গাইবান্ধায় চাল আত্মসাৎ মামলার ১০ আসামি ইউপি নির্বাচনে হেরে গেছেন

ইউপি নির্বাচন
প্রতীকী ছবি

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে ধর্মীয় সভার নামে বরাদ্দ করা চাল আত্মসাৎ মামলার ১৩ আসামি চতুর্থ ধাপের ইউপি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। চেয়ারম্যান পদের এসব প্রার্থীর মধ্যে ১০ জনই হেরেছেন। জামানত হারিয়েছেন একজন।

গতকাল রোববার ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। মামলার আসামি তিনজন জয়ী হয়েছেন কামদিয়া, সাপমারা ও দরবস্তে। তাঁরা হলেন যথাক্রমে মোশাহেদ হোসেন চৌধুরী, শাকিল আলম ও শরিফুল ইসলাম। এর আগেও তাঁরা এসব ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন। তাঁদের মধ্যে কামদিয়া ও দরবস্তে জয়ী দুজন আওয়ামী লীগের এবং সাপমারায় জয়ী প্রার্থী বিদ্রোহী ছিলেন।

পরাজিত ১০ জনের মধ্যে তিনজন আওয়ামী লীগের, দুজন দলটির বিদ্রোহী, দুজন জাতীয় পার্টির ও বাকিরা স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন। রাজাহার ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও মামলার আসামি আবদুল লতিফ সরকার জামানত হারিয়েছেন।

ভোটাররা বলছেন, এলাকায় প্রার্থীদের জনপ্রিয়তা আছে। কিন্তু এবার মামলার কারণে ভোটাররা তাঁদের (প্রার্থী) থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।

গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ২ হাজার ২৫৩টি ধর্মীয় সভায় খাবারের জন্য ৫ হাজার ৮২৩ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ হয়। যার দাম ২২ কোটি ৩ লাখ ২১ হাজার ৫৯০ টাকা। জাল কাগজপত্র তৈরি করে সব চাল আত্মসাতের সত্যতা পাওয়ায় গত ২৬ আগস্ট দুদকের রংপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক হোসাইন শরীফ বাদী হয়ে মামলা করেন। এতে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ প্রধান, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাসহ (পিআইও) ১৯ জনকে আসামি করা হয়। তাঁদের মধ্যে ১৩ জন এবারের ইউপি নির্বাচনে অংশ নেন।

আসামিদের মধ্যে কাটাবাড়ি ইউনিয়নে রেজাউল করিম (বিদ্রোহী), শাখাহারে তাহাজুল ইসলাম (আ.লীগ), রাজাহারে আবদুল লতিফ সরকার (আ.লীগ), তালুককানুপুরে আতিকুর রহমান (বিদ্রোহী), নাকাইহাটে আবদুল কাদের প্রধান (স্বতন্ত্র) নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এ ছাড়া রাখালবুরুজে শাহদাত হোসেন (জাপা), ফুলবাড়ীতে আবদুল মান্নান মোল্লা (জাপা), কোচাশহরে মোশাররফ হোসেন (স্বতন্ত্র), শিবপুরে সেকেন্দার আলী মণ্ডল (আ.লীগ) ও শালমারায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন আমির হোসেন (স্বতন্ত্র)। তাঁরা সবাই পরাজিত হয়েছেন।

কাটাবাড়ি ইউনিয়নে রেজাউল করিম গত নির্বাচনে জয়ী হন। এবার তাঁর পরাজয়ের কারণ হিসেবে ইউনিয়নের বাগদা এলাকার বাসিন্দা সাজু মিয়া বলেন, রেজাউল করিম অনেক উন্নয়ন করেছেন। এলাকায় তাঁর জনপ্রিয়তাও আছে। তবে মামলার কারণে কিছু লোক মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।

তবে পরাজিত প্রার্থী রেজাউল করিম বলেন, মামলার কোনো প্রভাব নির্বাচনে পড়েনি। তিনি ওই চাল আত্মসাতের ঘটনা জানতেন না। আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর সমর্থকদের ভোট জালিয়াতির কারণে তাঁর পরাজয় হয়েছে। ভোটের ব্যবধানও সামান্য।

তালুককানুপুরের পরাজিত প্রার্থী আতিকুর রহমান বলেন, চাল আত্মসাতের ঘটনার সঙ্গে তিনি জড়িত ছিলেন না। পরাজয় অন্য কারণে হয়েছে।

গোবিন্দগঞ্জ নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক মতিন মোল্লা বলেন, দুদকের করা চাল আত্মসাৎ মামলার খবর ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরাও এই সুযোগ কাজে লাগিয়েছেন। ভোটারদের মধ্যে সচেতনতা বেড়েছে। যার প্রভাব নির্বাচনে পড়েছে। যাঁরা জয়ী হয়েছেন, তাঁরা কালোটাকার প্রভাবে জিতেছেন।

এ বিষয়ে সাপমারা ইউনিয়নে নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান শাকিল আলম বলেন, আইনের চোখে পলাতক হতে পারেন, তবে এখনো আদালতে তাঁদের অপরাধ প্রমাণিত হয়নি। তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে ইউনিয়নের অনেক উন্নয়ন করেছেন। ফলে মামলার বিষয়টি নির্বাচনে প্রভাব ফেলেনি।

মামলা পরিস্থিতি

মামলার মোট ১৯ আসামির মধ্যে গোবিন্দগঞ্জের পিআইও বাদে ১৮ জন আসামি গত ২৭ সেপ্টেম্বর উচ্চ আদালত থেকে ৮ সপ্তাহের আগাম জামিন নেন। উচ্চ আদালত জামিনের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে গাইবান্ধা সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে আসামিদের আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন। এ হিসেবে গত ২২ নভেম্বর জামিনের মেয়াদ শেষ হলেও তাঁরা আত্মসমর্পণ করেননি।

এ বিষয়ে জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম বলেন, এখন দুদক বা পুলিশ আদালতের পরোয়ানা ছাড়াই আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পারে।