গাজীপুরের কালিয়াকৈরে ট্রেন–বাসের সংঘর্ষে দুজন নিহতের ঘটনায় সোনাখালী রেলক্রসিংয়ের গেটম্যান রিপন মিয়াকে বরখাস্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
শনিবার ভোর সাড়ে চারটার দিকে সোনাখালী রেলক্রসিং এলাকায় যাত্রীবাহী ট্রেন ও বাসের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে দুজন নিহত ও অন্তত চারজন আহত হন।
দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিরা হলেন নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলা সদর এলাকার সামছুল মিয়ার ছেলে মো. মাসুদ মিয়া (৪২) ও একই উপজেলার বটতলা এলাকার বাবুল মিয়ার স্ত্রী করিমা বেগম (৩৫)। আহত ব্যক্তিরা হলেন সদরের শাহনেওয়াজের ছেলে মো. হারুন (৪০) ও কলমাকান্দার মোস্তফার ছেলে মো. মানিক (৩০) এবং গোপালগঞ্জের কাজুলিয়া এলাকার আফতাব উদ্দিনের ছেলে কামরুল ইসলাম (৫২) ও একই এলাকার আবদুল আলীমের ছেলে মোরশেদ আলম (২৮)।
এলাকাবাসী ও রেলওয়ে পুলিশ জানায়, কালিয়াকৈর বাজার থেকে ধামরাই আঞ্চলিক সড়কের সোনাখালী এলাকায় জয়দেবপুর-উত্তরবঙ্গ রেললাইনের একটি ক্রসিং রয়েছে। নীলফামারীর চিলমারী থেকে ছেড়ে আসা ‘নীলসাগর এক্সপ্রেস’ ট্রেনটি ভোর সাড়ে চারটার দিকে সোনাখালী এলাকা অতিক্রম করার সময় যাত্রীবাহী একটি বাসের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় ওই ট্রেন বাসটিকে ধাক্কা দিয়ে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে নিয়ে যায়। এতে ট্রেনের ইঞ্জিনের সঙ্গে বাসটি আটকে গেলে ট্রেন থেমে যায় এবং বাসটি দুমড়েমুচড়ে যায়। বাসের যাত্রী করিমা বেগম ঘটনাস্থলেই মারা যান। আশপাশের লোকজন অন্যদের উদ্ধার করে কালিয়াকৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মাসুদ মিয়ার মৃত্যু হয়। আহত অন্যদের সেখানে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
ওই ক্রসিংয়ে তিনজন গেটম্যান দায়িত্ব পালন করেন। তাঁদের একজন মোহাম্মদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, গেটম্যান রিপন স্ত্রী নিয়ে ক্রসিংয়ের পাশেই বসবাস করেন। শুক্রবার রাত ১০টা থেকে শনিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত তাঁর দায়িত্ব ছিল। কিন্তু তিনি আলসেমি করে ঘুমিয়ে থাকায়, গেটে ব্যারিয়ার না ফেলায় দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। ঘটনার পর থেকে তাঁকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
নীলসাগর ট্রেনের পরিচালক মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, এ ঘটনার পর থেকে ঢাকার সঙ্গে উত্তরবঙ্গের ট্রেন চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে পড়ে। খবর পেয়ে কালিয়াকৈরের ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ট্রেনের ইঞ্জিনের সামনে আটকে থাকা বাসটি সরিয়ে নিলে সকালে সাড়ে নয়টা থেকে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
জয়দেবপুর জংশনের স্টেশনমাস্টার মো. শাহজাহান মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, দুর্ঘটনার পর ঘটনাস্থলের পশ্চিমাংশে বিভিন্ন স্টেশনে ঢাকাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস, একতা এক্সপ্রেস ও ঘটনাস্থলে নীলসাগর এবং রাজশাহীগামী ধূমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেনটি জয়দেবপুর জংশনে আটকা পড়েছিল। তিনি আরও জানান, এ ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার কারণে গেটম্যান রিপন মিয়াকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া ঘটনার তদন্তে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কালিয়াকৈর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রাজীব চক্রবর্তী জানান, রেলওয়ে পুলিশ নিহত দুজনের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে।