লার দোকানপাটে গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি হতে দেখা যায়। এসব দোকানের মধ্যে রয়েছে ওষুধ, চা, মুদি, মনিহারি, হার্ডওয়্যার, স্যানিটারিসহ অন্যান্য পণ্যের দোকান। এমনকি মুঠোফোনের দোকানেও অবাধে বিক্রি হচ্ছে সিলিন্ডার। এ ছাড়া বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও আশপাশের জনবহুল এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে এলপিজি গ্যাসের সিলিন্ডার গুদামজাত করে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে দোকানগুলোর একটিতেও নেই অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র।
টঙ্গী বাজারে তুরাগ নদ–সংলগ্ন একটি মুদিদোকানে কয়েকটি গ্যাস সিলিন্ডার মজুত করে রাখতে দেখা যায়। দোকানি সিলিন্ডারগুলো রেখেছেন একটির ওপর একটি। কয়েকটি সিলিন্ডার দোকান ছাড়িয়ে চলে এসেছে রাস্তার ওপর।’
একইভাবে বিভিন্ন ওষুধের দোকান বা মুঠোফোনের দোকানেও সিলিন্ডার বিক্রি করতে দেখা যায়। এর মধ্যে বোর্ডবাজার এলাকার ‘সেবা ঔষধালয়’–এর বিক্রেতা আবু হানিফ বলেন, অনেক বাসায় গ্যাস নেই; কিংবা থাকলেও ঠিকমতো রান্না করা যায় না। এ কারণে সিলিন্ডার গ্যাসের প্রচুর চাহিদা। তাই তিনিও ওষুধের পাশাপাশি দোকানে কয়েকটি সিলিন্ডার রেখেছেন। তবে তাঁর মতে, নিয়ম মেনে তিনি সতর্কতার সঙ্গে সিলিন্ডারগুলো বিক্রি করছেন।
বিস্ফোরক অধিদপ্তরের সহকারী বিস্ফোরক পরিদর্শক (ঢাকা) সানজিদা আক্তার বলেন, ‘সাধারণত কোনো দোকানে ১২৫ কেজির বেশি গ্যাস মজুত রাখলে বিস্ফোরক অধিদপ্তরের লাইসেন্স প্রয়োজন হয়। তবে ১২৫ কেজির বেশি গ্যাস মজুত রাখছে, কিন্তু লাইসেন্স নেই, এমন দোকানির বিরুদ্ধে প্রায়ই আমরা অভিযান পরিচালনা করি।’