করোনা সংক্রমণের কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। গত ১২ সেপ্টেম্বর প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়েছে। টানা দেড় বছর স্কুল বন্ধ থাকায় অনেকেই যেমন স্কুলমুখী হয়েছে, তেমনি অনেকেই ঝরে পড়েছে।
প্রায় এক মাস ক্লাস শেষে প্রাথমিক স্তরের বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী উপস্থিতি পাওয়া গেছে ৭৯ দশমিক ৮৯ শতাংশ। অর্থাৎ ২০ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী অনুপস্থিত রয়েছে। তাদের খোঁজ মিলছে না। এসব শিক্ষার্থীর ঝরে পড়ার আশঙ্কা করছেন শিক্ষা প্রশাসনের কর্মকর্তারা। অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের স্কুলে ফেরানোর উদ্যোগ নিচ্ছে কর্তৃপক্ষ। এদিকে গাজীপুরে মাধ্যমিকেও ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থী অনুপস্থিত রয়েছে।
১০ অক্টোবর গাজীপুর প্রাথমিক ও মাধ্যমিক অফিস থেকে পাওয়া হিসাব বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
কালীগঞ্জ মসলিন কটন মিলস উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আবদুর রহমান আরমান বলেন, ‘খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি, অষ্টম, নমব ও দশম শ্রেণি কয়েকজন ছাত্রী বাল্যবিবাহের শিকার হয়েছে। যার কারণে অনুপস্থিত। কিছু ছেলে অল্প বয়সেই পরিবারের কারণে চাকরিতে যোগ দিয়েছে। তারাও স্কুলে আসছে না। আমরা তাদের স্কুলে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি।’
প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় দুই শিফটে স্কুল পরিচালনা করা হয়। দুই শিফটি মিলিয়ে গাজীপুর সদর উপজেলার শিক্ষার্থী ছিল ১৬ হাজার ৪৮৪ জন। করোনার পর বর্তমানে স্কুলে আসছে ১২ হাজার ১৩৫ জন। কালীগঞ্জ উপজেলার শিক্ষার্থী ৭ হাজার ৪৯৬ জনের মধ্যে উপস্থিত হচ্ছে ৬ হাজার ১৭০ জন। কাপাসিয়ার ৯ হাজার ৫১১ জনের মধ্যে উপস্থিত হচ্ছে ৮ হাজার ৬০৩ জন। শ্রীপুরের ১৫ হাজার ১৩৩ জনের মধ্যে উপস্থিত হচ্ছে ১১ হাজার ৯৭২ জন। কালিয়াকৈরের শিক্ষার্থী ৯ হাজার ৯০ জন। এর মধ্যে উপস্থিত হচ্ছে ৭ হাজার ৬৩৭ জন। টঙ্গী অঞ্চলে শিক্ষার্থী সংখ্যা ২ হাজার ৪২৩ জন, এর মধ্যে বর্তমানে উপস্থিত হচ্ছে ১ হাজার ৫৮০ জন।
এতে দেখা যায়, গাজীপুরে করোনার আগে মোট শিক্ষার্থী ছিল ৬০ হাজার ১৩৭ জন। দেড় বছর পর স্কুল খোলার পরে গত ১০ অক্টোবরের হিসাবমতে দেখা গেছে উপস্থিত ৪৮ হাজার ৭৭ জন। তাতে এখন পর্যন্ত ১২ হাজার ৬০ জন শিক্ষার্থী অনুপস্থিত।
গাজীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোফাজ্জল হোসেন বলেন, সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী গাজীপুরে প্রাথমিকে ১২ হাজার ৬০ জন শিক্ষার্থী অনুপস্থিত আছে। এদের মধ্যে অনেকেই এক দিন হয়তো আসেনি কোনো কারণে। আবার পরদিন হয়তো উপস্থিত ছিল। নানা কারণে অল্প কিছু শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে শিক্ষার্থীদের স্কুলে ফিরিয়ে আনতে শিক্ষকেরা তাঁদের অভিভাবকের সঙ্গে কথা বলছেন এবং নতুন করে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।
গাজীপুরের কালিয়াকৈরের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিল আরফান সরকার। সে চতুর্থ শ্রেণিতে লেখাপড়া করত। তার বাবা ইমরান সরকার জানান, তাঁদের গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া। তিনি একটি কারখানায় কাজ করতেন। করোনার কারণে তাঁর চাকরি চলে গেলে পুরো পরিবার নিয়ে গ্রামের ফিরে গেছেন। এখন তাঁদের এখানেই একটি স্কুলে ছেলেকে ভর্তি করে দেবেন।
গাজীপুর জেলা মাধ্যমিক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ ১০ অক্টোবরের হিসাবমতে সদর এলাকায় শতকরা ৮০ ভাগ, শ্রীপুরে ৬৫ ভাগ, কাপাসিয়ার ৬০ ভাগ, কালিয়াকৈরের ৮০ ও কালীগঞ্জে ৭৯ ভাগ শিক্ষার্থী গড়ে উপস্থিত হচ্ছে। তাদের গড় হিসাবে ৩০ ভাগ শিক্ষার্থী করোনার পর থেকে অনুপস্থিত।
শ্রীপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নূরুল আমিন বলেন, শ্রীপুরে করোনার আগে ৩৬ হাজার ৭৫ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল কিন্তু করোনার পরে উপস্থিত হচ্ছে ২৫ হাজার ২৫৩ জন শিক্ষার্থী; যা শতকরা ৭০ ভাগ। বাকি ৩০ ভাগ শিক্ষার্থী নানা কারণে উপস্থিত হচ্ছে না।
গাজীপুর জেলা মাধ্যামিক শিক্ষা কার্যালয়ের গবেষণা কর্মকর্তা মুশফিকুর রহমান সরকার বলেন, ‘আমি প্রতিদিন একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেছি। এতে দেখা গেছে, করোনার মহামারিতে দীর্ঘ ছুটির কারণে প্রতিটি বিদ্যালয়েই ১০ থেকে ১৫ শতাংশ শিক্ষার্থী কমেছে।’
স্কুলে অনুপস্থিত থাকা শিক্ষার্থীকে ফেরানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে জানিয়ে গাজীপুরের সহকারী জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জুবায়ের ছাঈদ বলেন, প্রতিষ্ঠানের প্রধানেরা অভিভাবকদের সঙ্গে সরাসরি বা টেলিফোনে যোগাযোগ করছেন। তাদের সমস্যাগুলো জানার চেষ্টা করা হচ্ছে।