বরিশালে বাম জোটের নেতারা

‌‘গণহারে মামলা দিয়ে গণহত্যার বিচারকে বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে’

বরিশালে বাম গণতান্ত্রিক জোট আজ মঙ্গলবার দুপুরে জুলাই অভ্যুত্থানে নিহতদের বিচার, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ, পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনাসহ চার দফা দাবিতে নগরে বিক্ষোভ মিছিল বের করে
ছবি: প্রথম আলো

বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমাবেশে বক্তারা বলেছেন, ‘একটি ফ্যাসিস্ট শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে দেশের ছাত্র-জনতা জুলাই গণ–অভ্যুত্থান করেছেন। এই অভ্যুত্থানে সহস্রাধিক ছাত্র-জনতা জীবন দিয়েছেন। কিন্তু এই অভ্যুত্থানের পর এক মাসের বেশি সময় অতিবাহিত হলেও এই গণহত্যার বিচারের জন্য দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে না; বরং উল্টো আমরা দেখেছি, পূর্ববর্তী সরকারগুলোর মতোই গণহারে একের পর এক মামলা দায়ের করা হচ্ছে। এতে এই গণহত্যার বিচার নিয়ে গণমানুষের মধ্যে সংশয়ের সৃষ্টি করছে।’

আজ মঙ্গলবার বরিশালে বাম গণতান্ত্রিক জোট আয়োজিত এক বিক্ষোভ-সমাবেশে বক্তারা এ মন্তব্য করেন। বরিশাল জেলা বাম গণতান্ত্রিক জোট আয়োজিত এ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জোটের সংগঠক নৃপেন্দ্রনাথ বাড়ৈ। নগরের সদর রোডের অশ্বিনী কুমার হলের সামনে এ সমাবেশ হয়।

সমাবেশে বক্তব্য দেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) বরিশাল জেলা শাখার সভাপতি মিজানুর রহমান সেলিম, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) বরিশাল জেলা শাখার সমন্বয়ক মনীষা চক্রবর্তী ও বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগ বরিশাল শাখার সদস্য উপাধ্যক্ষ হারুন উর রশিদ।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যেসব হত্যাকাণ্ড হয়েছে, সেগুলোর বিচার না হওয়ায় সমাবশে বক্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এক মাস পার হলেও জুলাই অভ্যুত্থানে নিহত সহস্রাধিক শহীদের হত্যাকাণ্ডের বিচারের জন্য সুষ্ঠু তদন্তের প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। যেভাবে ঢালাও মামলা করা হচ্ছে, তাতে এর সুষ্ঠু বিচারের প্রক্রিয়া নিয়ে মানুষের মধ্যে সংশয় বাড়ছে। তাঁরা অভিযোগ করেন, পূর্ববর্তী শাসকদের মতোই অন্তর্বর্তী সরকার গণহারে মামলা দেওয়ায় গণহত্যার বিচারকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।

বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমাবেশে বক্তারা বলেন, ‘গণহত্যার বিচারের প্রক্রিয়ার জন্য মামলা ও তদন্ত এবং এর বিচারের প্রক্রিয়ার জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল করা প্রয়োজন। কিন্তু সে রকম কিছু আমরা এখনো দেখছি না। এ জন্য আমরা এই সমাবেশ থেকে দ্রুত বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে এই হত্যাকাণ্ডের বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু করার দাবি জানাচ্ছি।’

সমাবেশে বাসদের বরিশাল জেলা শাখার সমন্বয়ক মনীষা চক্রবর্তী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের ১৬ বছরের শাসনামলে দেশের মানুষ নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির চাপে পিষ্ট হয়েছে। বাজারের সব নিত্যপণ্যের দাম ছিল সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। পতিত সরকারের ছায়ায় সিন্ডিকেট গড়ে তুলে মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলা হয়েছিল। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হয়েছে। কিন্তু এরপরেও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ করা হয়নি। এ ক্ষেত্রেও অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো কার্যকর পদক্ষেপ পরিলক্ষিত হয়নি। দ্রুত এ বিষয়ে সরকার পদক্ষেপ নিয়ে নিত্যপণ্যের মূল্য সহনীয় করার উদ্যোগ দাবি করছি।’

মনীষা চক্রবর্তী আরও বলেন, গত ১৬ বছরে দেশ থেকে কয়েক লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। কিন্তু পাচার করা সেসব টাকা ফেরত আনা কিংবা জনগণের টাকা ঋণ নিয়ে ব্যাংকগুলো শূন্য করে দেওয়া ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধেও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, দেশের ছাত্র-জনতার আকাঙ্ক্ষা হচ্ছে দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সুসংহত উত্তরণ। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে আসার জন্য নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার ও সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন প্রবর্তন করতে হবে। এ ছাড়া নির্বাচনে টাকা ও পেশিশক্তির প্রভাব কমানোর জন্যও তাঁরা একটি সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। সমাবেশ শেষে একটি মিছিল নগরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে।