গাইবান্ধা সরকারি কলেজের ছাত্র ওবায়দুল ইসলাম। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে অনার্স চতুর্থ বর্ষে পড়ছেন। বাড়ি গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম বাছোহাটি গ্রামে। গাইবান্ধা শহরের একটি মেসে থেকে রুটিন মেনে লেখাপড়া করছিলেন। করোনাকাল এসে সেই রুটিনে ব্যাঘাত ঘটিয়েছে। ওবায়দুলের মতো গাইবান্ধায় বেশির ভাগ শিক্ষার্থীর পড়াশোনার ওপর করোনাকালের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
ওবায়দুল জানান, মেসের পরিবেশে পারিবারিক ঝামেলা ছিল না। সকালে তিন ঘণ্টা লেখাপড়া। তারপর কলেজে যাওয়া। কলেজ থেকে ফিরে বিকেলে ও সন্ধ্যায় লেখাপড়া সেরে নিয়েছেন। মেসে থাকাকালে লেখাপড়ায় একটা রুটিন হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে প্রায় চার মাস ধরে স্কুল-কলেজ বন্ধ। মেসগুলো বন্ধ। বাড়িতে থেকেই লেখাপড়া চালাতে হচ্ছে।
ওবায়দুল ইসলাম বললেন, ‘কলেজে প্রতিদিন যেসব বিষয় নিয়ে পাঠদান হতো, মেসে রাতে সেগুলো পড়তাম। লেখাপড়ায় একটা চাপ ছিল। বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে আড্ডা দিতাম। মনটা চাঙা ছিল। এখন বাড়িতে থেকে সময় কাটছে না। লেখাপড়ায় মনোযোগ নষ্ট হয়ে গেছে।’ তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাস পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পরীক্ষা হবে। পরীক্ষায় কী করব, বুঝতে পারছি না।’
শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকদের মতে, স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় বাড়িতে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া হচ্ছে না। লেখাপড়ায় শিক্ষার্থীদের অপূরণীয় ক্ষতি হবে। বাড়ি থেকে পড়ে আসার জন্য শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের পড়া দিতেন শিক্ষকেরা। বাড়ি ফিরে শিক্ষার্থীরা পড়ত। নিয়মিত পড়ার চর্চা ছিল। কিন্তু করোনাকালে সব নিয়ম পাল্টে গেছে।
সাদুল্যাপুর উপজেলার দামোদরপুর গ্রামের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী কামরুল ইসলাম বলে, ‘এ বছর কোনো পরীক্ষা হয়নি। তাই পড়াশোনায় মনোযোগ নেই। সারা দিন বন্ধুদের সঙ্গে খেলাধুলা করি।’
গাইবান্ধা শহরের কুটিপাড়া এলাকার একাদশ শ্রেণির ছাত্র লিহাস মিয়া জানায়, আগে সকালে পড়াশোনা করে কলেজে যেত। বিকেলে কলেজ থেকে ফিরে খেলাধুলা করত। এখন কলেজ বন্ধ থাকায় মোবাইল আর ফেসবুকেই বেশি সময় কাটায়।
গাইবান্ধা শহরের আদর্শ কলেজের শিক্ষক গৌতমাশিষ গুহ সরকার বলেন, করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। বাড়িতেও কোনো অভিভাবক সন্তানদের গৃহশিক্ষকের কাছে পড়াচ্ছেন না। শিক্ষার্থীরা দীর্ঘমেয়াদি ছুটি পাওয়ায় পড়ার প্রতি মনোযোগ হারিয়ে ফেলছে, যা শিক্ষার্থীদের জন্য অনেক বড় ক্ষতির কারণ হয়ে যাবে।
কিন্ডারগার্টেন স্কুলের এক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় শুধু শিক্ষার্থীরাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না, ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়েছে শিক্ষকদেরও। কারণ শিক্ষার্থীদের দেওয়া বেতনেই চলে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা।
গাইবান্ধা সদর উপজেলার দারিয়াপুর হাজী ওসমান গনি ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক তোফা মিয়া বলেন, করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো প্রায় চার মাস ধরে বন্ধ থাকায় রুটিন পাল্টে গেছে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর। পড়ার বদলে সারা দিন থাকছে শুধুই খেলাধুলা। কেউ কেউ আসক্ত হচ্ছে টেলিভিশন, ভিডিও গেমস, মোবাইল ফোন-ইন্টারনেটে।