রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব আবদুল লতিফ হলের কক্ষ থেকে এক আবাসিক শিক্ষার্থীকে গভীর রাতে বের করে দিয়েছে ছাত্রলীগ। সেখানে ছাত্রলীগের পছন্দের একজনকে তুলে দেওয়া হয়েছে। এ সময় তাঁকে গালিগালাজ ও মারধর করা হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ২টার দিকে হলের ২৪৮ নম্বর কক্ষে এ ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর নাম মো. মুন্না ইসলাম। তিনি ২০১৯-২০২০ শিক্ষাবর্ষের রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী। তিনি ওই হলের ২৪৮ নম্বর কক্ষে থাকতেন। তাঁর আবাসিক কার্ড আছে।
এ ঘটনায় ওই শিক্ষার্থী আজ শুক্রবার সকালে ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার’ নামের একটি ফেসবুক গ্রুপে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তিনি সেখানে লিখেছেন, গত পাঁচ মাস ধরে নবাব আবদুল লতিফ হলে অবস্থান করছেন তিনি। এই হলের ২৪৮ নম্বর কক্ষের একজন আবাসিক ছাত্র তিনি। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. শামীম হোসেনের কয়েকজন অনুসারী ওই কক্ষে গিয়ে তাঁকে কক্ষ থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। নিজের আবাসিক কার্ড দেখিয়ে তিনি বের হতে অপারগতা দেখালে তাঁর বিছানাসহ অন্যান্য জিনিস ফেলে দেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এরপর তাঁকে গালিগালাজ ও মারধর করা হয়।
মুন্না ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর বাবা প্রতিবন্ধী, মা বেঁচে নেই। হল প্রাধ্যক্ষের মাধ্যমে সব প্রক্রিয়া মেনে তিনি হলে ওঠেন। গতকাল রাতে তাঁকে নিজের কক্ষ থেকে বের করে দেওয়ার পর বিষয়টি তিনি হলের প্রাধ্যক্ষকে মুঠোফোনে জানান। প্রাধ্যক্ষ তাঁকে সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেন। এভাবে কক্ষে ঢুকে জোরপূর্বক বের করে দেওয়া ঘটনায় তিনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দেবেন বলে জানান।
ঘটনার সময়ের কিছু অডিও প্রথম আলোকে পাঠিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ছাত্র। সেখানে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বলতে শোনা গেছে, ‘এই তুই হল থেকে বের হ। বের হবি না? এই বেড বের করে দে। তোর অ্যালোট কোন রুমে। কে তোকে অ্যালোট দিছে?’ এর জবাবে মুন্নাকে বলতে শোনা গেছে, তাঁর এই কক্ষের কার্ড আছে। তিনি আবাসিক শিক্ষার্থী।
এ বিষয়ে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. শামীম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ওই কক্ষে মূলত আরেকজন আবাসিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে আসন ভাগাভাগি করে থাকার জন্য বলা হয়েছিল মুন্নাকে। কারণ তাঁদের ওই ছেলেটিকেও মানবিক কারণে হলে সিট দিয়েছেন প্রাধ্যক্ষ। তাঁর বিছানাপত্র ফেলে দেওয়ার কথা নয়। এমনকি মারধর করার অভিযোগও ভিত্তিহীন। রাত দুইটার দিকে ছাত্রলীগ সেখানে গেল কেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, রাত দুইটা হবে না। আরও আগে। আর তাঁরা তাঁকে (মুন্না ইসলাম) বের করে দেননি। তিনি নিজে ওখানে যাননি। তাঁদের নেতা-কর্মীরা গিয়েছিলেন।
নবাব আবদুল লতিফ হলের প্রাধ্যক্ষ এ এইচ এম মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনাটি তিনি রাতেই শুনেছেন। এটি যদি সত্যি হয়ে থাকে, তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাঁদের হল থেকেও বহিষ্কার করা হবে। মুন্না ইসলাম ওই কক্ষের শিক্ষার্থী। তিনি ওই কক্ষেই থাকবেন।
এর আগে ১৪ জুন রাতে একই হলের ২০৪ নম্বর কক্ষের শিক্ষার্থী সজীব কুমারের বিছানাপত্র বের করে দেন হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম হোসেনের অনুসারীরা। সে ঘটনার ১০ দিনের মাথায় আরেক শিক্ষার্থীর সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটল।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সিট-বাণিজ্য, দখল, আবাসিক শিক্ষার্থীদের বের করে দেওয়া, হলের ফটকে তালা দেওয়ার ঘটনা বাড়লেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখন পর্যন্ত কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি। চলমান পরিস্থিতিতে নিয়ে ১৩ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবকেরা মানববন্ধনও করেছিলেন। এরপর প্রাধ্যক্ষ পরিষদ একবার জরুরি সভা করলেও কোনো অভিযুক্তের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত ব্যবস্থা নিতে পারেনি।