গাওয়া হয় তাঁদের বীরত্বের জয়গান

মৌলভীবাজারে নির্মিত ২০ ডিসেম্বরের শহীদদের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ। প্রথম আলো
মৌলভীবাজারে নির্মিত ২০ ডিসেম্বরের শহীদদের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ।  প্রথম আলো

যুদ্ধ শেষ। দীর্ঘ ৯ মাস জীবন বাজি রেখে তাঁরা শত্রুদের মোকাবিলা করেছেন। জয়ের পতাকা ছিনিয়ে এনেছেন। লাল-সবুজের পতাকা উড়েছে মুক্ত হাওয়ায়। এবার তাঁরা বাড়ি ফিরবেন।

কিন্তু তাঁদের আর বাড়ি ফেরা হলো না। ১৯৭১ সালের ২০ ডিসেম্বর মাইন বিস্ফোরণে শহীদ হলেন একদল মুক্তিযোদ্ধা। মৌলভীবাজারের মানুষ মনে রেখেছে তাঁদের। এখনো শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় উচ্চারিত হচ্ছে তাঁদের নাম, গাওয়া হয় তাঁদের বীরত্বের জয়গান।

মুক্তিযোদ্ধা ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭১ সালের ৮ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সেনারা পিছু হটলে মৌলভীবাজার মুক্ত হয়ে যায়। মুক্ত অঞ্চলে ফিরে আসেন মুক্তিযোদ্ধারা। মুক্তিযোদ্ধারা মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে ক্যাম্প স্থাপন করে অবস্থান করেন। ১৬ ডিসেম্বর সারা দেশ স্বাধীনতা লাভ করে। এর মধ্যেও চলতে থাকে মুক্তিযোদ্ধাদের কাজ। বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানি বাহিনীর পুঁতে রাখা স্থলমাইন অপসারণ করে নিয়ে আসা হয় সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের ক্যাম্পে। ক্যাম্পের একটি কক্ষে তা জমা রাখা হয়।

২০ ডিসেম্বর সকালবেলা হঠাৎ মুহুর্মুহু শব্দে কেঁপে ওঠে পুরো এলাকা। কোনো কিছু বোঝার আগেই স্তূপ করা মাইনে বিস্ফোরণ ঘটে। ক্যাম্পে অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধাদের দেহ খণ্ড-বিখণ্ড হয়ে চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে। কাগজের মতো উড়ে যায় বিদ্যালয়ের টিনের চাল। শহরে নেমে আসে বিষাদ।

পরে এই মুক্তিযোদ্ধাদের দেহাবশেষ এনে মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠের পূর্ব-দক্ষিণ পাশে দাফন করা হয়। এখানেই আছে মৌলভীবাজারের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। এই শহীদ মিনারের পাশেই তৈরি করা হয়েছে ২০ ডিসেম্বরের শহীদদের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ। শহীদদের মধ্যে যাঁদের নাম পাওয়া গেছে, তা লিখে রাখা হয়েছে স্মৃতিস্তম্ভটিতে।

স্মৃতিস্তম্ভটিতে যাঁদের নাম আছে, তাঁরা হলেন সুলেমান মিয়া, রহিম বক্স খোকা, ইয়ানুর আলী, আছকর আলী, জহির মিয়া, ইব্রাহিম আলী, আবদুল আজিজ, প্রদীপ চন্দ্র দাস, শিশির রঞ্জন দেব, সত্যেন্দ্র দাস, অরুণ দত্ত, দিলীপ দেব, সনাতন সিংহ, নন্দলাল বাউরী, সমীর চন্দ্র দাস, কাজল পাল, হিমাংশু কর, জিতেশ চন্দ্র দেব, আবদুল আলী, নুরুল ইসলাম, মোস্তফা কামাল, আশুতোষ দেব, তরণী দেব ও নরেশ চন্দ্র ধর। এই তালিকার বাইরে আবদুল খালিক নামের আরও একজনের নাম পাওয়া গেছে।

সেই থেকে ২০ ডিসেম্বরের দিনটি ‘স্থানীয় শহীদ দিবস’ হিসেবে পালন করে মৌলভীবাজারের জনতা ও প্রশাসন। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ জেলা ইউনিটের সাবেক কমান্ডার জামাল উদ্দিন জানিয়েছেন, দিনটি উপলক্ষে তাঁরা প্রতিবারের মতো বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছেন।