চান্দনা চৌরাস্তা থেকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক ধরে কয়েক কিলোমিটার গেলেই কড্ডা এলাকা। সেখানে কড্ডা সেতুর পাশেই গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বিশাল ময়লার ভাগাড়। প্রতিদিন শত শত টন ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে এই ভাগাড়ে।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনে আয়তন প্রায় ৩২৯ বর্গকিলোমিটার। সিটি করপোরেশন এলাকায় জনসংখ্যা প্রায় ৩৫ লাখ। শিল্পকারখানা আছে প্রায় দুই হাজার। অথচ এত জনসংখ্যা, এত কলকারখানার বর্জ্য ও পয়োনিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। নগরজুড়েই ময়লা-আবর্জনা। সর্বত্রই পরিচ্ছন্নতার অভাব।
কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, গাজীপুর যেন আবর্জনার শহর। সামান্য বৃষ্টিতেই অনেক রাস্তা ময়লা পানিতে ডুবে যায়। সম্প্রতি কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে টঙ্গী শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতাল ও টঙ্গী পূর্ব থানা প্রায় কোমরপানিতে ডুবে যায়। এতে সেবাপ্রার্থী, চিকিৎসক ও কর্মকর্তারা দুর্ভোগে পড়েন। তাঁরা বলেন, টঙ্গী থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্থানে আবাসিক এলাকায় ময়লা–আবর্জনা ফেলার কারণে নগরবাসীর জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। ময়লায় রোগব্যাধি ছড়িয়ে পড়ছে। অন্যদিকে পরিবেশও মারাত্মক হুমকির মধ্যে রয়েছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) গাজীপুর শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. হাসান ইউছুব বলেন, ‘ময়লা-আবর্জনা গাজীপুরের একটি বড় সমস্যা। এটা নিয়ে বড় পরিকল্পনা করা প্রয়োজন। খোলে স্থানে ময়লা-আবর্জনা ফেলায় পরিবেশের যেমন ক্ষতি হচ্ছে, তেমনি নগরবাসীও স্বাস্থ্যঝুঁকিতে আছে।’
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কনজারভেন্সি পরিদর্শক মদন চন্দ্র দাস প্রথম আলোকে বলেন, ময়লা ফেলার স্থায়ীভাবে নিজস্ব জায়গার ব্যবস্থা না করা পর্যন্ত সমস্যার সমাধান হবে না। নতুন জায়গা খোঁজা হচ্ছে। বর্তমানে প্রতিদিন গাজীপুর সিটি থেকে প্রায় চার হাজার মেট্রিক টন ময়লা-আবর্জনা বের হচ্ছে। এর মধ্যে ২ হাজর ৫০০ মেট্রিক টন ময়লা-আবর্জনা প্রতিদিন সিটি করপোরেশন সংগ্রহ করে। সিটির ৭ ও ৮ জোনের ময়লা স্থানীয় কমিউনিটি তাদের পরিবহন দিয়ে সংগ্রহ করে। গাজীপুরে ২২টি সেকেন্ডারি সাবস্টেশন রয়েছে। এর মধ্যে ২টি পাকা, বাকি ২০টিই খোলা জায়গায়। এসব খোলা জায়গা থেকে ময়লা সংগ্রহ করে ফেলা হচ্ছে কড্ডা এলাকায়। সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলতে ফেলতে ১৬-১৭ ফুট উচ্চতা হয়ে গেছে। বর্তমানে তাদের ৩৮০ জন কর্মী ও ৪৫টি যানবাহন রয়েছে। ময়লার ওপরে বিদ্যুতের তার থাকায় ভেকু দিয়ে কাজ করার সময় কয়েকবার বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পড়ে গেছে।
ময়লা–আবর্জনা নিয়ে খুব বিপদের মধ্যে আছি। যেখানে–সেখানে ময়লা–আবর্জনা ফেলে রাখায় পরিবেশও নষ্ট হচ্ছে।নুরুল ইসলাম, ব্যবসায়ী, টঙ্গী মরকুন এলাকা
গাজীপুর সিটি করপোরেশন হয়েছে ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে। ২০১৩ সালের জুলাইয়ে সিটি নির্বাচনের পর ইতিমধ্যে সাত বছর কেটে গেছে। কিন্তু দেশের অন্যতম শিল্প-অধ্যুষিত গাজীপুরে কলকারখানা, রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি গড়ে উঠছে অপরিকল্পিতভাবে।
সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চান্দনা চৌরাস্তা থেকে হাতের ডানের সড়ক ধরে জয়দেবপুর, সিটি করপোরেশনের মূল কেন্দ্র। সেখানে যেতেও ময়লার ভাগাড় চোখে পড়বে অন্তত দুটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায়। শহরে ঢুকতে সার্ডি রোডের মোড় ও শিববাড়ি মোড়ে ফেলা হয় বসতবাড়ির ময়লা-আবর্জনা। এই দুই জায়গা বাদে জয়দেবপুর রেল ক্রসিংয়ের আগপর্যন্ত কয়েক কিলোমিটার দীর্ঘ রাস্তায় কিছু দূর পরপর ময়লা-আবর্জনা চোখে পড়ে। সার্ডি রোডের মোড়ে যেখানে বর্জ্য ফেলা হয়, এর একটু ভেতরেই পরিবেশ অধিদপ্তরের কার্যালয়।
ওই অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবদুস সালাম সরকার জানান, সড়কের পাশে আবর্জনা না ফেলতে সিটি করপোরেশনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এরপরও সিটি করপোরেশন থেকে সেখানে নিয়মিত ময়লা ফেলে যাচ্ছে।
টঙ্গী-ঘোড়াশাল সড়কের স্টেশন রোড ধরে কিছু দূর পরপর দেখা যায়, খোলা জায়গায় বসতবাড়ির বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। এই সড়কের আহসান উল্লাহ মাস্টার উড়ালসড়কের মুখে, শিমুলতলী ব্রিজ এলাকা, মরকুন, আমতলী এলাকায় মূল সড়কের পাশে আবর্জনা স্তূপ করে রাখা হয়। সাধারণ মানুষ এসব জায়গায় ময়লা-আবর্জনা ফেলছে, বিষয়টি তা নয়। সিটি করপোরেশনের গাড়ি দিয়ে তাদের কর্মীরাই খোলা জায়গায় আবর্জনা ফেলছেন। এসব জায়গা থেকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে।
টঙ্গী মরকুন এলাকার ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম বলেন, ‘ময়লা–আবর্জনা নিয়ে খুব বিপদের মধ্যে আছি। যেখানে–সেখানে ময়লা–আবর্জনা ফেলে রাখায় পরিবেশও নষ্ট হচ্ছে।’
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এস এম সোহরাব হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আর কোনো জায়গা না থাকায় প্রতিদিন চার মেট্রিক টন ময়লা সেখানে ফেলা হচ্ছে। নতুন করে জায়গা খোঁজা হচ্ছে। ময়লা দিয়ে সার তৈরি করবে, এমন কিছু প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও কথা হচ্ছে। আমাদের আরও কিছু পরিকল্পনা রয়েছে।’