নীলফামারীতে একটি কারখানায় গণহিস্টিরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ২৯ জন নারী শ্রমিক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আজ শনিবার সকালে চীনভিত্তিক এভারগ্রিন প্রোডাক্ট বিডি লিমিটেড নামের একটি কারখানার অঙ্গপ্রতিষ্ঠান গোল্ডেন টাইমিং বিডি লিমিটেডে এ ঘটনা ঘটে। শ্রমিকদের নীলফামারী আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
কারখানা শ্রমিকেরা হাসপাতালে আসতে শুরু করলে হাসপাতালে ভর্তি থাকা অন্য রোগীরা হাসপাতাল ছেড়ে পালাতে থাকেন। নীলফামারী শহরের উপকণ্ঠে হাড়োয়ায় কারখানাটি অবস্থিত।
চিকিৎসকেরা বলছেন, হাসপাতালে আসা শ্রমিকেরা প্রত্যেকে একই রকম উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হয়েছেন। প্রত্যেকে আতঙ্কের কারণে অসুস্থ হয়েছেন। তাঁরা সবাই শঙ্কামুক্ত।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, সকাল সাতটা থেকে ওই শ্রমিকেরা কারখানায় কাজ শুরু করেন। সকাল ১০টার দিকে দুজন শ্রমিক অসুস্থ বোধ করেন। তাঁদের দ্রুত নীলফামারী আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর অল্প সময় পর শ্রমিকেরা একের পর এক অসুস্থ হতে থাকেন। সেখানে কান্নার রোল পড়ে যায়। কারখানা কর্তৃপক্ষ কারখানা ছুটি ঘোষণা করে অসুস্থ ব্যক্তিদের হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করে।
কারখানার শ্রমিক হাসি বেগম (২০) বলেন, ‘আমরা সকাল সাতটার দিকে কাজে যোগ দিই। সকাল ১০টার দিকে দুজন শ্রমিক বমি করতে করতে মাথা ঘুরে পড়ে যান। এ অবস্থায় একের পর এক অসুস্থ হতে থাকেন। আমরা ভয়ে কারখানা থেকে বেরিয়ে আসি। পরে কারখানা ছুটি দিয়ে দেয়।’
অসুস্থ শ্রমিক নীপা রায় (১৮) বলেন, ‘আমি ভয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ি। হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নেওয়ার পর এখন অনেকটা সুস্থ বোধ করছি।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই কারখানার একজন কর্মকর্তা বলেন, ওই ফ্লোরে প্রায় ৮০০ নারী শ্রমিক কাজ করছিলেন। কারখানার তিনটি ফ্লোরে প্রায় ২ হাজার ৪০০ শ্রমিক কাজ করছিলেন।
উত্তরা ইপিজেডের এভারগ্রিন প্রোডাক্ট বিডি লিমিটেডের উপমহাব্যবস্থাপক মো. ফেরদৌস আলম বলেন, ‘চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, তাঁদের তেমন কোনো গুরুতর সমস্যা হয়নি, তাঁরা আতঙ্কে অসুস্থ হয়েছেন। ঘটনার পর আমরা রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। কারখানা ছুটি দিয়েছি। ওই কারখানায় পরচুলা তৈরির কাজ করা হয়, কোনো কেমিক্যালের ব্যবহার করা হয় না।’
এ বিষয়ে নীলফামারী আধুনিক সদর হাসপাতালের সহকারী পরিচালক মো. মেজবাহুল হাসান চৌধুরী বলেন, ‘বেলা ১১টার দিকে কারখানার কর্মীরা অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে আসতে শুরু করেন। তাঁরা প্রত্যেকে একই রকম উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। মনস্তাত্ত্বিকভাবে সাধারণত এটা হয়। এটাকে গণহিস্টিরিয়া বলা হয়। তাঁদের অনেকে এখন সুস্থ। আশা করছি, আজকের মধ্যে তাঁরা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরতে পারবেন।’
হাসপাতালের হৃদ্রোগ বিশেষজ্ঞ আশিকুর রহমান বলেন, অসুস্থ প্রত্যেকে এখন শঙ্কামুক্ত।
পালিয়ে যান হাসপাতালের অন্য রোগীরা
কারখানা শ্রমিকেরা হাসপাতালে আসতে শুরু করলে হাসপাতালে ভর্তি থাকা অন্য রোগীরা হাসপাতাল ছেড়ে পালাতে থাকেন। হাসপাতাল প্রায় রোগীশূন্য হয়ে পড়ে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা ১১টার দিকে কারখানা শ্রমিকেরা দলে দলে হাসপাতালে ভর্তি হতে থাকলে ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রোগীরা দিগ্বিদিক ছোটাছুটি শুরু করেন। তাঁদের মধ্যে অনেকের হাতে স্যালাইন লাগানো ছিল।
মহিলা ওয়ার্ডের কর্তব্যরত নার্সরা জানান, বেলা ১১টা পর্যন্ত ওই ওয়ার্ডে ৭৭ জন রোগী ছিলেন। কারখানার শ্রমিকেরা আসতে থাকলে রোগীরা আতঙ্কিত হয়ে হাসপাতাল ছেড়ে পালিয়ে যান।
পুরুষ ওয়ার্ডের নার্সরা জানান, ওই ওয়ার্ডে ৬২ জন রোগী ছিলেন। আতঙ্কে বেশির ভাগ রোগী পালিয়ে গেছেন।
এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালে সহকারী পরিচালক মো. মেজবাহুল হাসান চৌধুরী। তিনি বলেন, রোগীরা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পালিয়েছেন।