এরই মধ্যে সড়কের নির্মাণকাজও শুরু হয়েছে। কিন্তু সড়কের সীমানা থেকে অন্তত পাঁচ ফুট দূরে স্থাপনা নির্মাণের নিয়ম থাকলেও, তা কেউ মানেননি।
গাইবান্ধা জেলা শহরে চার লেন সড়ক নির্মাণে দুই পাশের বেশির ভাগ স্থাপনা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। কিছু পাকা ভবন ভাঙার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এরই মধ্যে সড়কের নির্মাণকাজও শুরু হয়েছে। কিন্তু সড়কের সীমানা থেকে অন্তত পাঁচ ফুট দূরে স্থাপনা নির্মাণের নিয়ম থাকলেও, তা কেউ মানেনি।
জানতে চাইলে সড়ক ও জনপদ (সওজ) বিভাগের জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামান বলেন, সড়কের সীমানা থেকে অন্তত পাঁচ ফুট দূরে পাকা ভবন বা স্থাপনা নির্মাণের বিধান রয়েছে। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এ বিধান মানল কি না, তা দেখভাল করবে পৌরসভা।
শহরের সচেতন কয়েক বাসিন্দা বলেন, সড়কের সীমানা ঘেঁষে নানা ধরনের স্থাপনা ও দোকানপাট থাকায় ফুটপাতের ওপর বেচাকেনা চলবে। এতে লোকজনের চলাচলের অসুবিধা হবে। বাধ্য হয়ে পথচারীদের সড়কের মধ্য দিয়ে চলাচল করতে হবে। এতে যানজট তৈরি হবে। দুর্ঘটনার ঝুঁকিও রয়েছে।
জেলা যুব নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক জিয়াউল হক বলেন, চার লেন সড়কের কাজ পুরোদমে শুরুই হয়নি। এর মধ্যেই সড়কের সীমানা ঘেঁষে দোকানপাটসহ নানা স্থাপনা নির্মাণের কাজ শেষ করা হয়েছে। প্রশাসনকে সড়কের সীমানা থেকে অন্তত পাঁচ ফুট দূরত্ব বজায় রেখে দোকানপাটসহ নানা স্থাপনা নির্মাণের বিষয়টি দেখা উচিত ছিল।
জেলা নাগরিক পরিষদের আহ্বায়ক সিরাজুল ইসলাম বলেন, সড়কের সীমানা থেকে পাঁচ ফুট দূরত্বে স্থাপনা নির্মাণ করলে লোকজনের চলাচলে সুবিধা হতো। এখন লোকজনকে সড়কের মধ্য দিয়ে চলাচল করতে হবে। এতে যানজট তৈরি হবে। দুর্ঘটনারও আশঙ্কা রয়েছে।
সওজ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গাইবান্ধা শহরের পূর্ব দিকে বড় মসজিদ থেকে পশ্চিমে পুলিশ সুপারের (এসপি) কার্যালয়ের সামনে পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার সড়ক চার লেন করার কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়। এতে ব্যয় ধরা হয় ১১৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে সড়ক নির্মাণে ১৫ কোটি ও জমি অধিগ্রহণের জন্য ১০১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। ২০১৮ সালের ৮ নভেম্বর জাতীয় সংসদের হুইপ ও স্থানীয় সাংসদ মাহাবুব আরা বেগম এর উদ্বোধন করেন। ইতিমধ্যে এসপির কার্যালয় থেকে কেন্দ্রীয় বাসটার্মিনাল পর্যন্ত প্রায় আধা কিলোমিটার সড়কের নির্মাণ শেষ হয়েছে। বাসটার্মিনাল থেকে ১ নম্বর রেলগেট পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটারের নির্মাণ মামলাসংক্রান্ত জটিলতায় বন্ধ রয়েছে। ১ নম্বর রেলগেট থেকে বড় মসজিদ পর্যন্ত সড়কের জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। সড়কের দুই পাশে অধিগ্রহণ করা জায়গা থেকে বেশির ভাগ স্থাপনা সরিয়ে নেওয়া হয়। কিন্তু সরকারি মহিলা কলেজসহ কিছু ভবন এখনো সরানো হয়নি। সেগুলো ভাঙার কাজ চলছে। তবে সড়কের সীমানা থেকে পাঁচ ফুটের মধ্যে দোকানপাট রয়েছে।
গতকাল শুক্রবার ঘুরে দেখা যায়, শহরের ১ নম্বর রেলগেট থেকে বড় মসজিদ পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে সরকারি মহিলা কলেজ, আসাদুজ্জামান মার্কেটসহ কোনো প্রতিষ্ঠান বা দোকানপাটই পাঁচ ফুট দূরত্ব রাখার নিয়ম মানেনি। চার লেন সড়ক নির্মাণ শুরু হতে না হতেই সড়কের সীমানা ঘেঁষে নানা ধরনের স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে। এই অংশে শুধু গানাসাস মার্কেট নিয়ম মেনে নির্মাণ করা হয়েছে।
সড়ক ঘেঁষে স্থাপনা নির্মাণকারীরা বলছেন, পাঁচ ফুট দূরে স্থাপনা নির্মাণের বিষয়টি সরকারের কোনো দপ্তর তাঁদের বলেননি। কেউ বাধাও দেয়নি।
ডিবি সড়কের দোকানমালিক জুয়েল মিয়া বলেন, সড়কের সীমানা থেকে পাঁচ ফুট দূরত্বে স্থাপনা করার কথা দোকানপাট ভাঙার আগে বা পরে কোনো দপ্তর বলেনি। এ ব্যাপারে কোনো প্রচারও করা হয়নি।
একই সড়কের আসাদুজ্জামান মার্কেটের ব্যবসায়ী সুশান্ত কুমার বলেন, ‘সওজ বিভাগ যে পর্যন্ত সীমানা নির্ধারণ করে দিয়েছিল, আমরা সেই পর্যন্ত ভেঙে দিয়েছি। সড়কের জায়গা নিইনি। এ ছাড়া সীমানা থেকে পাঁচ ফুট ছেড়ে স্থাপনা নির্মাণের কথা কেউ বলেননি।’
এ বিষয়ে সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামান বলেন, সড়কের সীমানা থেকে দূরে স্থাপনা নির্মাণে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে পৌরসভাকে জানানো হয়েছে।
জানতে চাইলে গতকাল গাইবান্ধা পৌরসভার মেয়র শাহ মাসুদ জাহাঙ্গীর কবির বলেন, ‘সড়কটি ৬৬ ফুট প্রস্থ হবে। আমি এই ৬৬ ফুটের পরে, অর্থাৎ সড়কের সীমানা থেকে পৌরসভার নির্দিষ্ট জায়গা ছেড়ে ঘর করার জন্য প্রত্যেক দোকানমালিককে বলেছি। এ ছাড়া পৌরসভা থেকে নকশা অনুমোদন করে ঘর করার জন্যও পরামর্শ দিয়েছি।’