গাছ গণনার চাকরি দিয়ে প্রতারণা, অর্থ আত্মসাৎ

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

অপূর্ব ব্যানার্জি স্নাতক (সম্মান) পাস করে চাকরি খুঁজছিলেন। একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় (এনজিও) যোগাযোগ করেন তিনি। চাকরি পেতে ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা ২৭ হাজার টাকা দাবি করেন। টাকা দিয়ে শাখা ব্যবস্থাপক পদে চাকরি হয় অপূর্বর। বেতন ১৫ হাজার টাকা। সঙ্গে আরও ভাতা। গত বছর মার্চ মাসে নিয়োগপত্র পান তিনি। তখন থেকে তাঁর চাকরি শুরু। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো বেতন-ভাতা পাননি অপূর্ব।

অপূর্ব ব্যানার্জির মতো নড়াইলের শতাধিক তরুণ–যুবক টাকা দিয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছেন। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, প্রতারণা করে ১৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন উদায়ন সমাজকল্যাণ সমিতির কর্মকর্তারা।

মাঠকর্মীদের ১০ হাজার, শাখা ব্যবস্থাপকদের ১৫ হাজার ও আঞ্চলিক ব্যবস্থাপকদের ২০ হাজার টাকা বেতন নির্ধারণ করা হয়েছিল।

ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এনজিওটির কার্যালয় ছিল নড়াইল শহরের পুরোনো বাস টার্মিনালে। গত বছর ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে ৯৮ জন মাঠকর্মী, ১৫ জন শাখা ব্যবস্থাপক ও ৬ জন আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক নিয়োগ দেওয়া হয়। মাঠকর্মীদের ১০ হাজার, শাখা ব্যবস্থাপকদের ১৫ হাজার ও আঞ্চলিক ব্যবস্থাপকদের ২০ হাজার টাকা বেতন নির্ধারণ করা হয়। তাঁদের কাজ ছিল বাড়ি বাড়ি গিয়ে গাছ গণনা করা, বাড়ির মালিকের যাবতীয় তথ্য নেওয়া এবং গাছ সংরক্ষণের পরামর্শ দেওয়া। এ কাজে নিয়োগ পেতে প্রত্যেককে ঘুষ দিতে হয়েছে ২ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত।

অপূর্ব ব্যানার্জি বলেন, তাঁর কাছ থেকে ২৭ হাজার টাকা ঘুষ নিয়েছিলেন প্রতিষ্ঠানটির জেলা ব্যবস্থাপক তৌহিদুর রহমান। এ পর্যন্ত অপূর্ব কোনো বেতন-ভাতা পাননি। উপরন্ত আরও বিভিন্ন খরচ হয়েছে। ১০ জানুয়ারির মধ্যে টাকা ফেরত দিতে চেয়েছিলেন তৌহিদুর। গত এক মাস কার্যালয় তালাবদ্ধ। কর্মকর্তাদের কারও খোঁজ মিলছে না। মুঠোফোনের নম্বরে কল করেও তাঁদের পাওয়া যাচ্ছে না।

উদায়ন সমাজকল্যাণ সমিতির কার্যক্রম সন্দেহপূর্ণ ছিল। এ কারণে তিন–চার মাস আসে প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।
রতন কুমার হালদার, উপপরিচালক, জেলা সমাজ সেবা কার্যালয়,নড়াইল

মাঠকর্মী পার্থ মুখার্জি অভিযোগ করেন, মাঠকর্মী পদে চাকরি দিতে তাঁর কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা ঘুষ নিয়েছিলেন জেলা ব্যবস্থাপক তৌহিদুর রহমান। এ পর্যন্ত কোনো বেতন পাননি তিনি। এখন কারও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।

আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক পদে চাকরি পেয়েছিলেন সরাফ উদ্দিন চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘প্রায় এক বছর ধরে চাকরি করেছি। আমরা চিনি জেলা ব্যবস্থাপক তৌহিদুর রহমানকে। ঊর্ধ্বতন অন্য কাউকে চিনি না। তৌহিদুরের মাধ্যমে আমরা প্রতারণার শিকার হয়েছি।’

এ বিষয়ে তৌহিদুর রহমান মুঠোফোনে বলেন, ‘উদায়ন সমাজকল্যাণ সমিতির প্রধান কার্যালয় ঢাকার মতিঝিলে। আমি নিজেও প্রতারণার শিকার হয়েছি। জেলা ব্যবস্থাপক পদে চাকরি পেতে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ দিয়েছিলাম। আমার বেতন ধরা হয়েছিল ২৫ হাজার টাকা। আমিও এ পর্যন্ত কোনো বেতন পাইনি। চাকরি দেওয়ার নামে নড়াইল জেলার ১১৯ ব্যক্তির কাছ থেকে ১৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা প্রতারণা করে নিয়ে নিয়েছেন প্রধান কার্যালয়ের কর্মকর্তারা। এ অবস্থায় এক মাস আগে নড়াইলের ভাড়া করা কার্যালয়টি ছেড়ে দিয়েছি।’

তৌহিদুর রহমান আরও বলেন, তাঁর যোগাযোগ ছিল প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) জাহিদুর রহমান খানের সঙ্গে। সিইওসহ প্রধান কার্যালয়ের চার কর্মকর্তার নামে নড়াইল চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে গত ১৭ ডিসেম্বর তিনি প্রতারণার অভিযোগে মামলা করেছেন। ওই অভিযোগ তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

এ বিষয়ে জানতে জাহিদুর রহমান খানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও তাঁর মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

জেলা সমাজ সেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক রতন কুমার হালদার বলেন, উদায়ন সমাজকল্যাণ সমিতির কার্যক্রম সন্দেহপূর্ণ ছিল। এ কারণে তিন–চার মাস আসে প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।